ওসমানীনগরে শতবর্ষী রাস্তায় জনসাধারণের চলাচলে বাঁধার অভিযোগ

প্রকাশিত: ৫:৫২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২০

ওসমানীনগরে শতবর্ষী রাস্তায় জনসাধারণের চলাচলে বাঁধার অভিযোগ

ওসমানীনগর প্রতিনিধি :: ওসমানীনগরের দয়ামীর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত একটি গ্রামীণ শতবর্ষী রাস্তায় জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী পরিবার।

এতে ওই এলাকার ৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানা যায়, দয়ামীর ঘোষ গাঁও সড়কের রাইকদাড়া গ্রামের (ওয়ারিছ আলীর বাড়ির সামন হতে) দয়ামীর-রুকনপুর রাস্তার জালাল পাড়া গ্রামের (কাজী সাদ উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত) প্রায় ১৫ শ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ রাস্তা দিয়ে শত শত বছর ধরে ঘোষগাও, গাঙ্গপার, ইসলামপুর, কাপালীপাড়া ও রাইকদাড়া গ্রামের জনসাধারণের চলাচল করছেন। এলাকার ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা ব্যবহার করেন। ২০০৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে এ রাস্তার কিছু অংশে ইট সলিংয়ের কাজও হয়। গত প্রায় এক বছর ধরে এ রাস্তাটি বন্ধ করে দিতে উদ্যোগী হয় স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবার।

জালাল পাড়া গ্রামের কাজী শাদ উদ্দিন, কাজী আব্দুস সামাদ, কাজী সাইদ উদ্দিন, কাজী সায়েম উদ্দিন রাস্তাটির ১৫-২০ফুট এলাকা তাদের পারিবারিক দাবি করে সাধারণ মানুষের চলাচলে আপত্তি জানান। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোন সুরাহা হয়নি। ইদানিং রাস্তা খুঁড়ে প্রভাবশালী পরিবারটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলে গ্রামবাসী বাধা দেয়। এতে শাদ উদ্দিন গংরা উত্তেজিত হয়ে গ্রামবাসীকে হুমকী প্রদান করলে গত ৩০ অক্টোবর স্থানীয় আব্দুল হান্নান এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এস আই নিখিল চন্দ্র দাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। কিন্তু তারপরও রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করলে তাকে অশালীন ভাষায় গালীগালাজসহ নানা ধরণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

রাইকদারা গ্রামের এমসি কলেজের শিক্ষার্থী সাহান আহমদ ও সাহেল আহমদ বলেন, এই রাস্তা জনসাধারণের চলাচলের এক মাত্র মাধ্যম বলা চলে। কারণ শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা ব্যবহার করে দয়ামীর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। কিন্তু কেন এই রাস্তাটি বন্ধ করে আমাদের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে বিপদে ফেলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।

স্থানীয় প্রবীণ আব্দুল মুতলিব বলেন, আমাদের বাপ দাদারাও এই রাস্তা ব্যবহার করেছেন। এটি প্রাচীন একটি গ্রামীন রাস্তা। নিজেদের শক্তির জানান দিতে প্রভাবশালীরা এই রাস্তা বন্ধ করে আমাদের নানা ভাবে হয়রানী করছে। তাদের অব্যাহত হুমকিতে আমরা শঙ্কিত।

স্থানীয় বাসীন্দা রুপজান বিবি বলেন, আমার সন্তানরা এই গ্রামে বড় হয়েছে। এই রাস্তা ব্যবহার করে এই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী আরও চার গ্রামের লোকজন দয়ামীর বাজার আসা যাওয়া করেন। হঠাৎ করে এই রাস্তা বন্ধ করে আমাদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে। আমাদের প্রাচীন এই রাস্তাটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

প্রাথমিক বিদ্যারয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী মিম আক্তার, মহিলা মাদ্রাসার ৩য় শ্রেনির ছাত্রী আরিফা বেগম ও ফাতেমা তোজ জোহরা বলেন, আমরা এই রাস্তা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়েত করাতাম কিন্তু তারা আমাদের গালিগালাজ করেন তাই এ রাস্তা দিয়ে এখন আমরা যাই না।

ঘোষগাঁও গ্রামের লেচু মিয়াসহ কাপালী,গাংপাড় গ্রামের অনেকেই জানান, আমরা ৪-৫ গ্রামের বাসিন্দারা আমাদের পূর্ব পুরুষের আমল থেকে এই রাস্তা ব্যবহার করে আসছি। সম্প্রতি এলাকার একটি প্রভাবশালী পরিবার রাস্তার কিছু অংশ নিেেদও দাবি করে গ্রামবাসী কাউকে এই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচলসহ ছোট যানবাহন চলাচলে নিষেধ করে যাচ্ছে। আমরা চাই পূর্ব পুরুষের আমলে নিমিত সরকারী রাস্তাটি জনসাধারণের জন্য ঊনমুক্ত করে দেয়া হোক।

এ ব্যাপারে কাজী শাদ উদ্দিন বলেন, ওই রাস্তা দিয়ে জনসাধারণ চলচলে আমরা কখনও বাঁধা দেয়নি। এটি আমাদের বাড়ির নিজস্ব রাস্তা অহরহ যানবাহন চলাচল করলে আমাদের সমস্য হয় তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাড়ির উপর দিয়ে যানবাহন চলচলে নিষেধ করেছি।

দয়ামীর ইউপি চেয়ারম্যান তাজ মো: ফখর উদ্দিন বলেন, রাস্তাটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়ায় গত বছর আমরা তা আপোষে নিস্পত্তির চেষ্ঠা চালিয়ে ব্যার্থ হয়েছি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এস আই নিখিল চন্দ দাস বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাস্তা বন্ধের সত্যতা পাওয়ায় এব্যাপারে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক বলেন, রাস্তায় জনসাধারণ চলাচলে বাঁধা প্রদান বেইনী। এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি প্রাচীন এই রাস্তা দিয়ে যাতে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ