সিলেটি জামাইর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২০

সিলেটি জামাইর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক :: কখনো তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ছিলেন,কখনো তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কখনো আওয়ামী লীগ নেতা, কখনো সম্পাদক-প্রকাশক, কখনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক । এ যেনও একের ভিতরে সব । তার আরও একটি পরিচয় তিনি ‘সিলেটি জামাই’। সেই সিলেটি জামাই ছাড় দেননি নিজের শ্বাশুড়িমা’কে। প্রতারণা করেছেন তার সাথে । হ্যাঁ তিনি হলেন বহুরূপী সিলেটি জামাই সাহেদ । ইতোমধ্যে সাহদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ পড়েছে প্রায় দেড় শতাধিক ।

আর ছবি? রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, বিএনপির নেতা এবং তৎকালীন বিএনপির মন্ত্রী— সবার সঙ্গেই তার ছবি আছে।

রিজেন্টের সাহেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সিলেটে বিভাগের সুনামগঞ্জের ছাতক, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ঢাকার পূর্বাচল, গাবতলী, শাহজাহানপুর, বনানী ডিওএইচএস, খিলগাঁও, কলাবাগান, মিরপুর, উত্তরা, খিলক্ষেত, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য থেকেও অভিযোগ জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।

তাদের অনেকেই বলেছেন, বিদেশে পাঠানোর নাম করে সাহেদ তাদের কাছ থেকে টাকা নেন। কিন্তু বিদেশে পাঠাতে পারেননি, টাকাও ফেরত দেননি। সাহেদের বিরুদ্ধে ছাতকের একজনের কাছ থেকে এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ এসেছে র‌্যাবের কাছে। এটাই সাহেদের কাছে সর্বোচ্চ পাওনা। এছাড়া সরকারি চাকরি ও বদলির প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, হয়রানি, রিজেন্ট হাসপাতালে অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ তো আছেই। এমন প্রায় ৫০টির মতো প্রতারণার অভিযোগে মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাহেদের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি চাকরি দেয়া, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ না করা, বদলির তদবির করে টাকা আদায়, মালামাল সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ না করা, ভ্যানের ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে টাকা আদায়, বিআরটিএ’র ভুয়া অনুমতিপত্র সরবরাহের মতো অভিযোগ এসেছে সাহেদের বিরুদ্ধে। বেতন না পাওয়ার অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়েছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরাও।

‘আমাদের হটলাইনে অনেকে অভিযোগ করেছেন, ই-মেইলেও অভিযোগ আসছে। প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ আমরা আমলে নিয়েছি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের যথাযথ আইনি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

গত ৬ জুলাই নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ এবং করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট দেয়া, রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের দুটি হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নানা অনিয়ম ধরা পড়ে।

পরদিন (৭ জুলাই) রিজেন্ট গ্রুপের মূল কার্যালয় এবং রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। প্রতারণার মাধ্যমে ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দেয় রিজেন্ট হাসপাতাল।

নয়দিন পর ১৫ জুলাই ভোরে র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সংলগ্ন সীমান্ত এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার প্রতারণার বিষয়গুলো তদন্তের দায়ভার ডিবিকে দেয়া হলেও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে ন্যস্ত করে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ