দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :; গত চারদিনের টানা বর্ষণ আর মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, চেলাসহ সকল নদীনালা, খালবিল ও হাওরের পানি বৃদ্ধিতে জল-স্থল একাকার হওয়ায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেই সাথে পূবাল ও দক্ষিণা ধমকা হাওয়ার ঢেউয়ে নদীতীরের দোকানপাট, স্থাপনা ও হাওরপাড়ের রাস্তাঘাটসহ অনেক কাঁচা বাড়িঘর ক্রমশ ধসে যাচ্ছে। সর্বত্র বানের পানি থৈ থৈ করায় গৃহস্থালি মালামাল রক্ষায় ব্যস্ত থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে পারেননি অনেক পরিবারের।
ফলে বন্যার্ত গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে অসহনীয় হয়ে উঠেছে লাখো মানুষের জনজীবন। কেননা, উপর্যুপরি তিনদফা বন্যায় লন্ডভন্ড হয়েছে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা রাস্তা, কাঁচা ঘরবাড়ি, হাজার হাজার হেক্টর উঠতি আউশ, রোপা আমনসহ মওসুমি ফসলের বীজতলা ও রবিশস্য। শুধু তাই নয়, উপর্যুপরি বন্যায় ভেসে গেছে উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক পুকুরের কয়েক কোটি টাকার মাছ। এ ছাড়া খামারিদের কাছে বাকিতে মাছের খাদ্য সরবরাহ করায় কয়েক কোটি টাকার দায়াবদ্ধ রয়েছেন স্থানীয় ডিলাররাও।
অপরদিকে এবারের প্রথম দফা বন্যায় উপজেলা পরিষদের সম্মুখস্থ দু’টি দোকানঘর তলিয়ে গেল সুরমার অথৈ গহ্বরে। ভাটিতে পানির টান না থাকায় দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি না কমতেই সপ্তাহকাল ব্যবধানে আবারও তৃতীয় দফা বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ দিকে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণ, পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, খাদ্যাভাবে চরম সংকটাপন্ন গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে হাওরপাড়ের বানভাসিদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। এ ছাড়া খাদ্য সংকটে গো-মহিষ, ভেড়া ও ছাগল পানির দামে বিক্রিতে আসন্ন ঈদের খুশি নেই হাওরপাড়ের বানভাসি কৃষিজীবীসহ উপজেলার ছিন্নমুল পরিবারগুলোতে। কথায় আছে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। খেয়েপরে পরিবার পরিজন বাঁচাবেন, না গো-মহিষাদি বাঁচাবেন, এসব দুশ্চিন্তায় জর্জরিত বন্যার্তরা। তবে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে চলাচলের অযোগ্য গ্রামীণ জনপদের দফায় দফায় বিধস্ত রাস্তাগুলো। তাই বন্যা পরবর্তী বেহাল দশার রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করা হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, প্রান্তিক বর্গাচাষী ও খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো অন্তত হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
সর্বনাশা প্রাকৃতিক দূর্যোগে বারবার বিধস্ত হওয়া দোয়ারাবাজার উপজেলাকে অচিরেই উপদ্রুত এলাকা ঘোষণা করে চাহিদামাফিক ত্রাণের বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ আসন্ন ঈদে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানিয়েছেন দোয়ারাবাজারবাসী। এ ছাড়া বকেয়া কৃষিঋণ মওকুফ করে বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসনে বিনামূল্যে ধানের বীজ, চারা, সার ও কৃষিভর্তুকি প্রদানসহ বিনাসুদে নতুন ঋণ বিতরণের জোর দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগি কৃষিজীবী পরিবারগুলো ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, ত্রাণ সামগ্রীর বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়াও বন্যা পরবর্তী কৃষি পূনর্বাসনসহ জরুরি চাহিদা কার্যকরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেননা বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় নিপীড়িত জনগনের পাশে রয়েছে বর্তমান খাদ্যবান্ধব সরকার। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মওজুদ রয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দূর্গত এলাকায় পানি বিশুুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও পাণীয় জল, জরুরি ওষুধপত্র, শুকনো খাবার, চাল-ডাল ,ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বিতরণসহ জরুরি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে তিনি জানান।