স্বপন মালাকার শিবা :: পাহাড়ি আদিবাসিদেরই খাবার ছিলো এই চুংগা পিঠা।
এবার সিলেটর সকল স্থানে যেমন ,সময় বদলেছে কালক্রমে তা সমতলের মানুষের উৎসবে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে। বিরণি চাল ভিজিয়ে নরম করে বা চালের গুড়ো করে ঢলুবাঁশের চোংগায় পোঁড়িয়ে পিঠা তৈরি করতে শিখে যায় সব জাতি-ধর্মের মানুষ। বাড়ীতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুংগা পিঠা, হাঁসের মাংস, মাছ বিরান আর নারিকেলের পিঠা পরিবেশন না করলে বড়ই লজ্জার কথা ছিলো। শীতকালে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে চুংগা পোঁড়ানোর উৎসব হত। আজ সিলেটের এই ঐতিহ্যবাহী চুংগা পিঠা প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতির ছোয়ায় হারাতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ এর নামই জানে না। সিলেটের লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম এই চুংগা পিঠার সাথে আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেন এলাকার এক ঝাঁক তরুণ। কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের সতিঝিরগ্রামের আবু নাসের সিপুর বাড়ীতে ঘরোয়া পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী চুংগা পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সর্বস্থরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা সত্যিকার অর্থে প্রমান করলেন, “ধর্ম যার যার সংস্কৃতি সবার”। নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিন ব্যাপি চলে পিঠা উৎসবের কর্মযজ্ঞ। গ্রামের হিন্দু মুসলিম মহিলারা গান গেয়ে ঢেঁকিতে চালে গুড়ি করেন। সন্ধ্যায় সারি বেঁধে বারন্দায় বসে টুই পিঠা, চৈপিঠা, লবনের সন্দেশ, বিরইন ভাত সহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও হাঁসের মাংস রান্না করেন। সন্ধ্যায় ছেলেরা খোলা আকাশের নীচে খড় দিয়ে চুংগা পোঁড়ায়। মহিলাদের ধামাইল নৃত্যের মাধ্যমে রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পিঠা পরিবেশন করা হয়। ক্ষণিকের জন্য আমরা ফিরে গেলাম আমাদের সেই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অতীতে। এ যেন এক অন্যরকম ভাল লাগা। তাৎক্ষণিক ঘরোয়া এই আয়োজনের খবর পেয়ে আশপাশের কয়েক গ্রামের তরুণ প্রজন্ম স্বেচ্ছায় অংশগ্রহন করেন। এ যেন নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা। সীমাহীন উৎসাহ, উদ্দীপনায় গ্রাম শহররের সকল বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিনত হয়। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত, স্বল্প পরিসরের তাৎক্ষণিক এই আয়োজন এত বিশাল আকার ধারন করবে তা ভাবিনি। গ্রামের প্রচলিত নিয়ম রক্ষায় অনেক প্রিয়জনকে ইচ্ছা থাকা সত্বেও মিস করেছি তাই দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে প্রতি বছর আরও বৃহত্তর পরিসরে চুংগা পিঠা উৎসব আয়োজনের করা হয়েছে।