কোরবানি ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত

প্রকাশিত: ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২০

কোরবানি ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত

মুহাম্মদ আশরাফ আলী :;

করোনাকালেও সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরবি ‘কুরবানুন’ শব্দ থেকে এসেছে কোরবানি শব্দটি। কুরবানুন অর্থ নৈকট্য লাভ করা। যে ব্যক্তি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত জীবিকানির্বাহের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ছাড়া সাড়ে ৭ তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্যের কোনো মালের মালিক হয়, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। ইসলামী বিধানে কোরবানির অর্থ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। সুরা সফ্ফার ১০২ থেকে ১০৭ আয়াতে আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন- ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবাই করছি; এখন তোমার অভিমত কী। সে বলল, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে জবাই করার জন্য শোয়াল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্ন সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবাই করার জন্য এক জন্তু।’ হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘একদিন রসুলুল্লাহকে সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! কোরবানি কী। তিনি জবাব দিলেন, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! এতে আমাদের জন্য কী রয়েছে। রসুলুল্লাহ বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! পশমওয়ালা পশুদের (অর্থাৎ যেসব পশুর পশম বেশি হয় যেমন ভেড়া) পরিবর্তে কি সওয়াব পাওয়া যাবে? রসুলুল্লাহ বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে।’ মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ।

বিশ্বাসীদের আদিপিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে কোরবানি মুসলমানদের জন্য পালনীয়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য কোরবানির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর রক্ত, মাংস কিছুই পৌঁছায় না। পৌঁছায় তাকওয়া। আল কোরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকসকল! (জেনে রাখো) তোমাদের প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) পরিবারের পক্ষে প্রতি বছরই কোরবানি করা আবশ্যক।’ আবু দাউদ, নাসায়ি। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না সে ঈদগাহের কাছেও যেন না আসে।’ ইবনে মাজাহ। উপরোক্ত হাদিসে প্রমাণিত হয় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি কোরবানি না করে তবে সে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অসন্তুষ্ট করার মতো ভুল করবে; যা আমাদের জন্য কাম্য হওয়া উচিত নয়।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন