জমি বিক্রি ও কিস্তির টাকায় ক্রয় করা নাম্বার বিহীন সিএনজি চালকরা বড় অসহায়

প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২০

জমি বিক্রি ও কিস্তির টাকায় ক্রয় করা নাম্বার বিহীন সিএনজি চালকরা বড় অসহায়

 

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধিঃ
সিলেট জেলা অটোরিকশা সিএনজি চালিত শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং চট্র-৭০৭অন্তর্ভুক্ত আমম্বখানা- সালুটিকর শাখার আওতাধীন সালুটিকর ও কোম্পানীগঞ্জ সড়কের অনটেস সিএনজি গাড়ির ড্রাইভাররা বড় অসহায় মানবেতর দিন পার করছেন। ড্রাইভারদের মুখের দিকে তাকালেই ভেসে উঠে অসহায়তার করুন চাপ। প্রতিটা স্টেশনগুলোতে যাত্রীর চাইতে গাড়ির সংখ্যা বেশি। ভোরের শিশির ভেজা সকালে লোকজন যখন কাঁথা মুড়ি দিয়ে আয়েশে ঝিমুচ্ছেন, ড্রাইভাররা তখন স্টেশনগুলোতে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার দিক দিয়ে চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে থাকেন যাত্রীর আশায়। তাদের গাড়ির হর্ন কোলাহল আর কলরবে ভাঙ্গে চায়ের স্টল মালিকদের ঘুম। ২/১ জন যাত্রী আসলেই আউক্কা ভাই বউকা আরও একজন হলেই ছাড়ি দেবো। অন্যজন বলছেন তোমার সিরিয়াল নায় আমার এ নিয়েও অভাবের সংসার এর মতন লেগে থাকে নিত্যদিনের ঝগড়াঝাঁটি। প্রখর রৌদ্র উত্তপ্ত দুপুরে অনেক সিএনজি চালককে অলস সময় সিএনজিতে ঘুমিয়ে থাকতেও দেখা যায়।
কয়েকজন ডাইভারের সাথে আলাপকালে জানা যায় নাম্বার বিহীন বলেন আর নাম্বার ওয়ালা গাড়ি বলেন সবারই এক অবস্থা তবে বর্তমান সময়ে সরকার নাম্বার না দেওয়ার কারণে বেশিরভাগ গাড়ি-ই নামবার বিহীন। বৈশ্বিক করোনায় বন্ধ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বন্ধ পাথর কোয়ারি, কর্মসংস্থান আর আয়ের কোন ব্যবস্থা না থাকায় সংকুচিত ব্যবসায়ীরাও বিধায় প্রায় সব জায়গাতেই লোকসমাগম খুবই নগণ্য। ফলে গাড়ির ড্রাইভার আর মালিকগণ বড় বিপর্যয় আছেন। বেশিরভাগ ড্রাইভার ও মালিকগণ বেশি টাকা দিয়ে বিদেশ পাড়ি না দিয়ে, জমি বিক্রয় করে কিস্তির মাধ্যমে কিনেছেন গাড়ি। পরিবার পরিজন নিয়ে একটু সচ্ছল ভাবে চলতে নিয়েছেন জীবনের ঝুঁকি, বাস্তবে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা গাড়ির ইনকাম গ্যাস বিল কিস্তির টাকা পরিশোধ করাই হচ্ছে দুঃসাধ্য ব্যাপার। চার লক্ষ টাকার গাড়ী এক লক্ষ টাকা ডাউনপেমেন্ট এর মাধ্যমে ৬ লক্ষ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মাসে কিস্তি দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। এরপরও গাড়ির যাবতীয় কাম কাজ সব মিলিয়ে মহাসংকটে আছেন গাড়ির ড্রাইভার ও মালিকগণ। মাস শেষে চোখে দেখেন জোনাপোকা।কয়েকজন সিএনজি চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, আমরা জমি বিক্রি করে স্থানীয় ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি আবার অনেকেই অন্যের গাড়ি দৈনিক ৪০০/৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছি । আগে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যে পরিমান টাকা আমদের খরচ বাদে থাকতো বর্তমানে তার অর্ধেকও পাই না গাড়ি বেশি হবার কারণে।কয়েকজন ডাইভার বলেন আমাদের মাঝে ঐক্য আর সংগঠিত হওয়ার বড়ই অভাব।তারা বলেন এর মূল কারণ হচ্ছে আমরা যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে পারিনা। শ্রমিক বান্ধব নেতা তৈরি করতে আমরা ভুল করি হঠাৎ করে উদয় হওয়া ব্যক্তির পিছনে দৌড়াই, মূলদ্বারার শ্রমিক থেকে নেতা তৈরি হয় না ফলে আমাদের দুঃখ দুর্দশা লাঘব হয় না, এ নিয়ে তাদের অভাব অভিযোগের অন্ত নেই, তারা আরো বলেন যাদেরকে আমরা শ্রমিকনেতা বানাই তারা আমাদের বিপদে আপদে সাহায্য করা দূরের কথা আমাদের পকেট কিভাবে খালি করা যায় সেই চিন্তায় তারা বিভোর থাকেন। তারা আমাদেরকে সেবা না দিয়ে কর্তিত্ব খাটান বেশি। প্রতিটা চালকের আপদকালীন বিপদ কালীন মৃত্যুকালীন অনেক সুযোগ সুবিধা শুধু সংবিধানের রেজুলেশন খাতাই লিপিবদ্ধ আছে বাস্তবে তার সুফল কোন ড্রাইভার পায় না। তারা আরো বলেন বর্তমান সময়ের মত এত দুঃখ কষ্ট আর বিপর্যয়ে কখনো পড়ি নাই, আমাদের সামনে এমন দিন অপেক্ষা করছে আমরা কখনও কল্পনা করিনি। তারা বলেন গাড়ির মালিকগন যখন মালিকানা হারাতে বসেছে ঠিক সময়ে ট্রাফিক পুলিশ সপ্তাহ আমাদের মরার উপর খরার ঘা দিচ্ছে। নাম্বার বিহীন অনেক গাড়ির ড্রাইভাররা যাত্রী নিয়ে সিলেট যাতায়াত করতে পারছে না, বসে বসে খাচ্ছে। মহামারী করোণায় বেছে নিতে পারছে না কর্মসংস্থানের অন্য কোন পথ। সব মিলিয়ে গাড়ি-বাড়ি এমনকি ভিটেমাটি হারানোর উপক্রম হয়েছে।বিশেষ করে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার কয়েক হাজার অসহায় শ্রমিক কোথাও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে পরিবার পরিজনদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে অবশেষে তাদের সহায় সম্বল টুকু হারিয়ে নাম্বার বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ক্রয়করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। বর্তমানে নাম্বার বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচলে প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় এই সকল শ্রমিকেরা রাস্তায় বেরোতে পারছেননা। ফলে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ওইসব শ্রমিকদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ)র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম্বার বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা গুলোকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া সময়ের দাবি ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ