সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মী লাঞ্ছিত বড়লেখায় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ২০২ জন ভাতাভোগীর বই ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১২:১৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০

সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মী লাঞ্ছিত বড়লেখায় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ২০২ জন ভাতাভোগীর বই ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সমাজকর্মীকে লাঞ্ছিত করে ২০২ জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীর ভাতার বই ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বদরুল আহমদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠেছে। গত সোমবার (২০ জুলাই) ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া ভাতার বই ছিনিয়ে নেওয়ায় টাকা বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে সঠিক ভাতাভোগীদের হাতে ভাতাবই ও ভাতা পৌঁছানোর ব্যাপরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সমাজসেবা কার্যালয়ের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার উপকারভোগীদের মাঝে ভাতা বই বিতরণ উপলক্ষে সভা হয়। সভা শেষে উপকারভোগীদের মাঝে ভাতা বই বিতরণ শুরু হয়। বিতরণের এক পর্যায়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বদরুল আহমদ ইউনিয়ন সমাজকর্মী সুমতি রাণী ও সহকারী কামরুল ইসলামকে লাঞ্ছিত করে জোরপূর্বক ভাতাভোগীদের বই ছিনিয়ে নেন। এসময় পরিষদ হলরুমে হট্টগোল শুরু হয়। পাশের রুমে থাকা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম হলরুমে ঢুকে বই ছিনিয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইউপি সদস্য তার সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
একপর্যায়ে ওই ইউপি সদস্য সমাজসেবা কর্মকর্তা ও সমাজকর্মীর ওপর চড়াও হয়ে তাদের মারধরের হুমকি দেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তারা সেখান থেকে উপজেলায় চলে যান। এতে করে ভাতাবই বিতরণ সংক্রান্তে উপকারভোগীর স্বাক্ষরসহ রেজিষ্টার মেনটেইন করা সম্ভব হয়নি।
ভাতাভোগীদের বই ছিনিয়ে নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ইউপি সদস্য বদরুল আহমদ মঙ্গলবার (২১ জুলাই) রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘সভায় আমি একা ছিলাম না। সব ওয়ার্ডের মেম্বার ও উপকারভোগী ছিলেন। সকাল থেকে উপকারভোগীরা বসা ছিলেন।
তিনি বলেন, ুপুরের পরে অনুষ্ঠান হওয়ায় অনেকের কষ্ট হচ্ছিল। মানুষের অনেক ভিড় ছিল। সবাই মিলে বিতরণ করার কথা। উপকারভোগীরে কষ্ট দেখে বাইরে বই বিতরণের কথা বলি। কিন্তু তারা (সমাজ কর্মীরা) মানেননি। তখন আমরা বাইরে নিয়ে মানুষের নাম ধরে ধরে বই দেওয়া শুরু করি। এখানে ছিনিয়ে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। সব মিথ্যা কথা।’
ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ খান বলেন, ‘সভা শেষে খবর পাই ইউনিয়নে ঝামেলা হয়েছে। ইউনিয়নের লোকজনের কাছ থেকে শোনেছি একজন ইউপি সদস্য কার্ড নিয়ে গেছেন।’
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাতাভোগীদের হাতে হাতে বই বিতরণ করা হচ্ছিল। হঠাৎ ইউপি সদস্য বদরুল আহমদ সমাজকর্মীর হাত থেকে বইগুলো নেওয়ার জন্য উদ্ধত হন। তার হাতে বই দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি সমাজর্কর্মী ও অফিস সহকারীকে লাঞ্ছিত করেন। এক পর্যায়ে জোর করে বইগুলো ছিনিয়ে নেন।’
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সমাজসেবা অফিস থেকে ভাতার বই মানুষের হাতে হাতে দেওয়ার কথা। কিন্তু ইউপি সদস্য ছিনিয়ে নিয়েছেন। এটা দুঃখজনক। বই হারিয়েছে অনেকগুলো। সমাজসেবা অফিসার লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ