সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কাউকে না জানিয়ে কমিটি জমা দেয়ার এখতিয়ার আপনাদের কে দিল?

প্রকাশিত: ৫:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কাউকে না জানিয়ে কমিটি জমা দেয়ার এখতিয়ার আপনাদের কে দিল?

 নিজস্ব প্রতিবেদক;; গত বছরের ৫ ডিসেম্বর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ‘চমক’ দেখা যায়। যেখানে মহানগরীর দায়িত্ব পান মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। মূলত সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভেদ প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই সময় কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকে শোকজের পাশাপাশি সিলেট আওয়ামী লীগের সবাইকে সতর্ক করা হয়। আর মহানগরে বিভেদ দূর করতে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেনের হাতে।এদিকে করোনাকাল কাটিয়ে গত সোমবার মহানগরের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের হাতে কমিটির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা দেন। তবে ওই কমিটিতে অনেককে অবমূল্যায়নের অভিযোগে বুধবার রাতে কেন্দ্রে বিকল্প কমিটির তালিকা জমা দেওয়া হয়। আর এতে দলে বড় বিভেদ তৈরির আশঙ্কা দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।বিষয়টি নিয়ে ‘বিকল্প কমিটি’র প্রচারণাকারী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।বিকল্প কমিটির প্রস্তাবকারী নেতাদের প্রতি তারা প্রশ্ন রেখে বলেন- ”কোন এখতিয়ার বলে আপনি বা আপনারা ‘বিকল্প কমিটি’ কেন্দ্রে জমা দিলেন? সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে বা তাদের অজ্ঞাতে ‘কমিটি’ জমা দেয়ার এখতিয়ার আপনাদের কে দিল? এসব কি গঠনতন্ত্র ও দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ নয়? একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্যে সংগঠনের নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করার মানসিকতার পরিচয় নয়? দলে বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস নয়?”তারা বলেন- ”আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে এবং দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে কতেক সংবাদ মাধ্যমে দলের আভ্যন্তরীন ও কেন্দ্রের এখতিয়ারাধীন বিষয় নিয়ে বক্তব্য প্রদান ও প্রচার চালানো কি দলের কেন্দ্রের ও সাংগঠনিক নিয়মনীতির প্রতি চ্যালেঞ্জের সামিল নয়? আশাকরি বর্ণিত বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বিবেচনায় নিবেন।”এর আগে গত সোমবার মহানগরের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের হাতে কমিটির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা দেওয়ার পর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর বুধবার রাতে দলের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ূয়ার হাতে আরেকটি বিকল্প কমিটির তালিকা জমা দেন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।তাদের দাবি- মহানগরের শীর্ষ নেতাদের প্রস্তাবিত কমিটিতে পুরোনো কমিটির ২২-২৪ জন বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে অতীতে গ্রেনেড হামলায় আহত, ত্যাগী কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাছাড়া ‘অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড’ কয়েকজনকে প্রস্তাবিত কমিটিতে রাখার পাশাপাশি স্বজনপ্রীতি ও পকেট কমিটি করার অভিযোগ তুলেন তারা।এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউর বলেন, অতীতে যখনই কমিটি হয়েছে, সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি হয়েছে। এবারে কেউ জানে না, কীভাবে কমিটি হয়েছে। তিনি বলেন, বয়স বা অসুস্থতার জন্য রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় পুরোনো কমিটির দু-তিনজন বাদ পড়লেও অন্য সবাইকে নিয়ে কমিটি করা উচিত।ফয়জুল আনোয়ার অভিযোগ করে বলেন, কমিটি গঠনের সময় কাউকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি বলেন, যাদের রাখা হয়েছে, তাদেরও যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়নি। এমন মানুষকে রেখেছে, যাদের কেউ চেনে না। তাদের ‘অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ অনেকে ঢাকায় গিয়ে অভিযোগ করছেন।মহানগরের বিকল্প কমিটিতে ৭৫ জনের নাম রাখা হয়েছে; যাদের মধ্যে অনেককেই রাখা হয়েছে সদস্য হিসেবে। এই কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুক ও জাকিরকে রেখে অন্য পদ-পদবি পূরণ করা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সিলেট মহানগরের কমিটি ৭৫ সদস্যের হওয়ার কথা। এখন কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে কমিটি অনুমোদন দেবে বলে জানিয়েছেন তারা।বর্তমান কমিটির ঘনিষ্ঠ কয়েকজন দাবি করেছেন- সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, মাদক মামলাসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র চাইলে তাদের বাদ দেওয়ার বিপরীতে তথ্য-প্রমাণ দেওয়া হবে। সাবেক একজন কেন্দ্রীয় নেতা উস্কানি দিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করতে চাইছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তারা।এই পক্ষের নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা কেন্দ্রে নালিশ করছেন বা তদবির করছেন, তারা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন না। প্রস্তাবিত কমিটির বিরোধিতাকারীরা অতীতে দলের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করেছেন, পেশাজীবী হিসেবে ফায়দা নিয়েছেন। অন্যদিকে কমিটি নিয়ে বিক্ষুব্ধরা দাবি করেছেন, বর্তমান নেতারা একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, ভাইসহ একাধিক ব্যক্তিকে রেখেছেন।তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেভাবে প্রত্যাশা করেন, সেভাবেই ভালো একটি কমিটি করার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজধারীদের মূল্যায়নের পাশাপাশি নানা অভিযোগ রয়েছে, এমন নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি।’‘বিকল্প কমিটি’ নিয়ে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নির্বাচিত কমিটি থাকা অবস্থায় ‘প্রস্তাবিত কমিটি’ বলতে কিছু নেই। ‘বিকল্প কমিটি’ সম্পর্কে কিছু জানাও নেই। তবে কেউ যদি এরকম কিছু করে তাহলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসার পর সবাই মিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।তাছাড়া দলের হাইকমান্ড রয়েছে, তারা বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি জানান।এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন জানাজায় অংশ নেয়ায় এ ব্যপারে তাঁর সাথে বিস্তারিত কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ