শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার আগে পদত্যাগ করেননি: সজীব ওয়াজেদ

প্রকাশিত: ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২৪

শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার আগে পদত্যাগ করেননি: সজীব ওয়াজেদ

সজীব ওয়াজেদ জয়ফাইল ছবি

 

শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার আগে পদত্যাগ করেননি: সজীব ওয়াজেদ

অনলাইন ডেস্ক

 

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা বলেন। তিনি শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ছিলেন।

ওয়াশিংটন থেকে রয়টার্সকে সজীব ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই পদত্যাগ করেননি। তিনি সময় পাননি। তিনি একটি বক্তব্য দেওয়া ও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। তাই সময় ছিল না। আমার মা নিজের ব্যাগ পর্যন্ত গোছাতে পারেননি। সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’

 

জয় আরও বলেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানান জয়। তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যে এই নির্বাচন হতে হবে।

সজীব ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। যদি তা না হয়, আমরা বিরোধী দল হব। দুটির যে কোনোটিই ভালো।’

 

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে উৎসাহব্যঞ্জক বলেছেন জয়। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে অতীতকে না টানার কথা বলেছেন। এটা শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আসুন, আমরা অতীতকে ভুলে যাই। প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করি। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি—তা (জাতীয়) ঐক্য সরকার হোক, বা অন্য কিছু হোক।’

সজীব ওয়াজেদ বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে তিনি (জয়) বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলেন। সামনে এগিয়ে যেতে তিনি তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কাজ করতে চান। তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি ও সমঝোতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে অসম্মত হওয়ার বিষয়ে একমত হতে পারি। আমরা সব সময় সমঝোতার পথ খুঁজতে পারি।’

 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘এই মেয়াদের পর আমার মা যেভাবেই হোক অবসর নিতে চেয়েছিলেন। দল যদি আমাকে চায়, হয়তো রাজি হব। বিষয়টি আমি নিশ্চিতভাবে বিবেচনা করব।’

জয় বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী দেশে শেখ হাসিনা বিচারের মুখোমুখি হতে রাজি ছিলেন। আটক করার হুমকি আমার মাকে কখনো বিচলিত করেনি। আমার মা কোনো ভুল করেননি। তাঁর সরকারের কর্মকর্তাদের অবৈধ কাজের অর্থ এই নয় যে এসব করতে আমার মা নির্দেশ দিয়েছিলেন, এর অর্থ এই নয় যে এসবের জন্য আমার মা দায়ী।’

বিক্ষোভ চলার সময় মানুষকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য সরকারের মধ্যে কে দায়ী, তা অবশ্য বলেননি জয়। তিনি বলেন, ‘সরকার অনেক বড় কার্যক্রম। যারা দায়ী তাদের অবশ্য বিচারের আওতায় আনা হবে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করতে আমার মা একেবারেই কাউকে কোনো নির্দেশ দেননি। পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিলেন।’

জয় আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার এবং আমি এসব আলোচনার অংশ হয়েছিলাম। আমি মাকে বলেছিলাম, আমাদের দ্রুত (আমাদের ছাত্র শাখাকে) হামলা না চালাতে, সহিংসতা বন্ধ করতে বলা দরকার। আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছি। আমাদের পক্ষে যা সম্ভব ছিল, আমরা সব করেছিলাম।’

জয় বলেন, যখন ইচ্ছা হবে, তিনি তখন দেশে ফিরবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো অবৈধ কিছু করিনি। সুতরাং (দেশে ফিরতে) কে কীভাবে আমাকে বাধা দেবে? রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। কেউ আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। আমাদের সহায়তা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না।’

গত বুধবার ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার একদিন আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তা তখন ঘোষণা করা হয়নি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এক দিন আগে৷ আমরা কয়েকজন শুধুমাত্র জানতাম যে তিনি ঘোষণা দেবেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী যাতে একটি ট্রানজিশন অব পাওয়ার হয়, সেটাই ছিল ওনার প্ল্যান৷ তবে যখন তারা ওই গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করল, তখন আমরা ভয়ে বললাম যে আর সময় নেই, তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে।’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বর্তমানে তাঁর রাজনীতিতে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই।’

পরদিন বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তবে সক্রিয় রাজনীতিক হিসেবে ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।’

 

গত সোমবার বিবিসি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের পরও কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তিনি (শেখ হাসিনা) এতটাই হতাশ৷’ ওই দিনের সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, গত রোববার থেকেই তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন৷

সোমবার বিবিসিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে কঠোরভাবে বিক্ষোভ দমনের অভিযোগ অস্বীকার করেন জয়। তিনি বলেন, ‘গতকাল (৪ আগস্ট) ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ কাজেই উচ্ছৃঙ্খল জনতা যখন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে তখন পুলিশ কী করবে বলে আপনি প্রত্যাশা করেন? ’

এর আগে বুধবার শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়া প্রসঙ্গে এনডিটিভিকে জয় জানিয়েছিলেন, তাঁর (শেখ হাসিনা) আশ্রয় চাওয়ার খবর সঠিক নয়। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করেননি। শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়েছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।’

 

এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলন, বিক্ষোভ, সংঘাত ও সহিংসতার মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা। এত দিন পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গিয়েছিল।

প্রথম আলো

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
      1
16171819202122
23242526272829
30      
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ