“সঞ্চয়পত্র ক্রয় -ই-টিন সনদ দাখিল ও ব্যাংক হিসাব থাকা প্রসংগে,সৈয়দ তৈয়বুর রহমান”

প্রকাশিত: ৩:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০

“সঞ্চয়পত্র ক্রয় -ই-টিন সনদ দাখিল ও ব্যাংক হিসাব থাকা প্রসংগে,সৈয়দ তৈয়বুর রহমান”

 

সরকার বছরখানেক আগে থেকে সঞ্চয় পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার ই-টিন সনদের কপি দাখিল এবং অন-লাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী তফসিলী ব্যাংকের যে কোন শাখায় একটি জমা হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। এ ছাড়া সঞ্চয় পত্র ক্রয়কালে নগদের পরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থের চেক জমা দেয়ার বিধানও রাখা হয়েছে। তবে যার ই-টিন সনদ নাই তিনি বছরে একবার নগদ জমার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১.০০ লক্ষ টাকার যে কোন প্রকার সঞ্চয় পত্র ক্রয় করতে পারবেন। এখানে চেক না দিয়ে ১.০০ লক্ষ টাকা জমা দিতে পারলেও মাসান্তে মুনাফা এবং মেয়াদান্তে আসল অর্থ জমা হওয়ার জন্য গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব অবশ্যই থাকতে হবে এবং চেকের একটি পাতার ফটোকপি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদনপত্রের সাথে দাখিল করতে হবে। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে মুনাফা এবং আসল ক্রেতার ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়ার কারণে ক্রেতাকে সঞ্চয়পত্র ক্রয়কালে একবারই ব্যাংকে আসা ছাড়া অন্য কোন দিন কিংবা মাসে মাসে আর ব্যাংকে আসতে হয় না। তাতে করে একদিকে যেমন ক্রেতার ভোগান্তি কমেছে অপরদিকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাজের চাপও অনেকটা হ্রাস পেয়েছে মর্মে আমার ধারণা।
আপাত দৃষ্টিতে এ ব্যবস্থা উত্তম বলে মনে হলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সমাজের স্বল্প আয়ের সঞ্চয়কারীদের উপর। বিশেষ করে পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাঁধার সন্মুখিন হচ্ছেন মহিলারা। তাদের ই-টিন সনদ এবং ব্যাংক একাউন্ট না থাকার কারণে এখন তাদের অনেকেই আর পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারছেন না। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে সঞ্চয়পত্র ইস্যুর পরিমান অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে অনেক বেশি কমে গিয়েছে বলে আমার ধারণা। জানিনা সঞ্চয়পত্র ইস্যুর পরিমান হ্রাসের মাধ্যমে সরকারি ঋণের পরিমান কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে, না সমাজের অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার ও আয়করের আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। উল্লেখ্য NID নাম্বার ছাড়া সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয় না। একজন গ্রাহক নির্ধারিত ক্রয়সীমার অতিরিক্ত কোন প্রকল্পের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন কি না, তা কি সঞ্চয়পত্র ইস্যুর সময় ইস্যুকারী কর্মকর্তা কর্তৃক গ্রাহকের NID এর নাম্বার দিয়ে যাচাই করে দেখার সুযোগ নেই?
সাধারণত:সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেন কারা? ব্যবসায়ী, সরকারি/বেসরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী, না সাধারণ জনগণ? ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়।প্রয়োজনে তারা ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে থাকেন।তারা কোথাও টাকা অলসভাবে ফেলে রাখেন না। তাদের আয়কর সনদ ও ব্যাংক একাউন্ট সবই আছে। তারা ইচ্ছা করলে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে কোন অসুবিধার সন্মুখিন হচ্ছেন না। সরকারি কর্মচারী যাদের মূলবেতন ১৬,০০০/০০ টাকার উপরে তাদের ই-টিন সনদ ও ব্যাংক হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। ইএফটিএন এর মাধ্যমে তাদের বেতন ও ভাতাদি মাসে মাসে ব্যাংক একাউন্টে জমা হচ্ছে। যাদের ব্যাংক একাউন্ট আছে তাদেরকে ষাণ্মাসিক/বার্ষিক ভিত্তিতে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ/ভ্যাট/আবগারি শূল্ক/উৎসে কর/সার্ভিস চার্জ/এসএমএস চার্জ,ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার চার্জ বহন করতে হয়। যাদের ই-টিন সনদ ও ব্যাংক একাউন্ট -এ দু’জিনিস আছে তাদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে কোন বাঁধা বিপত্তি কিংবা কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। টাকার উৎস কোথায় সেটা উল্লেখ করার কোন কলাম সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদন ফরমে নেই। টাকাগুলো ব্যাংক থেকে আসলেও সেখানকার গ্রাহকের টিপি/কেওয়াইসি ও অন্যান্য বিষয়াদি কি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের করযোগ্য কোন আয় নেই,যারা কোন দিন ব্যাংকের ধারে কাছে যাননি, তারাই পড়েছেন বিপাকে। তাদের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার রাস্তা বন্ধ।
অনেক অস্বচ্ছল পরিবারকে দেখেছি যাদের আত্মীয়স্বজনেরা বিদেশ থেকে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য করেছেন,কিংবা তাদের কিছু সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে তা থেকে অর্জিত মুনাফা দ্বারা সংসারের খরচ,ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ,ইত্যাদি বহন করছেন। তাদের আয় উৎসারি অন্য কোন কর্মকাণ্ড নেই। সে টিন সনদ পাবে কোথায় এবং নেবেই বা কেন? আরো এমন অনেক দেখেছি,যারা স্বামী স্ত্রী দুজন কেউ বাসা বাড়িতে আবার কেউ ছোট খাটো কাজ করে কিছু টাকা জমিয়েছেন, একজন মহিলা স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হয়ে বিচারে বিয়ের মোহরানা বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা পেয়েছেন, তারও ইটিন সনদ না থাকার কারণে তার প্রাপ্ত টাকা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। স্বামী চাকুরিজীবি কিংবা বিদেশ থাকেন। আল্লাহ না করুক,কোন কারণে স্বামী মারা গেলেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছিলেন। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজগামী। এ অবস্থায় অসহায় স্ত্রী স্বামীর নিয়োগকর্তার কাছ থেকে স্বামীর পেনশন ও আনুতোষিক, মৃত্যু পরবর্তী অনুদান ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ বাবদ বেশ কিছু টাকা পেয়েছেন। স্ত্রী কোন ব্যবসায়ী নন।সাধারণ গৃহিণী। এই টাকাই তিনি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যমে তা থেকে প্রাপ্ত মুনাফার দ্বারা সংসার চালাবেন,ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ বহন করবেন। নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান সঞ্চয়পত্র। কিন্তু উনার তো টিন সনদ নেই। তাই কিনতে পারছেন না সঞ্চয়পত্র। অনেকে বলবেন,অন লাইন থেকে ই-টিন সনদ একটা বাহির করে নিলেই তো হয়। আমি বলব,কেন উনি আয়কর দাতার তালিকায় নাম লিখাবেন? যেহেতু উনার আয়করযোগ্য কোন আয় নেই।
আমি সরকারি চাকুরিজীবি ছিলাম। চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর আমি পেনশন বাবদ বড় অংকের টাকা পেয়েছি। আমার টিন সনদ ছিল,ব্যাংক একাউন্ট ছিল,আমি সব টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে রেখেছি। সে বিনিয়োগের নমিনী আমার স্ত্রী। দূর্ভাগ্যক্রমে আমার মৃত্যু হয়ে গেল। নমিনী হিসেবে আমার স্ত্রী সে টাকার মালিক হয়ে গেল। সে একজন সাধারণ গৃহিণী। এ অবস্থায় তার নামে কোন টিন সনদ না থাকার কারণে এ টাকা ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারছে না। অনেক সময় মহিলারা তাদের পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা করে বিক্রয়লব্দ অর্থ বাবদ বড় অংকের টাকা পেয়ে থাকেন। তার অন্য কোন আয় উৎসারি কর্মকান্ড না থাকায় টিন সনদ নেই।