রসুল (সা.)-এর জন্ম ও নবুয়তের সূচনা

প্রকাশিত: ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০

রসুল (সা.)-এর জন্ম ও নবুয়তের সূচনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতিবাহিনী নিধনের বছর অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার মধ্য দুপুরে তাঁর চাচা আবু তালিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাইমা ছিলেন উম্মে আইমান যিনি আবদুল্লাহর দাসী এবং প্রথম স্তন্যদানকারী হলেন শুয়াইবা যিনি আবু লাহাবের দাসী। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ।

আবু উবামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনার নবুয়তের সূচনা কীভাবে হয়। জবাবে তিনি বললেন, আমি আমার পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দোয়া- হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রসুল প্রেরণ করিও যে তোমার আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করবে এবং তাদের কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) দেবে ও তাদের পবিত্র করবে। তুমিই তো পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৯) এবং আমার ভাই ঈসা আলাইহিস সালামের সুসংবাদ আমার পরে আহমদ নামে যে রসুল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা। (সুরা সাফ, আয়াত ৬) এবং আমার মায়ের স্বপ্ন আমার মা স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার মধ্য থেকে একটি আলো বের হয়েছে যা সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত করেছিল এবং তা তার দৃষ্টিগোচর হতে লাগল। তার মায়ের এ স্বপ্নের কথা ওই সময় আরবে ছড়িয়ে পড়লে আরববাসী বলতে লাগল আমিনার গর্ভে এক মহান ব্যক্তির জন্ম হবে।
রসুল (সা.)-এর সহি ও প্রসিদ্ধ নাম হচ্ছে পাঁচটি। তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় নাম দুটি। এ দুইয়ের মধ্যে সব শ্রেণির মানুষের উচ্চারিত নাম হচ্ছে মুহাম্মদ। এ বিশেষ নামটি কোরআনে চারবার আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। সুরা আলে ইমরানের ১৪৪, সুরা আহজাবের ৪০, সুরা মুহাম্মদের ২ ও সুরা ফাতহের ২৯ নম্বর আয়াত। আহমদ নামটি একবার সুরা সফের ৬ নম্বর আয়াতে এসেছে। মুহাম্মদ নামের অর্থ চিরপ্রশংসিত ও প্রশংসার অধিকারী। দিনে রাতে এমন কোনো সময় নেই যে সময়ে তাঁর নাম উচ্চারিত হয় না। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে প্রতিটি রাজ্যে সময়ভেদে আজান ও সালাত হয়ে থাকে। ওইসব দেশ ও প্রদেশের দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, দিন ও রাতে সর্বক্ষণই তাঁর প্রশংসা করা হচ্ছে। তিনি ছিলেন প্রশংসার মূর্ত প্রকাশ। ইতিহাসে এখন আর কোনো মানুষ নেই যাকে মানবজাতি এত প্রশংসা করেছে। আল্লাহ তাঁর নামের অর্থের পূর্ণতা দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত এ প্রশংসা চলতে থাকবে।

আহমদ : আহমদ ও মুহাম্মদ একই মূল শব্দ হামদ থেকে এসছে। আহমদ হচ্ছে অধিক প্রশংসাকারী, যিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন। অন্য কথায়, আল্লাহর প্রশংসাকারীকে আহমদ বলা হয়। রসুল (সা.) আল্লাহর প্রশংসা এত বেশি করতেন যা অন্য সবার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। রসুল (সা.)-এর আরও কিছু নাম হাদিস থেকে পাওয়া যায়। তার একটি হচ্ছে আল হাসির। আল হাসির অর্থ জড়োকারী। যার জাগরণের সঙ্গে সমগ্র মানবজাতির পুনরুত্থান হবে এবং তাঁর পেছনে জড়ো হবে। মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.)-কে হাশরের দিন সর্বপ্রথম পুনরুজ্জীবিত করা হবে। তাঁর পুনরুজ্জীবনের পর পুরো মানবজাতি জাগরিত হবে।

তাঁর আরেক নাম আল মুত্তাফ। এর অর্থ উত্তরসূরি। মুহাম্মদ (সা.) নবী-রসুলদের মধ্যে সর্বশেষ। যা কোরআনুল কারিমের সুরা আহজাবের ৪০ নম্বর আয়াতে খতামুন নাবিয়্যিন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণেই তিনি হলেন সব নবীর সর্বশেষ উত্তরসূরি।

আরেক নাম আল মাহি। যার অর্থ নিশ্চিহ্নকারী। যিনি কুফরি নিশ্চিহ্ন করেন বা মুছে ফেলেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া আর কোনো নবী পুরোপুরিভাবে কুফরিকে অপসারণ করতে পারেননি। ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় সে মুহূর্তে আসবে যখন সারা বিশ্ব মুসলিম হবে আর তা হবে উম্মতে মুহাম্মদির হাতে ঈসা আলাইহিস সালামের নেতৃত্বে। এজন্যই তাঁর নাম আল মাহি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের জানার ও আমল করার তৌফিক দিন।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা

সাবেক পরিচালক, রাজউক।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ