বিপাকে ব্যবসায়ীরা, হাহাকার শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২০

বিপাকে ব্যবসায়ীরা, হাহাকার শ্রমিকদের

নুরুল হক শিপু সিলেট অতিথি প্রতিবেদক :: করোনা পরিস্থিতিতে অবিক্রীত শত কোটি টাকার পাথর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারির বৈধ ব্যবসায়ীরা। লকডাউনের মধ্যে ইজারা শেষ হওয়ায় প্রশাসন পাথর পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। এ অবস্থায় নিজেদের দুরবস্থা তুলে ধরলে আদালত ব্যবসায়ীদের ১৫ দিনের সময় দেন। ওই সময়ও শেষ হচ্ছে আজ (১৫ জুন); কিন্তু লকডাউন শেষে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংগ্রহ, নৌকা ঘাটে ভেড়ানো ও ক্রেতা জোগাড়েই চলে গেছে বেশিরভাগ সময়। ফলে জমাকৃত শত কোটি টাকার পাথরের সিংহভাগই স্থানান্তর করতে পারেননি তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অন্যান্য পাথর কোয়ারি থেকে সারাবছর পাথর সরবরাহের সুযোগ থাকলেও ব্যতিক্রম লোভাছড়া। এখানে শুকনো মৌসুমে ব্যবসায়ীরা পাথর উত্তোলন ও মজুদ করেন। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি এলে নৌপথে সেগুলো পরিবহন করা হয়; কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এবার বর্ষার শুরুতে পাথর পরিবহন করা সম্ভব হয়নি। এখন পাথর পরিবহনে ব্যর্থ হলে নিঃস্ব হবেন হাজারও ব্যবসায়ী; কর্মহীন হবে কয়েক হাজার শ্রমিকের পরিবার। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টি মানবিক হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে তাদের কিছু করার নেই।

লোভাছড়া আদর্শ পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন

বলেন, আমরা সব রয়েলিটি প্রদান করে প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ী পাথর মজুদ করি। বাড়ি ও জমি বন্ধক দিয়ে কোটি কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ করেছি; কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বর্ষা শুরু হলেও গত আড়াই মাস আমরা পাথর সরবরাহ করতে পারিনি। সরকার যদি প্রকৃত অবস্থা বুঝে আমাদের পাথর সরবরাহের জন্য সময় না দেয়, তা হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।

মুলাগুল পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। নদীয় পানিও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও ফল পাইনি। এমন পরিস্থিতিতে শত শত ব্যবসায়ীকে দেনার দায়ে পড়তে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ২৪ হাজার টাকায় মোস্তাক আহমদ পলাশকে দুই বছরের জন্য লোভাছড়া পাথর কোয়ারি লিজ প্রদান করা হয়, যার মেয়াদ গত ১৩ এপ্রিল শেষ হয়। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ব্যবসায়ী ইজারার শর্ত মেনে সরকারের রয়েলিটি প্রদান করে বর্ষা মৌসুমে পরিবহনের জন্য কোটি কোটি টাকার পাথর মজুদ করেন। তাদের অনেকে বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থায় বন্ধক দিয়ে পুঁজি সংগ্রহ করেন।

ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৩১ মে ব্যবসায়ীরা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাথর সরবরাহের সময় বাড়িয়ে দিতে একাধিক আবেদন করেন। কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় পাথর পরিবহনে যুক্ত শ্রমিকরাও আবেদন করেন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ইজারাকালে ব্যবসায়ীদের উত্তোলনকৃত পাথরগুলো সরবরাহের সময় দিতে গত ৩১ মে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন ইজারাদার মোস্তাক আহমদ পলাশ। এ ব্যাপারে সাড়া না পাওয়ায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। মানবিক দিক বিবেচনায় হাইকোর্ট ১৫ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনের সময় দিয়ে পাথর সরবরাহ সম্পন্ন করতে আদেশ দেন; কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়া ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীপথের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্বল্প সময়ে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংগ্রহ ও নৌকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন হতে চলেছে কয়েক হাজার শ্রমিকও।

লোভাছড়া পাথর কোয়ারি শ্রমিক সমবায় সমিতির সভাপতি আজাদুর রহমান বতা বলেন, এখানে প্রায় ১০ হাজারের ওপরে শ্রমিক কর্ম করে সংসার চালান। আমাদের পাথর লোডের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। অনেক আশা নিয়ে লকডাউনের মধ্যেই কষ্ট করে এসেছি। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে রয়েছে; কিন্তু আজ (সোমবার) থেকে পাথর পরিবহন বন্ধ হলে আমাদের অনাহারে মরতে হবে।

এ বিষয়ে কথা হলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসলাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি মানবিক হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বা সরবরাহ করার কোনো সুযোগ নেই।

সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন (পিপিএম) বলেন, ‘লোভাছড়া কোয়ারির ইজারার মেয়াদ শেষ হলে জেলা প্রশাসন থেকে অভিযান পরিচালনা করতে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হলে পুলিশ সহযোগিতা করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা ঠিক করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় ব্যবসায়ীরা পাথর সরবরাহ করতে পারেননি এবং শ্রমিকরাও কর্মহীন ছিলেন। এই পরিস্থির কারণে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছেন। তবে মন্ত্রণালয়ের শর্ত মতে, ইজারার মেয়াদ শেষ হলে পাথর উত্তোলন ও সরবরাহ দুটিই বন্ধ রাখার নিয়ম রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ