সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
স্থানীয় বিএনপি ও সংসদ সদস্য প্রার্থী সম্পর্কে
শমসের মবিন নানা বিভ্রান্তি ছাড়চ্ছেন

অনলাইন ডেস্ক

সিলেট ৬ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী ফয়ছল আহমদ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেছেন সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘এডিটর গিল্ডস’ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সমশের মবিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী তিনি ও স্থানীয় বিএনপি সম্পর্কে নানা বিভ্যান্তিকর মন্তব্য করেন। তিনি তার বক্তব্যে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে তাঁর সাথে ফোনালাপ বিষয়ের অবতারণা করেন। তিনি এরূপ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে শমসের মবিনের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তিনি শনিবার দুপুরে নগরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি বর্তমান কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের দাবিতে অন্যান্য সমমনা দলকে নিয়ে দেশব্যাপী এক দফার আন্দোলন করছে। অন্যদিকে সরকার এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় কতিপয় কিংস পার্টির জন্ম দিয়ে বিশ্ব বিবেককে বিভ্রান্ত করে কথিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু, বিএনপি’র অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। তথাপি বর্তমান অবৈধ সরকার তার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করার জন্য তাদের কিছু ক্রীড়নক মাঠে নামিয়েছে। এরা সরকারের এজেন্ট হিসেবে সাধারণের মনে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিভ্রান্ত সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন যিনি এই মিথ্যাচার করছেন তিনি নিজেকে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দাবি করেন। রাজনীতিতে তাঁর পথচলা শমসের মবিনের মতো ডিগবাজির মাধ্যমে নয়। তিনি জাতীয়তাবাদী দলের একজন নিবেদিত কর্মী। দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে রাজনীতি করে আসছেন দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন ্তার ত্যাগ ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাকে সিলেট-৬ আসনে (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং তিনি নির্বাচন করেন। কিন্তু বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কারচুপি এবং দিনের ভোট রাতে করে ফেলার মাধ্যমে তার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন সমশের মবিনের সঙ্গে তাঁর যোগযোগ থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না। কারণ যে দলের সাথে বেঈমানি করতে পারে সে যে-কারো সাথে বেঈমানি করতে পারে। অখচ এই ব্যক্তি সেদিন বৈঠকে বলেছেন আমার সাথে নাকি তার ফোনালাপ হয়েছে। শুধু তাই নয় তিনি আমার দলকে হেয় করেছেন এবং বলেছেন গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে নাকি বিএনপির কোনো তৎপরতাই নেই। এটা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং চরম মিথ্যাচার। কারণ সিলেট-৬ আসনে আন্দোলন কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেতাকার্মীরা সদা প্রস্তুত রয়েছেন।
শমসের মবিন চৌধুরী এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু দলের ক্রান্তি লগ্নে সরকারের দালালি করার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বিকল্প ধারায় যোগদান করে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে সংসদ নির্বাচন করার খায়েস করেন। কিন্তু দলছুট বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে তার নমিনেশন বাজেয়াপ্ত হয়। কারণ তিনি সাকুল্যে ভোট পেয়েছিলেন ১৯১টি। এরপর তিনি দীর্ঘদিন ঘাপটি মেরে বসে থাকেন। বর্তমান সময়ে যখন দেশের গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল একটি নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে ঠিক তখন আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করার অপতৎপরতা শুরু করেছেন সমশের মবিন চৌধুরী। সরকারের ক্রীড়নক হয়ে কথিত একটি কিংস পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে আবারো সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবার খায়েস নিয়ে নানা কুটচাল ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওই গোলটেবিল বৈঠকে স্থানীয় বিএনপি ও তাঁর সম্পর্কে চরম মিথ্যাচার করেন। এই মিথ্যাচারের মূলে রয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা নষ্ট করা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন সমশের মবিন চৌধুরী বৈঠকে স্থানীয় বিএনপি’র কর্মকান্ড নিয়ে বিষোদগার করেন যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কারণ সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি অনেক শক্তিশালী এবং প্রায় প্রতিদিনই নানা মিটিং মিছিল করে আসছে। বিশেষ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সকল কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে চলেছে। অথচ সরকারের দালালি করতে নেমে সমশের মবিন তা দেখেও না দেখার ভান করছেন। তার এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকার প্রতিবাদে স্থানীয় বিএনপি সম্প্রতি পৃথক পৃথকভাবে মিছিল সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এই দুই উপজেলায় তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছে। শুধু তাই নয় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়সল আহমদ চৌধুরী অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান।
তিনি বলেন বিএনপি’র নেতৃত্ব একদফার সরকার পতনের আন্দোলন চলমান। সমশের মবিন চৌধুরী যে মিথ্যাচার করেছেন, ষড়যন্ত্র করছেন তা সফল হবে না। গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের মানুষ মিথ্যাচারিকে প্রশ্রয় দেয় না। তাকে প্রতিহত করবে, ঘৃণাভরে বর্জন করবে, প্রত্যাখান করবে এবং ঠিক সময়ে সমুচিত জবাব দেবে। কারণ আদর্শ বিবর্জিত কেউ নেতা হতে পারে না। কেউ তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেয় না।
সংবাদা সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জুয়েল, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নোমান উদ্দিন মুরাদ, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জান উজ্জøল, গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মামুন আহমদ রিপন, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজিজ মুন্না প্রমুখ।