দোয়ারাবাজারে এক বাজারের পাঁচ নামে ট্রেড লাইসেন্স!

প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২০

দোয়ারাবাজারে এক বাজারের পাঁচ নামে ট্রেড লাইসেন্স!

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ বাজারের নামকরণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন পক্ষের। এসব পক্ষ নিজেদের দাবি জোরালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কয়েক বার মুখোমুখিও হয়েছেন। সভা সমাবেশ, মিটিং-মিছিল কোনোটির কমতি হয়নি। উভয় পক্ষ-ই নিজের দাবির পক্ষে সোচ্চার। নামের এই রেষারেষির কারণে বাইরের এলাকার অপরিচিত লোকজন নাম সংক্রান্ত বিরোধপূর্ণ এই বাজারে এসে শিকার হয়েছেন হেনস্তার। বাজারের নামকরণ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসন সবাই বিপাকে। আদালত থেকে শুরু করে হাইকোর্টেও গড়িয়েছে নামের বিরোধ। কিন্তু বাজারের নামের এই রেশারেশি এখনোব্দি শেষ হয়নি। বিরোধপূর্ণ এই বাজারটির অবস্থান সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে। সর্বশেষ জেলা প্রশাসন কর্তৃক জারিকৃত এক নির্দেশনা অনুযায়ী বাজারটির নাম ‘শ্রীপুর বাজার পান্ডারগাঁও’। উপজেলার প্রাচীনতম বাজার এটি। ১৯৭২ সালে বাজারটির গোড়াপত্তন। শুধু নামের বিরোধে কারণে প্রাচীনতম বৃহৎ এই বাজারটির কোনো পরিচালনা কমিটি কিংবা ব্যবসায়ী সমিতি হয়নি আজোবধি। ছোট্ট বড় সবমিলিয়ে প্রায় চার শতাধিক ব্যবসায়ী অধ্যুষিত এই বাজারটির উন্নয়ন কাজ থমকে আছে নামের ঝামেলায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের একেক অংশের দোকানের সাইনবোর্ডে একেক নাম। বাজারের দক্ষিণ অংশে জোরালোভাবে শ্রীপুর বাজার তার বিপরীতে উত্তর অংশে জোরালোভাবে রয়েছে পান্ডারগাঁও নতুন বাজার নামের ব্যবহার। মতবিরোধের কারণে বাজারের কাউকে জিজ্ঞেস করেও সুনির্দিষ্ট ভাবে এই বাজারের নামের উত্তর পাওয়া যায়না। একেক জন বলছেন একেক নাম। একেক দোকানের সাইনবোর্ডেও একেক নাম দেখা গেছে। অনুসন্ধানে বাজারটির পাঁচটি নামে ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেডলাইসেন্স মিলেছে। নতুন বাজার, পান্ডারগাঁও বাজার, পান্ডারগাঁও নতুন বাজার, শ্রীপুর বাজার, শ্রীপুর নতুন বাজার এই পাঁচ নামে রয়েছে শুধু এই এক বাজারের ট্রেড লাইসেন্স! জানা যায়, কাগজে পত্রে না থাকলেও শুরুর দিকে লোকমুখে কখনো পান্ডারগাঁও নতুন বাজার আবার কখনো শ্রীপুর বাজার নামে বাজারটির নামের প্রচলন হয়ে আসছিল। বাজারের নামকরণের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে ১৯৮৮ সালের দিকে। ওই সময় থেকে সরকারি ভাবে এই বাজারের নিলাম শুরু হয় ‘শ্রীপুর বাজার’ নামে। এরপর থেকে এখনোব্দি সরকারি কাগজপত্রে এই নামেই বাজারের নাম ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই সময়েই সাবেক ইউপি সদস্য আমির মেম্বার নামে এক ব্যক্তি এ বাজারের নামকরণ নিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সুদীর্ঘ কয়েক বছর মামলা পরিচালনা করেও কোনো নিষ্পত্তি না হওয়ায় তিনি হাইকোর্টে একটি রিট করেন। হাইকোর্ট এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসনকে তিনমাসের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে ২০১১ সালে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ‘শ্রীপুর বাজার পান্ডারগাঁও’ নামে বাজারের নাম ব্যবহার করার জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের এই নির্দেশনা শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সে-ই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর বাইরে আর কোথাও এখনোব্দি কার্যকর হতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের নির্দেশনা তোয়াক্কা করে বাজারের ইজারা দেওয়া হচ্ছে শ্রীপুর বাজার নামে। সরকারি গেজেটেও ‘শ্রীপুর বাজার’ নামটি রয়ে গেছে। এদিকে জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দোয়ারাবাজার, এসিল্যান্ড ও তহশীলদারকে আসামী করে ২০১৯ সালে ‘পান্ডারগাঁও নতুন বাজার’ নামের সমর্থকরা বাদী হয়ে পুনরায় আরেকটি মামলা দায়ের করে জজকোর্টে। যা এখনো চলমান রয়েছে। বাজারের নামের বিরোধ যেন কোনো ভাবেই থামছেনা। নাম সংক্রান্ত এই জটিলতা দ্রুত স্থায়ী ভাবে নিরসন করা হোক এমনটাই দাবি এলাকার সাধারণ মানুষদের। বাজারের মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল হোসেন জানান, নাম সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বাজারের মসজিদে নাম সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড কিংবা নামফলক নেই। তবে মসজিদের সরকারি কাজের বরাদ্দ আসে শ্রীপুর বাজার নামে। অফিসিয়াল নির্দেশনা ও কাজ এই নামেই হয়। নামের সমস্যার কারণে আমরা বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন কাজ থেকে বঞ্চিত। বিষয়টি দ্রুত স্থায়ীভাবে নিষ্পত্তির দাবি জানাই। পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ জানান, জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক বাজারের ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি ‘শ্রীপুর বাজার পান্ডারগাঁও’ নামে। মোবাইল যোগাযোগ করা হলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, এবিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি আমি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।