দেশ রক্ষায় চাই নবজাগরণ

প্রকাশিত: ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৪, ২০২৩

দেশ রক্ষায় চাই নবজাগরণ

এফ এম শাহীন

দেশ রক্ষায় চাই নবজাগরণ

এফ এম শাহীন

 

 

নির্বাচন আসলেই আমরা দেখতে পাই নানা সমীকরণ। ক্ষমতা দখল কিংবা রক্ষায় কতরকম ঘটনা যে সাধারণ মানুষকে ফেস করতে হয় তার শেষ নেই। দেশ বিরোধী কথাবার্তা বলতে কিংবা কর্মসূচি দিতে দ্বিধা করেন না রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ। নির্বাচন আসলেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কত রকমের মিথ্যাচার করা যায়- তার জন্য দেশে-বিদেশে যেন গবেষণা সেল খোলা হয় এবং এর প্রচারে নেমে পড়ে বিশাল প্রশিক্ষিত বাহিনী। এবারও তার ব্যত্যয় দেখছি না।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিদেশিদের কাছে নালিশ জানাতে যেয়ে দেশকে কিভাবে ছোট করা যায়, দেশের অগ্রগতি কিভাবে থামানো যায় তার- পরিকল্পনায় ব্যস্ত এই গোষ্ঠী। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে যেয়ে তারা যে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন- জাতির মূল্যবোধ ও আত্মসম্মান বিকিয়ে দিচ্ছেন এ কথা সবাই স্বীকার করবেন। এত স্বল্প সময়ে শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি আজ পৃথিবীব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই অভূতপূর্ব উন্নয়নকে অস্বীকার করে দেশের মানুষের সমর্থন পাওয়া কি বোকামি নয়! তবে আওয়ামী সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে; দুর্নীতি, অর্থপাচার, অযোগ্যদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা, ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির সাথে আপোষ- এইসব বিষয়কে এড্রেস করে কিভাবে সুশাসন কায়েম করা যায় সেই পরিকল্পনা দেখতে চায় দেশের সকল মানুষ। কিন্তু না, দেশবিরোধী চক্র সেই দিকে না যেয়ে বিদেশি অপশক্তির কাছে মাথা নত করে কিভাবে তাদের ইশারায় নেচে দেশকে ভূলুণ্ঠিত করে মসনদে বসা যায়- সেই ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত ওই রাজনৈতিক গোষ্ঠী।
সম্প্রতি আমরা কী দেখলাম? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণভাবে সভা, সমাবেশ এবং আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু মহাসমাবেশের নামে সন্ত্রাস করে, নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবন সংহার করে, গণমাধ্যমকর্মীদের উপর নির্মম হামলা করে এবং দেশব্যাপী আতঙ্ক তৈরি করে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হলো। এমনকি বাংলাদেশের ইতিহাসে যে ঘটনাটি আর ঘটে নাই সেই লজ্জাজনক ঘটনাটি ঘটানো হলো। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করে সেই ঘৃণার কাজটি করলো বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। গণমাধ্যম কর্মীদের টার্গেট করে নির্মমভাবে পেটানো হল। নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হল এক পুলিশ সদস্যকে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে, তা দেখে স্বাভাবিক মানুষমাত্রই আতঙ্কিত বোধ করবেন।

জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশ-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে চলছে। বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। অথচ আজ বিদেশি অপশক্তির সাহায্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের যে পায়তারা চলছে, তা দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষ পরিস্কার বুঝে গেছে। বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার উন্নয়নকেও তারা মেনে নিতে পারছে না। তাই অবরোধের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করা ছাড়া কোন বিকল্প তাদের কাছে নেই। সেই সাথে তাদের বড় হাতিয়ার দেশ-বিদেশে ডুব দিয়ে থাকা গুজব ও অপপ্রচারে সিদ্ধহস্ত শক্তিশালী প্রশিক্ষিত বাহিনী এবং বিদেশি পেইড গ্রুপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে তারা সরকার ও দেশ বিরোধী গুজবে আগ্রাসী ভূমিকা রাখছে, ফলে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এইসব গুজব ও অপপ্রচার ঠেকাতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তারা কিভাবে গুজব ছড়িয়ে রামু, নাসিরনগর, রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জে সহিংস ঘটনা ঘটালো- অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হলো। এইসব হামলায় রাষ্ট্র দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারের নিরাপত্তা ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই প্রশিক্ষিত দেশবিরোধী গুজব বাহিনী আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে রুটিনমাফিক কাজগুলো করে যাচ্ছে।

আজ দেশ ও বিদেশি সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আবারও একাট্টা হয়েছে। রাজনীতির মাঠে একদল রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো ফন্দি আঁটছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায়ের। কিন্তু আমরা নানা ভাগে বিভাজিত। অভিমানে, রাগে, ক্ষোভে, নিজের দলের নেতাদের দ্বারাই নির্যাতিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। টানা ১৫ বছর ক্ষমতার চেয়ারে বসে আমাদের অনেকের এমন অহংবোধ জন্মেছে যে, অন্য কাউকে তারা পাত্তাই দিচ্ছেন না। অনেকে তো নিজেকে রাষ্ট্রের মালিক মনে করেন- যা তাদের আচার-আচরণে প্রকাশ পাচ্ছে। নাগরিক বা সুশীল সমাজ বলতে এখানে কিছু নেই। যারা আছে তারা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে তোষামোদির ডালা সাজিয়ে বসে আছে। রাজনীতিবিদদের থেকে ক্ষমতা কেঁড়ে নিয়ে দেয়া হয়েছে একদল লোভী আমলাদের হাতে। তারই আজ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের মূল কলকাঠি নাড়ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য। নানাভাবে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। যারা তাদেরকে নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। না হলে ত্রিশলাখ শহীদের রক্তে অর্জিত দেশ কোনভাবেই নিরাপদ থাকবে না। এ কথা মিথ্যে নয় দেশে অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মানুষের মানবিক ঋদ্ধির দিকে খুব একটা নজর দেওয়া হয়নি। প্রতিবছর বাজেটে সংস্কৃতি খাতের বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ধর্মব্যবসা, মৌলবাদকে রুখতে হলে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষিত মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম গড়তে হলে বাঙালির সাংস্কৃতিক নবজাগরণের কোন বিকল্প নেই।

দেশ রক্ষায় দরকার নবজাগরণ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখনি সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে দেশ বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন জাগরণ দরকার। যেমনটি হয়েছিল ২০১৩ সালে শাহবাগ গণজাগরণে। একে অপরের হাতে-হাত, কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে গানে-কবিতায়- স্লোগানে স্লোগানে শাহবাগ হলো বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ হলো শাহবাগ। যে তরুণ প্রজন্মের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, সেই প্রজন্ম এগিয়ে এলো মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তঋণ শোধাতে। জন্মযুদ্ধের পর দ্বিতীয়বারের মতো আশ্চর্য এক সূর্য হয়ে ফেটে পড়ল বাংলাদেশ তথা সমগ্র বাঙালি জাতি। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল প্রকম্পিত হলো মুক্তিযুদ্ধের ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনিতে। বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ’৭১-এ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় ও শ্রেণিভেদ ভুলে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে পরাধীন বাংলাকে মুক্ত করেছিল বাঙালি জাতি, ঠিক তেমনই। শাহবাগ চত্বরে যে আকস্মিক, স্বতঃস্ফূর্ত গণজমায়েত ঘটেছিল সেটি প্রজন্ম চত্বরের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বাঙালির মধ্যে। প্রসারিত হয়েছিল দেশ থেকে দেশান্তরে। যার প্রধান ভূমিকায় ছিল জাতীয় প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নির্ভীক সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর জাতীয়-স্থানীয় দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যম ও সাময়িকী প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশ-বিদেশে প্রচারের ব্যবস্থা করে তরুণদের উজ্জীবিত ও গণজাগরণকে তীব্র করে তুলেছিল।

এখনি সময় দেশি ও বিদেশি শত্রুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষায় দরকার সমগ্র জাতির এক নবজাগরণ। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পাশাপাশি দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে আমাদের জেগে উঠতে হবে। দেশের সকল স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। জেগে উঠতে হবে বিদেশি অপশক্তির বিরুদ্ধে। মনে রাখতে হবে আমাদের দুর্বলতায় স্বাধীন দেশে যেন কেউ নগ্ন হস্তক্ষেপ করতে না পারে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে যে সম্মান অর্জন করেছে তা যেন কোন শক্তিই ভুলণ্ঠিত না করতে পারে। দেশ আমাদের তাই সিদ্ধান্তও আমাদের।

লেখক: সংগঠক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

বিডি-প্রতিদিন

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ