এপ্রিলের বেতন হয়নি ১৭ শতাংশ কারখানায়

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২২

এপ্রিলের বেতন হয়নি ১৭ শতাংশ কারখানায়

অনলাইন ডেস্ক :: দেশের শিল্প অধ্যুষিত সাত এলাকার কারখানাগুলোয় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ লাখ। কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ১৭৭টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ কারখানায় আসন্ন ঈদ উপলক্ষে উৎসব ভাতা পরিশোধ হয়েছে। যদিও প্রায় ১৭ শতাংশ কারখানা এখনো এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেনি।

শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত প্রায় সব কারখানায়ই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কারখানায় ছুটি থাকবে আট-দশ দিন। তবে বরাবরের মতো এবারের ঈদেও বস্ত্র খাতের সুতা উৎপাদনকারী প্রায় ২০০ কারখানার কিছু শাখা খোলা থাকবে। এসব শাখার মেশিন সচল রাখতে নিয়োজিত থাকবেন স্বল্পসংখ্যক কর্মী। বাকি কর্মীদের অধিকাংশই ছুটি কাটাতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

কারখানাগুলোর বেতন-বোনাস পরিশোধের হালনাগাদ জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৯৬ শতাংশ কারখানায়। এপ্রিলের বেতন পরিশোধ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১২ শতাংশ কারখানায়।

আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট—দেশের এ সাত শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় নিয়মিতভাবেই ঈদের আগে অস্থিরতা দেখা যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারো রমজানে সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ঈদের আগে এপ্রিলের ১৫ দিনের বেতনসহ ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সচেষ্ট ছিল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো, যার ধারাবাহিকতায় গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় শতভাগ কারখানায় হয় বোনাস পরিশোধ হয়েছে, নয় প্রক্রিয়াধীন ছিল। যদিও এপ্রিলের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩ শতাংশ কারখানা। যেসব কারখানায় পরিশোধ করা হয়েছে, সেগুলোয় মালিক-শ্রমিক আলোচনার ভিত্তিতে বাকি ১৫ দিনের বেতন ঈদের পরে কাজে ফিরে আসার পর পরিশোধ করা হবে বলে সমঝোতা হয়েছে।

শিল্প অধ্যুষিত সাত এলাকায় পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫। নিট পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য কারখানা ৬৮৫টি। বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য ৩৩৮টি। বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত কারখানা ৩৪৮টি। পাটকল ৮৩টি। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধপণ্যসহ অন্যান্য খাতের কারখানা আছে ৬ হাজার ১০৭টি।

আশুলিয়ায় মোট কারখানা সংখ্যা ১ হাজার ৫২২। এর মধ্যে গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কারখানায় বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। এপ্রিল মাসের আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ বেতন পরিশোধ হয়েছে এমন কারখানা বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল ১ হাজার। বস্ত্র খাতের ১০-১৫টি কারখানা ঈদের ছুটিতেও খোলা থাকবে।

গাজীপুর এলাকায় মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ২২০। এর মধ্যে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ করায় আটটি কারখানায় মার্চ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে উৎসব ভাতা বাবদ বোনাস পরিশোধ হয়েছে ৯৭ শতাংশ কারখানায়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ হয়েছে ৭০ শতাংশ কারখানায়। এ হার সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গাজীপুর এলাকায় ৭৯টি কারখানার কিছু শাখা ঈদের ছুটিতে খোলা থাকবে। কারখানাগুলো মূলত বস্ত্র খাতের সুতা উৎপাদনকারী।

চট্টগ্রামে মোট কারখানা রয়েছে ১ হাজার ৪৭০টি। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১ হাজার ৩৭৭ কারখানায় বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হলেও ৭৩টি কারখানায় প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ-সংক্রান্ত হালনাগাদ কোনো তথ্য শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম কার্যালয় দিতে পারেনি।

নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মোট শিল্প-কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ২০৭। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ কারখানায় বোনাস পরিশোধের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকিগুলোয়ও প্রক্রিয়াধীন ছিল। এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ হওয়া কারখানার হার ছিল ৪৫ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের প্রতিনিধিরা।

ময়মনসিংহে মোট শিল্প-কারখানা রয়েছে ২৩২টি। এর মধ্যে ২৩১টি কারখানায় বোনাস পরিশোধ হয়েছে। এপ্রিলের বেতন পরিশোধ হয়েছে ২২৫টি কারখানায়। বাকি সাতটি কারখানা বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। ময়মনসিংহ এলাকায় মোট ২২টি কারখানা ঈদের ছুটিতে খোলা থাকবে বলে জানা গেছে।

খুলনা এলাকায় মোট শিল্প-কারখানা আছে ৭৮৬টি। এর মধ্যে ৯১টি বন্ধ রয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাকি ৬৯৫টির মধ্যে তিনটি কারখানায় বোনাস অপরিশোধিত ছিল। ২০টি কারখানায় বাকি ছিল এপ্রিলের বেতন পরিশোধ।

সিলেট এলাকায় মোট কারখানা ৭৪০টি। এর মধ্যে সবগুলোয়ই বোনাস পুরোপুরি পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় এপ্রিলের ১৫ দিনের, কিছু কিছু জায়গায় পুরো মাসের বেতন পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

সাত শিল্প এলাকার কারখানাগুলোর বড় একটি অংশ পোশাক খাতের। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, ঈদে পোশাক শিল্পের শতভাগ কারখানায় বেতন-ভাতা প্রদান সম্পন্ন হয়েছে।

খাতটির উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পূর্ববর্তী বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আপনারা শ্রমিক ভাইবোনদের যথাযথ পাওনাদি পরিশোধ করেছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। শতভাগ কারখানায় উৎসব ভাতা প্রদান ও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এপ্রিলের অগ্রিম বেতন প্রদান করা হয়েছে। শতভাগ কারখানায় ঈদের ছুটি প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদ উপলক্ষে উদ্যোক্তারা এলাকাভিত্তিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ও দিনে দুই বেলায় ছুটি দিয়েছেন। গত বুধবার থেকে শ্রমিকরা ছুটিতে যাওয়া শুরু করেছেন। আজকের মধ্যেই সব শ্রমিক ভাইবোন ঢাকা ছাড়বেন।