জৈন্তাপুরে টিলার পাদদেশে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আরও মানুষের বাস!

প্রকাশিত: ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০২২

জৈন্তাপুরে টিলার পাদদেশে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আরও মানুষের বাস!

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি :: সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় সোমবার (৬ জুন) ভোরে টিলা ধসে মাটিচাপায় এক পরিবারের ৪ জন নিহতের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮ জন।

শুধু সোমবার ঘটে যাওয়া ঘটনায় হতাহতের পরিবাররই নয়, জৈন্তাপুরের বিভিন্ন এলাকায় টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে আরও মানুষের বসবাস রয়েছে। তবে চিকনাগুল এলাকায় প্রাণহানির ঘটনার পরও তাদের সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

চিকনাগুল ইউনিয়নের সাতজনি গ্রামে যাওয়ার পথে অবস্থিত ঠাকুরের মাটি গ্রামের পাঁচটি পরিবার এরকম টিলার নিচে বাস করে। ওই পাঁচটি ঘরে প্রায় অর্ধশত মানুষ থাকেন।

তাঁরা বলছেন, টিলা এলাকায় তাঁরা যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এলাকায় টিলা ধসে হতাহতের ঘটনা এবারই প্রথম।

জানা গেছে, চিকনাগুল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আরও প্রায় ২৫টি পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে। সোমবারের ঘটনায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা যায়, ঠাকুরের মাটি গ্রামের হিমুন্নুলি টিলার নিচে বসবাস করছে ওই পাঁচ পরিবার। এর মধ্যে একটি ঘর আধা পাকা এবং অন্যগুলো টিনের তৈরি। এই টিলার মাটি ধসে পড়ার চিহ্ন দেখা গেছে। এ ছাড়া টিলার মাটি কোদাল ও শাবল দিয়ে কেটে নেওয়ার চিহ্নও দেখা গেছে।

টিলার নিচের একটি ঘরের বাসিন্দা মো. শাহ আলম গণমাধ্যমকে জানান, রোববার সকাল থেকে ভোররাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এতে টিলার মাটিগুলো নরম হয়ে ধসে পড়েছে। রোববার রাতে তাই বাড়িতে থাকা হয়নি। ঘরের সদস্যদের স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

ঠাকুরের মাটি গ্রামের আরেক বাসিন্দা মো. হাসু মিয়া (৭০) বলেন, আগে টিলার ওপরে বাড়ি ছিল। পরবর্তী সময়ে টিলাধসের শঙ্কা থাকায় সেটির নিচে ঘর বাঁধতে হয়েছে। এখন পরিবারের তিন ছেলে তিন মেয়েসহ আটজন সেই ঘরে থাকেন। শুক্রাবারি বাজারে তিনি হোটেলের ব্যবসা করেন। টিলাটি ছাড়া অন্য এলাকায় তাঁর জায়গাজমি নেই। এ জন্য টিলার নিচেই বসবাস করতে হচ্ছে।

নুরুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, টিলার মাটি কাটা অপরাধ, সে জন্য টিলার মাটি কাটেন না তাঁরা। এদিকে টিলার ধসের শঙ্কা রয়েছে। দুই দিকেই বিপদ। টিলার মাটি না কাটলে ধসে ঘরের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-বাশিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ষা মৌসুমে টিলা এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়। টিলা এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্যও আহ্বান জানানো হয়।

তিনি বলেন, টিলা এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার ভোরে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় পাহাড় ধসে মাটিচাপায় একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পূর্ব সাতজনি গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- পূর্ব সাতজনি গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে জুবায়ের আহমদ (৩৫), তার স্ত্রী মোছা. সুমি বেগম (২৬), জুবায়ের আহমদের ছেলে সাফি আহমদ (৫) এবং জুবায়ের আহমদের ভাই মাওলানা রফিক আহমদের স্ত্রী মোছা. শামীমআরা বেগম (৪৮)।

স্থানীয় ও থানাপুলিশ সূত্র জানায়, সাতজনি গ্রামে পাহাড় কেটে অনেকেই বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে ওই পরিবারও পাহাড় কেটে পাদদেশে বাড়ি তৈরি করে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের কারণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে পড়ে। রোববার রাতেও সিলেটে বৃষ্টি হয়। আর সোমবার ভোরর ৫টার দিকে পূর্ব সাতজনি গ্রামের জুবের আহমদের টিনের তৈরিঘরের উপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এসময় ঘুমন্ত অবস্থায়ই মাটিচাপা পড়ে একই পরিবারের ওই চারজন নিহত হন।

এ ঘটনায় আহত হন ৮ জন। তারা হলেন- আব্দুল করিম (৮০), খয়রুন নেছা (৭৫), মাওলানা রফিক আহমদ (৬০), ফাইজা বেগম (২০), লুৎফা বেগম (২০), রাফিউল ইসলাম (১০), মেহেরুন নেছা (৪০) ও হাম্মাদ (৩)। আহতদের পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয় এবং গ্রামের বাসিন্দারা দ্রুত ছুটে এসে হতাহতদের উদ্ধারকাজ শুরু করেন। অপরদিকে ঘটনার সংবাদ পেয়ে সিলেট ফায়ার সার্ভিস উপ পরিচালক মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে জালালাবাদ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সদস্য ও জৈন্তাপুর থানাপুলিশের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে। পরে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এদিকে, তাৎক্ষণিকভাবে নিহদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও শুকনো খাবার প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান। এসময় তিনি হতাহতদের দাফন ও চিকিৎসার জন্য মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ