মহানগর আ’লীগের কমিটি জমা হচ্ছে কাল ! যারা আসছেন…

প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০

মহানগর আ’লীগের কমিটি জমা হচ্ছে কাল ! যারা আসছেন…

ডি আর দিপন :

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে পুরো কমিটি পাঠানো হচ্ছে দলীয় সভানেত্রির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। দলীয় প্রধানের অনমোদনক্রমেই ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। দলের নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে জেলা কমিটির ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি পৌছে গেছে দলীয় প্রধানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। তবে, মহানগর কমিটিতে এখনও পদ-পদবী নিয়ে জটিলতা রয়েছে জানিয়ে ওই সুত্রের দাবি- আশা করা যাচ্ছে, জটিলতা কাটিয়ে আজ-কালের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম প্রস্তাব আকারে পাঠানো হচ্ছে ঢাকায় । সেখান থেকে দলীয় প্রধানের অনুমতির পর পরই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ পরিপূর্ণ একটি কমিটিতে রূপ নিবে।

জানাগেছে সারাদেশে অপূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলোর নাম পাঠাতে নির্দেশ প্রদান করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। চলতি মাসের ১৫ সেপ্টেম্বর সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে সবাইকে তালিকা পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। নির্দেশনার পর সারাদেশের মতো ব্যস্থ সময় কাটছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগেরও। নির্দেশনার সময় শেষ হচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর। হাতে সময় রয়েছে আর মাত্র একদিন। বিষয়টিকে মাথায় রেখে কমিটির পূণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ ।

অবশ্য, দলের জেলা ও মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন-ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্নরাই স্থান পাচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। তাছাড়া, নবীন এবং প্রবীণের সমন্বয়ে দেশ এবং দল বান্ধব কমিটি উপহার দিতে প্রস্তুত থাকার বিষয়টিও জানিয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

দলের একটি সুত্র জানিয়েছে, বিগত কমিটিতে থাকা সদস্যদের মধ্যে যারা বর্তমানে জীবিত নেই তাদের স্থলে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি এবং বর্তমানে যারা স্থায়ীভাবে প্রবাসে অবস্থান করছেন তাদেরকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। তবে, সুখবর হচ্ছে, পুরনোদের কেউই বাদ যাচ্ছেননা কার্যকরী পদ থেকে। বিষয়টি নিয়ে জেলা এবং মহানগর একমত থাকতে পারে-এমন আভাস দিয়ে মহানগরের সাবেক প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, এখনও কিছু বলা যাচ্ছেনা । তবে সিদ্বান্তটি এমন হলে দলের জন্য ইতিবাচক বলেও তিনি ইঙ্গিত করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর শাখার সাবেক এক সভাপতি মন্ডলির সদস্য বলেন, এবার সিসিকের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে যারা দলীয় পদে নেই, তাদেরকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি রয়েছে আলোচনায়। তবে, নবাগত কেউই সদস্যপদ ছাড়া অন্যকোনো পদে মনোনীত হবেন না। তাছাড়া, বিগত কমিটির অধিকাংশই সাবেক পদে বহাল না থাকলেও পদ রদ-বদলের সম্ভাবনাও থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি ।

এদিকে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নীরব যুদ্ধ চলছে সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে। একটি সূত্র এমনটা নিশ্চিত করেছে । অনেক বাদ বিতন্ডার পর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি হয়েছে । তালিকায় সম্ভাব্য প্রেসিডিয়াম পদের জন্য যাদের নাম আলোচনায় এসেছে-তাঁরা হলেন,এডভোকেট মফুর আলী, আসাদ উদ্দিন আহমদ, ফয়জুর আনোয়ার আলাওর, এডভোকেট রাজ উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালিক, কয়েস গাজী ও জগদীশ চন্দ্র দাস প্রমুখ।

প্রস্তাবিত কমিটিতে সম্ভাব্য সম্পাদকমন্ডলীতে যাদের নাম অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে তাঁরা হলেন, সাবেক ছাত্রনেতা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, এটি এম হাসান জেবুল, আমজাদ হোসেন, আবদুর রহমান জামিল, আজাদুর রহমান আজাদ, বিধান কুমার সাহা, সালেহ আহমদ সেলিম, তপন মিত্র, সৈয়দ শামীম আহমদ, প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী, জুবের খান, আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর, এডভোকেট শামসুল ইসলাম ও গোলাম সোবহান চৌধুরী দিপন, আসমা কামরান ও জুনেল আহমদ প্রমুখ।

দলীয় পদে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যোগাযোগও বৃদ্ধি পেয়েছে দলীয় পদ-প্রত্যাশীদের। এ নিয়ে মৌনযুদ্ধও চলছে। কেউ কেউ কাঙ্খিত পদ হারাতে পারেন- এমন ধারণা থেকে পাল্টা কমিটি জমা প্রদান করবেন-এমন প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগরের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। ওই নেতার দাবি- কমিটিতে ক্লিন ইমেজ ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদেরকে সর্বাগ্রে প্রাধ্যান্য দিতে চান মহানগর সেক্রেটারী। এ ব্যাপারে তিনি আপোসহীন এবং সিদ্বান্তে অটল রয়েছেন। তাছাড়া, কমিটিতে পদ-পদবী নিয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে মৌনযুদ্ধের বিষয়টিও স্বীকার করে নেন তিনি।

গেলো বছরের ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাশুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন নির্বাচিত হন।

এদিকে, কমিটি গঠনের পর ৯ মাস অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাঠাতে পারেনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। দলের উভয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দাবি-সম্মেলনের পর থেকে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে সেতুঁ বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়। এরই মধ্যেই মার্চ মাসের শুরু থেকেই চলে আসে করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের গৃহিত মুজিববর্ষের কর্মসূচীর পরিধিও সংক্ষিপ্ত করা হয়। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণা আসে। এরই মধ্যে গেলো আগষ্ট মাস জোড়ে ছিল শোক দিবসের কর্মসূচী। সব কিছুর পরও থেমে থাকেনি আওয়ামী লীগ।

এবিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, কাজ চলছে যথারীতি। তবে, ১৫ তারিখের আগে গণমাধ্যমে কমিটি বিষয়ে তথ্য জানাতে রাজি নন তিনি। কারা আসছেন কমিটিতে -এর আগে তিনি  জানিয়েছিলেন বিতর্কিতদের ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রীর কড়া হুশিয়ারী রয়েছে। তিনি বলেন, ক্লিন ইমেজ এবং পরিচ্ছন্ন ত্যাগী নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের খসড়া তালিকা প্রস্তুতি এবং জমাদান বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সংগঠনের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর আনোয়ার আলাওর  বলেন, বিগত দিনে কমিটি গঠনকালে সকলকে নিয়েই বসা হতো। তিনি বলেন, এ বিষয়ে যেহেতু সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক আমাদের কিছুই অবহিত করেননি, সেহেতু প্রস্তুতি এবং কমিটিতে কারা থাকতে পারেন-এ ব্যাপারে কিছুই বলা সম্ভব নয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ