স্পোর্টস ডেস্ক

ক্রিকেট পিচে রানের মতো একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দেশে ফিরেই তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। এবারের বির্তকতা নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতেও ছড়িয়েছে।

কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের এক ব্যক্তির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কলকাতায় কালীপূজায় যোগ দেন সাকিব, যা নিয়ে চলা বির্তক এখনও পিছু ছাড়ছে না তার।

এমনকি এই কারণে ফেসবুকে হত্যার হুমকিও পেয়েছেন। এরপর লাইভে এসে কলকাতায় যাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চান।

এরপর ভারতের নানা হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীও তাকে নিয়ে বির্তকে মেতে ওঠে।

এসব বিতর্কের মধ্যেই অনেকেই কৌতূহলী হয়েছেন, কে বা কারা সাকিবকে কলকাতায় সেই কালীপূজার অনুষ্ঠানে নিয়ে গেলেন?

গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, পরেশ পাল নামের এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাকিবকে কলকাতায় ওই পূজার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের একজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা অঞ্চলের বিধায়ক তিনি।পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকার সেই পূজামণ্ডপের আয়োজক তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হলেও পরেশ পালের জন্ম বাংলাদেশে। সেই সূত্রে বাংলাদেশে তার আনাগোনা বেশি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জয়ন্ত চৌধুরী নামে কলকাতার এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বিবিসিকে জানান, পরেশ পালের আদি নিবাস বাংলাদেশেই। জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশি। তার পৈত্রিক ভিটা বরিশালে। তার মামার বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। ভারত ভাগের এক বছর আগে পরেশের জন্ম হয়। তাকে নিয়ে তার পরিবার উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে চলে আসেন। তখন থেকে পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় সপরিবারে বসবাস করছেন পরেশ। এখানেই বেড়ে উঠেছেন।

জয়ন্ত চৌধুরী আরও জানান, ‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস করলেও বামপন্থী দল আরএসপির সঙ্গে সখ্য রয়েছে পরেশ পালের। দলটির নেতা মাখন পালকে নিজের বাবার মতো মনে করেন পরেশদা।’

কলকাতায় পরেশ পাল ইলিশ উৎসব, গণবিবাহ আর সুভাষ মেলা চালু করেছেন বলে জানান জয়ন্ত চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘ভারতে চলে আসার পথে পরেশদার এক বোন হারিয়ে যান। সেই দুঃখ তিনি কোনদিন ভুলতে পারেন নি। সেজন্য অসহায়, দুস্থ মেয়েদের সাহায্য করার জন্য কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে নিজ এলাকায় গণ-বিবাহের আয়োজন করেন পরেশ দা। গত এক মাস ধরে সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে সুভাষ মেলার আয়োজন করছেন তিনি।’

তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় বিবিসিকে বলেন, ‘গত ১০-১২ বছর ধরে কলকাতায় ইলিশ উৎসব শুরু করেছেন পরেশ। এছাড়াও বড় করে কালীপূজার আয়োজন করছে সে।’

আর সব বছর যাই করুক, এবার কালীপূজায় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছেন পরেশ পাল।

আর সবাইকে রেখে বাংলাদেশের সাকিবকে কেন? এমন প্রশ্নও করা হয়েছে তাকে।

এ প্রসঙ্গে পরেশ পাল বিবিসেকে বলেন, ‘আমি তো কোরবানির ঈদের আগে বাংলাদেশে গেলে জবাই করার গরু কিনতে মুসলমান বন্ধুদের নিয়ে গরুর হাটে যাই। এ আর নতুন কথা কী! আর বাংলাদেশে যেতে আমার দাওয়াত লাগবে নাকি, ওটা তো আমার জন্মভিটা। আমাদের আদি বাড়ি ছিল বরিশাল, আর জন্মেছি মামার বাড়ি বাগেরহাটে।’

এরপর তিনি বলেন, ‘আমি ওই সব হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ বুঝি না, মানি না। হাতের আঙুল কাটলে সবারই তো লাল রক্ত বের হবে।’

সাকিবকে নিয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে পরেশ পাল বলেন, ‘ওই পূজার উদ্বোধন আসলে করেছিলেন এক হিন্দু সন্ন্যাসী, সাকিব নন। সাকিব শুধু একটি প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন। সেদিন পূজা উদ্বোধনের দিন তো কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও ছিলেন। হাকিম প্রতি বছরই আমার পূজার উদ্বোধনে থাকেন।’

কিন্তু এবার হঠাৎ সাকিব আল হাসানকে নিমন্ত্রণের কারণ জানতে চাইলে পরেশ পাল জানান, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচয়। তার নির্বাচনী এলাকাতে একটা বড়সংখ্যক মুসলমান থাকেন, যারা তাকে বছরের পর বছর ভোট দিয়ে আসছেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই সাকিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি।

তিনি জানান, তার মাথাতেই আসেনি যে সাকিবকে কালীপূজার উদ্বোধনের মঞ্চে আমন্ত্রণ করে তিনি কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারেন।