ইসলামের দৃষ্টিতে রোগব্যাধিতে করণীয়

প্রকাশিত: ১:০৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২০

ইসলামের দৃষ্টিতে রোগব্যাধিতে করণীয়

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী :; সুস্থতা ও অসুস্থতা সবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। এর সঙ্গে আল্লাহর আনুগত্য ও নাফরমানির কোনো সম্পর্ক নেই। নবী-রসুলরাও অসুস্থ হয়েছেন। যাঁরা ছিলেন সৃষ্টির সব মাখলুকের সেরা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মানিত সব নবী-রসুলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তিনিও অনেকবার অসুস্থ হয়েছেন। তাঁকেও অসুস্থতার কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এটি আবশ্যক নয় যে, অসুস্থতা আল্লাহর শাস্তি ও তাঁর অসন্তুষ্টির দলিল। অসুস্থতা তাঁর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ হতে পারে। মুমিনের জন্য তার গুনাহর কাফফারাও হতে পারে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাক এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন কর। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বেঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়- সবকিছুতেই তার গুনাহর কাফফারা হয়।’ তিরমিজি। অসুস্থতা দ্বারা মুমিন বান্দাহর মর্যাদা উন্নত হয়। অসুস্থতাকে অশুভ নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ বুখারি। অসুখ-বিসুখ-রোগের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। রোগ দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। সুস্থতাদানের মালিকও তিনিই। কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কাউকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না। সুস্থও করতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই বললে জনৈক বেদুইন আরব জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসুল! তাহলে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোনো বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং সুস্থ-সবল থাকে? এরপর সেখানে কোনো খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবকটিকে ওই রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে? তিনি বললেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল? যে আল্লাহ প্রথম উটটিকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন।’ মুসলিম।

তবে আল্লাহ কোনো রোগে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না।’ মুসলিম।
করোনাভাইরাসে বৈশ্বিক মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ : ইসলাম সত্য-ন্যায়ের হেফাজতের জন্য মৃত্যুবরণকারীই প্রকৃত শহীদ। তবে মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে যে ইমানদার ব্যক্তি ইন্তেকাল করে সে-ও শহীদের মর্যাদা পায়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়া আরও সাত প্রকারের শহীদ আছে। (যথা) মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। পানিতে ডুবে মরা ব্যক্তি শহীদ। নিউমোনিয়া রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ। চাপা পড়ে নিহত ব্যক্তি শহীদ। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা যাওয়া স্ত্রীলোক শহীদ এবং পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদ।’ ইবনে মাজাহ। রোগব্যাধি প্রতিরোধে ইসলামী বিধান : ইসলাম রোগব্যাধি থেকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়, Prevention is better than cure (রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময় থেকে উত্তম)। এ কথাও বলা যায়, Prevention is cheaper than cure (রোগ প্রতিরোধ নিরাময়ের চেয়ে সস্তা)। এ কারণেই ইসলাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।

ইসলামে খাদ্য ও পানীয় বস্তুতে ফুঁ দিতে নিষেধ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।’ আবু দাউদ। মধু ও কালিজিরা ইত্যাদি বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তার (মৌমাছির) পেট থেকে বেরিয়ে আসে বর্ণিল পানীয় (মধু), যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য।’ সুরা নাহল, আয়াত ৬৯)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘কালিজিরার মধ্যে মৃত্যু ছাড়া অন্য সব রোগের (শেফা) আরোগ্য রয়েছে।’ বুখারি। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দাঁত ও মুখ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। দাঁত ও মুখ অপরিষ্কার থাকলে বিভিন্ন প্রকারের রোগব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁত ও মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের ওপর যদি কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে না করতাম তাহলে প্রতি নামাজের অজুর সঙ্গে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ মুসলিম। ইসলামে মদ (শরাব) নিষেধ (হারাম) করা হয়েছে। মদ পান করলে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ সৃষ্টি হতে পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর লানত মদের ওপর। তা পানকারী ও যে পান করায় তাদের ওপর। যে বিক্রি করে ও যে কেনে তাদের ওপর। যে তা নিংড়ায় ও যার নির্দেশে নিংড়ায় তাদের ওপর। যে তা বহন করে ও যার জন্য বহন করে তাদের সবার ওপর।’ আবু দাউদ। চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসসহ অনেক ধরনের রোগব্যাধি প্রতিরোধে হাত পরিষ্কার রাখতে বলেন। ইসলামে হাত, মুখ, মাথা ও পা পরিষ্কার রাখার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আছে। এর জন্য পবিত্র ও পরিষ্কার পানি দিয়ে অজু করতে হয়। অজুতে নাক, মুখ, কান ও চোখ, কনুই থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত এবং পায়ের গোছা থেকে আঙুল পর্যন্ত ধুতে হয়। এ অঙ্গগুলোয় কোনো ধূলিকণা বা রোগজীবাণু লেগে থাকতে পারে না। ফলে নামাজি ব্যক্তি বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারেন।

লেখক : এমফিল গবেষক, খতিব, মণিপুর বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ