ছাতকে সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমোদন

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০

ছাতকে সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমোদন

অনলাইন ডেস্ক ::
জেলার ছাতকে সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল সহ দেশে আরও ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান অনুমোদন পেল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বোর্ডের সপ্তম সভায়। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এক বিজ্ঞপ্তিতে বেজা জানায়, সভায় অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, চেম্বারের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।

বেজা জানায়, ঢাকার নবাবগঞ্জে নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে টাঙ্গাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল, নওগাঁয় সাপাহার অর্থনৈতিক অঞ্চল, দিনাজপুর সদরে দিনাজপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নোয়াখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সন্দ্বীপ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সুনামগঞ্জের ছাতকে সুনামগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাবনার বেড়ায় পাবনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বরিশালের হিজলায় চরমেঘা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মানিকগঞ্জের শিবালয়ে মানিকগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

সরকার ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এর মধ্যে ৯৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন পেয়েছে। যদিও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সরকারি বেসরকারি ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

বেজা আরও জানায়, সভায় আরও পাঁচটি সিদ্ধান্ত হয়। যার মধ্যে রয়েছে মহেশখালী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নাম পরিবর্তন করে ‘সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক’ নামকরণের অনুমোদন। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কিশোরগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী ড্রাইডক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইস্টওয়েস্ট বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হোসেন্দী অর্থনৈতিক অঞ্চলকে জোন ঘোষণা ও তাদের দেওয়া লাইসেন্সের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন।

সভায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত সব শ্রেণির (এ/বি/সি) কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের প্রতিষ্ঠানের মতো একই হারে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সভায় বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ স্থানান্তরের যে প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কর্মকৌশল ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরেরে সঙ্গে মেরিন ড্রাইভের সংযোগ স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
বেজা জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী শিল্পের বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেন। অনগ্রসর অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা শিল্পনগর গড়ে তুলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল করতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে আরো পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা আরো গতিশীল করতে চাকরির পেছনে ছোটার পরিবর্তে বিনিয়োগ করতে (একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন) ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে যুবসমাজকে উৎসাহিত করতে কাজ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন সন্দেহ নেই, আমাদের অর্থনীতি কৃষির ওপর নিভর্রশীল। তবে, আমাদেরকে আরো শিল্পায়নের প্রয়োজন। শিল্পায়ন ছাড়া কোন দেশের অগ্রগতি হতে পারে না। তিনি দেশের ভূমির পরিমান কমে আসা সত্ত্বেও বিপুল জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, আমরা আবাদী জমি এবং পরিবেশ রক্ষায় একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ এলাকা নির্বাচন করেছি। তিনি বলেন, সরকার দেশে কর্মসংস্থান এবং দেশবাসীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিশেষ করে রফতানি বৃদ্ধি করতে সারাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়ন করতে চায়।

তিনি বলেন, এ লক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় (কেবলমাত্র রাজধানী ও বন্দর এলাকা বাদে) বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমরা কৃষি পণ্য কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহার করতে একটি বিশেষ এলাকায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারে প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন করা। এ জন্য শিল্পোন্নয়ন এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো দেশের অর্থনীতির উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস অবসানের পর বাংলাদেশ এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন।