সিলেট ১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২২
সিলনিউজ বিডি ডেস্ক :: বিশ্ব মোড়লদের সামনে কেউ আর বলবেনা ‘অল আর বোগাস’, ‘রাবিশ’। সিলেটকে নিয়ে যার স্বপ্ন দিল আকাশ ছোয়া। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাতৃভূমির টানে বারবার তিনি সিলেট আসতেন। এবারও আসছেন, তবে সেটা লাশবাহী গাড়িতে। শেষ বারের মতো। আসছেন সিলেট, কিন্তু তিনি জানেননা। জানে পুরো সিলেট বাসী।
প্রিয় এ নেতাকে হারিয়ে বেদনাবিধুর সিলেটবাসী। আর কখনো দেখা যাবে না শিশুর মতো সদা হাস্যোজ্জ্বল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে চাকরি জীবন, রাজনৈতিক মাঠে কখনও তিনি দ্বিতীয় হননি। সব সময় ফাষ্ট ক্লাস ফাষ্ট ছিলেন। ছিলেন সবার উপরে। কখনো সরকারের আমলা, কখনো বা রাজনীতিবিদ সব ভূমিকাতেই সফল তিনি।
জীবনে তার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। সব পূরণ হয়ে গেছে। জীবন যা দিয়েছেন তার জন্য তিনি ঋণি, এমনটাই বলেছিলেন মারা যাওয়ার আগে একটি স্বাক্ষাৎকারে।
সব প্রাপ্তি শেষে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশের চলে যান। পবিত্র রমজানের নাজাতের এই দিনে আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে তার কাছেই নিয়েছেন।
প্রয়াত মুহিতের ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “মুহিত ভাই অত্যন্ত সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি অনেক দিন ধরেই বলছিলেন, ‘আমার প্রাপ্তি হয়েছে, আমার কাজ শেষ, তোমরা দেখো বাকিটুকু। ’ ইনফ্যাক্ট কয়েক দিন ধরেই তিনি বলছিলেন সিলেট চলে যাবেন। সপ্তাহ ধরে আল্লাহকে স্মরণ করছেন এবং চলে যাওয়ার জন্য স্থির হয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। ”
গুলশানে প্রথম জানাজা:
রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তাঁর বড় ছেলে সাহেদ মুহিত, ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও ডা. এ কে আব্দুল মুবিন জানাজায় অংশ নেন। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেয়।
ঢাবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ২য় জানাজা:
গুলশানে প্রথম জানাজা শেষে মুহিতের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মুহিতের মরদেহ বনানীর বাসার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দাফনের জন্য মরদেহ আনা হয় জন্মস্থান সিলেটে।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা:
গতকাল শনিবার রাতে মুহিতের মরদেহ হাফিজ কমপ্লেক্সে আসে। রাতে নেতাকর্মীরা হাফিজ কমপ্লেক্সে ভীড় জমান। প্রিয় এ নেতাকে একবার দেখতে জড়ো হন আপামর জনতা। সেখান থেকে রোববার সাড়ে ১১টায় মরদেহ আনা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সর্বস্তরের শ্র্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয় তাঁর মরদেহ। সেখানে আবুল মাল আবদুল মুহিতের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান, সিলেট জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, সিলেটপ্রতিদিন২৪.কম সহ সাংষ্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন।
আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা:
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ২টার দিকে আবুল মাল আবদুল মুহিতের মরদেহ নেওয়া হয় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। সেখানে দুপুর ২টা বেজে ১৮ মিনিটে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এড. নাসির উদ্দিন, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি, সাধারণ সম্পাদক মো.শামীম আহমদ সহ প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সর্বমহলের মানুষজন উপস্থিত ছিলেন। জানাজায় ইমামতি করেন দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি।
দাফন:
জানাজা শেষে রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে শেষ শয্যায় শায়িত করা হয় আবুল মাল আবদুল মুহিতকে।
দুই দিনের শোক: ভাষাসৈনিক, সফল আমলা, লেখক, রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধি আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে দুই দিনের শোক ঘোষণা করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। ‘এই দুই দিন সিলেটে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। ঈদের পরের দিন সিলেটের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জায় দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ’
আবুল মাল আবদুল মুহিত একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও ভাষাসৈনিক ছিলেন। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ আম্বিয়া পাভেল
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি