কমলগঞ্জে ১৩ একর জমিতে সালাম ভান্ডারীর টমেটো চাষ

প্রকাশিত: ১২:১০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২০

কমলগঞ্জে ১৩ একর জমিতে সালাম ভান্ডারীর টমেটো চাষ

স্বপন দেব, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: বেকারত্ব নিয়ে জীবনে হতাশ না হয়ে কৃষিকাজ করেও যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় তারই উজ্জ্বল ৃষ্টান্ত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আব্দুস সালাম ভান্ডারী। চা ােকানদার আব্দুস সালাম প্রতি বছর বাড়াচ্ছেন টমেটো চাষের পরিধি। চলতি বছর তিনি ১৩ একর জমিতে টমেটো চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত এই উদ্যোগে প্রয়োজন সরকারী পৃষ্টপোষকতা।
কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আধকানী গ্রামের মন্তাজ আলী মন্ডলের ছেলে আব্দুস সালাম। এলাকায় তিনি সালাম ভান্ডারী হিসেবেই পরিচিত। চায়ের দোকান দিয়েই তার জীবিকা নির্বাহ হতো। পাঁচ বছর আগে শুরু করেন টমেটো চাষ। প্রথম বছর ১ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করলে তার মোটামুটি আয় হয়। পরের বছর আড়াই বিঘা, এর পরের বছর ৫ বিঘা। এভাবে বাড়তে থাকে তার টমেটো চাষের পরিধি। সহায় সম্ভবহীন আব্দুস সালাম চলতি বছর আদমপুর ইউনিয়ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত লাউয়াছড়ার তীরবর্তী নয়াপত্তন গ্রামে ১৩ একর জমিতে টমেটোর চাষ করছেন। জমির মালিকের নিকট থেকে এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন সালাম ভান্ডারী এগ্রো ফার্ম। তিনি নিজেই চারা উৎপাদন করে এখন সেই চারা রোপন করছেন। এখন পর্যন্ত ১০ একর জমিতে বারী-৮ নামক টমেটোর ৭২ হাজারের উপরে চারা রোপন করেছেন। অবশিষ্ট ৩ একর জমিতে রাজা নামক টমেটোর চারা রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সালাম ভান্ডারী বলেন, এনজিও আশা, ব্র্যাক এর স্থানীয় ব্রাঞ্চ থেকে ঋন নিয়ে এবং এলাকা থেকে ব্যক্তি পর্যায় ধানের উর নিয়ে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু করেছেন বিশাল আকারে টমেটোর চাষাবাদ। প্রায় ৬০ জন শ্রমিক গত এক মাস থেকে তার টমেটোর ফার্মে কাজ করছেন। ফার্মে নিয়োজিত পাত্রখলা চা বাগানের ২৬ জন শ্রমিকের যাওয়া আসার সুবিধার জন্য ২৬টি বাইসাইকেল ক্রয় করে দিয়েছেন। সেই সাইকেলের মূল্য বর্তমানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী থেকে অল্প অল্প করে কাটা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নয়াপত্তন গ্রামের প্রধান রাস্তা থেকে ক্ষেতের মাঠ পর্যন্ত সংযোগ রাস্তা কর্দমাক্ত হওয়ায় সালাম ভান্ডারী নিজ অর্থ ব্যয়ে রাস্তায় বালু ভর্তি বস্তা ফেলেছেন। লাউয়াছড়ার উপর নির্মাণ করেছেন সাঁকো। লাউয়াছড়ার নয়াপত্তন অংশে নির্মিত স্লুইস গেট এর পার্টসগুলো অকেজো থাকায় নিজের অর্থ ব্যয়ে সেগুলো মেরামত করিয়েছেন। টমেটো চাষে শুধু নিজে সাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখছেন না সালাম ভান্ডারী। তার ফার্মে প্রায় ৬০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করেছেন। শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে এসিআই গ্রুপ কেয়ার। এই গ্রুপের কমলগঞ্জ অফিসার দেলোয়ার হোসেন সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছেন।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আব্দুস সালাম ভান্ডারী বলেন, অতীতে সফলতা পাওয়ায় তার মনে আশা জাগে। সেই থেকে শুরু। আর এখন তার প্রধান পেশা টমেটো চাষ। আগের সফলতা তাকে ব্যাপক ভাবে টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন পর্যন্ত তার প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আদমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ ভুইয়া বলেন, সালাম ভান্ডারী সম্পূর্ন নিজস্ব উদ্যোগে এত দুর এগিয়েছেন। তার এই কর্মযজ্ঞ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন সরকারী পৃষ্টপোষকতা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হক বলেন, তিনি গত ১৯ জুলাই সালাম ভান্ডারী এগ্রো ফার্ম পরিদর্শন করেছেন। এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তার জানামতে এত জায়গা নিয়ে কমলগঞ্জে আর কেউ টমেটো চাষাবাদ করেননি। কৃষি বিভাগ সালাম ভান্ডারীকে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি কৃষি ঋন নিতে চাইলে কমলগঞ্জ কৃষি অফিস তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ