লোভাছড়া পাথর কোয়ারি : সিলেটে পরিবেশ অধিদপ্তরের টেন্ডার নিয়ে তেলেসমাতি

প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০২০

লোভাছড়া পাথর কোয়ারি : সিলেটে পরিবেশ অধিদপ্তরের টেন্ডার নিয়ে তেলেসমাতি

অনলাইন ডেস্ক :;
সিলেটে পরিবেশ অধিদপ্তরের টেন্ডার নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার। ‘বাতিল’ করা টেন্ডারের সর্বোচ্চ দরদাতাকে টেন্ডার সমঝে দিতে নানা টালবাহানা করা হচ্ছে। কোনো কারণ ছাড়াই প্রথম দফার টেন্ডার বাতিল করে দ্বিতীয় দফা আহ্বান করায় বেঁকে বসেছেন প্রথম টেন্ডারের সর্বোচ্চ দরদাতা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। পরে তার অনুপস্থিতিতে টেন্ডারের কাগজপত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে সিলেটে। সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া কোয়ারির নদীর দুই তীরে রাখা এক কোটি ঘনফুট পাথর কয়েকদিন আগে জব্দ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর মালিক বিহীন এই পাথর বিক্রি করতে গত ১৯শে জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক ইমরান হোসাইন দরপত্র আহ্বান করেন। ওই দরপত্রে তিনি লোভাছড়া থেকে কানাইঘাট সেতু পর্যন্ত জব্দ করা পাথর বিক্রি করা হবে বলে জানান।
তার এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে গোটাটিকরের মেসার্স ছামী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলামসহ আরো ৫ জন ব্যবসায়ী টেন্ডারে অংশ নেন। এতে নজরুল ইসলাম দাম তোলেন ৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওইদিনই টেন্ডারে তিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও তাকে টেন্ডার সমঝে না দিয়ে সেটি বাতিল করা হয়। পাশাপাশি ওইদিনই নতুন করে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইমরান হোসেন পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করেন। লোভাছড়া কোয়ারি এলাকার নদী তীরবর্তী দু’তীরের পাথর বিক্রির টেন্ডার আহ্বান করেন তিনি। বুধবার পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফা টেন্ডারে অংশ নেন মাত্র দু’জন ব্যবসায়ী। তারা সর্বোচ্চ দাম হাঁকেন ১৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফা টেন্ডারে আর অংশ নেননি সিলেটের ছামী এন্টারপ্রাইজের মালিক নজরুল ইসলাম। অংশ না নেয়ার ব্যাপারে তার যুক্তি হচ্ছে- আগের টেন্ডারের চেয়ে ওই টেন্ডারের সীমানা আরো কমানো হয়েছে। এতে কমে গেছে পাথরের হিসাবও। পাশাপাশি টেন্ডার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়েই অবৈধভাবে শত শত নৌকা পাথর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ পাথরসহ কিছু নৌকাও আটক করেছে। এ কারণে তিনি টেন্ডারে অংশ নেননি। এদিকে দ্বিতীয় দফা টেন্ডারে বেশি দাম না ওঠায় প্রথম দফা বাতিলকৃত টেন্ডারের সর্বোচ্চ দরদাতা নজরুল ইসলামকে বুধবার সন্ধ্যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ডেকে পাঠান পরিচালক ইমরান হোসেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে নজরুল ইসলাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এলে তাকে বাতিল হওয়া টেন্ডারের সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে পাথর কেনার অনুমতিপত্র দেয়া হয়। কিন্তু নজরুল ইসলাম এতে রাজি হননি। তিনি জানান, প্রথম দফা টেন্ডারে যে পরিমাণ পাথর ছিল সেই পাথর এখন আর নেই। রাতের আঁধারে অনেক পাথর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তিনি টেন্ডার পেলেও তাকে না দিয়ে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা চাপাচাপি করলেও তিনি রাজি হননি। পরে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আসা হয় সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানেও তাকে একই ভাবে চাপাচাপি করলে তিনি টেন্ডার প্রাপ্তির কাগজ সমঝে নেননি। ওই রাত সাড়ে ৮টার দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তার বাসায় গিয়ে টেন্ডারপ্রাপ্তির কাগজপত্র দিয়ে আসেন। ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি পাথর ক্রয় করার জন্য টেন্ডার জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম টেন্ডারে তিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও অদৃশ্য কারণে তাকে মনোনীত করা হয়নি। বরং প্রথম টেন্ডার বাতিল করে দ্বিতীয় বার টেন্ডার আহ্বান করেছেন। দ্বিতীয় বার দাম না উঠায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এখন তাকে টেন্ডার সমঝে দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন। তিনি বলেন, প্রথম দফা টেন্ডারে তাকে কাগজপত্র না দেয়ায় ২২শে জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর পত্র দিয়েছেন। এই পত্রের রিসিভ কপি তার কাছে রক্ষিত আছে বলে জানান তিনি। এদিকে এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, তারা টেন্ডার বাতিল করেননি। টেন্ডার কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিতীয় বার টেন্ডার আহ্বান করেছিল। কিন্তু সেই টেন্ডারে দাম কম উঠার কারণে এখন প্রথম দফা টেন্ডারের সর্বোচ্চ দরদাতাকে টেন্ডার দেয়া হয়েছে। আমরা তাকে এক কোটি ঘনফুট পাথর সমঝে দিবো। আর কেউ পাথর সরিয়ে ফেলেনি বলেও দাবি করেন তিনি।