রবীন্দ্রসনেট ও দুই অধ্যাপকের সংবর্ধনা প্রদান

প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২৪

রবীন্দ্রসনেট ও দুই অধ্যাপকের সংবর্ধনা প্রদান

রবীন্দ্রসনেট ও দুই অধ্যাপকের সংবর্ধনা প্রদান

অহী আলম রেজা

সিলেটের শিক্ষাবিদ, লেখক- গবেষক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ সম্পাদিত রবীন্দ্রসনেট বিষয়ে আলোচনা, আড্ডা ও কৃতী শিক্ষক নিলুফার খানম ও সুনীল ইন্দ্রু অধিকারীর অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হওয়ায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে তাহের- খালেদা সাহিত্যসভার আয়োজনে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সিলটের প্রবীণ শিক্ষাবিদ নন্দলাল শর্মার সভাপতিত্বে ও মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, আমরা বহু জায়গায় অবস্থান করলেও একই ঘরের বাসিন্দা। আজ তাহের- খালেদা সাহিত্যসভা আমাদের একত্রিত হওয়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা কয়েকটি বিষয়কে এখানে একত্রিত করার চেষ্টা করেছি। রবীন্দ্রসনেটকে সামনে রেখে রবীন্দ্রনাথকে আমরা জানার সুযোগ পাবো। এ ছাড়া দুজন প্রতিথযশা শিক্ষক পদোন্নতি পেয়েছেন তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর একটা সুযোগ রয়েছে।

মুখ্য আলোচক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জফির উদ্দিন বলেন, আমরা চারবন্ধু- সেতু, অনুপা, জলিল, নিলুফা রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলাম। বলা যায়- রবীন্দ্রনাথের সাথে আমাদের ৩৫ বছরের সম্পর্ক। চারজনই শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। নিলুফা এখন জনপ্রিয় শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা যখন শিক্ষকের গুনগান করে তখন বুঝতে হয় শিক্ষকতার ব্রত নিয়ে আছেন । নিলুর এমন কোনো ছাত্র নাই যে তার প্রশংসা করে না।

সুনীলদা আমার বন্ধুর মতো। একসাথে কাজ করেছি। তিনিও শিক্ষার্থী বান্ধব। দুজন অধ্যাপক হয়েছেন। অধ্যাপক মানে দিব্যজ্ঞানের ব্যাপার। খুব কঠিন পদ। আশাকরি তারা এ পদের মর্যাদা ধারণ করবেন। ক্লাসেই নয়, সমাজ বিনির্মানে এ পদকে কাজে লাগাবেন।

ড. জফির সেতু বলেন, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আমাদের উদ্ধারের পথ নেই। তাঁর গান, কবিতা বাণীর মতো আমাদের প্রতিদিনের পাথেয়। পের্ত্রাক থেকে শুরু হয়ে মাইকেল মধুসূদন হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সনেটের অনেক প্যাটার্ন পরিবর্তন করেছেন। ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ রবীন্দ্রনাথেন সনেট নিয়ে যে কাজটি করেছেন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিডিং ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মোস্তাক আহমদ দীন বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের আঁধার রাতের অগ্রপ্রতিক। সমস্যায় পড়লেই আমরা রবীন্দ্রনাথে আশ্রয় নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়েও যখন প্রশ্ন তোলা হয় তখন আমাদের আর কি করার থাকে?
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু বলার আগে তাঁর প্রবন্ধগুলো পড়া উচিৎ।

সংবর্ধিত অতিথি অধ্যাপক সুনীল ইন্দ্রু অধিকারী বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে সিলেটে আছি। সবার সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গেছি – মনে হয় যেন আমি সবার স্বজন, আপনজন। আজকের আয়োজনে নেপথ্যে ছিলেন তাহের ভাই। এতো আন্তরিক মানুষ জীবনে আমি কম দেখেছি। এবার আমেরিকা থেকে এসে আমার জন্য কলম নিয়ে গেলেন। এ ভালোবাসার আসলে কোনো মূল্য হয় না।

অধ্যাপক নিলুফার খানম বলেন, আমি শিক্ষকই হতে চেয়েছিলাম। শিক্ষকতা আমার নেশা, পেশা বা ব্রত। শিক্ষক হিসেবে কখনো ফাঁকি দেইনি। অধ্যাপক হয়ে কিছু একটা হয়ে গেছি- ‘আমি মনে করি না।’ আমি আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনই আছি।
তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে যেন সমাজে বিচরণ করতে পারি- এই কামনাই করি।

নর্থিস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, বিশিষ্ট সাংবাদিক লিয়াকত শাহ ফরিদী বলেন, আড্ডায় আমরা প্রাণ পাই, নিজেদের শাণিত করার একটা সুযোগ থাকে । তাহের খালেদা সাহিত্যসভা এ সুযোগ করে দেওয়ায় ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন গণমাধ্যমে কাজ করেছি, সাহিত্যে আমার অনেক কিছু দেওয়ার ছিল, না দেওয়ার একটা আফসোস আছে। তবে, আড্ডায়, সাহিত্যসেবায় অগ্রভাগেই আছি।

এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আব্দুল হামিদ সেলিম বলেন, রবীন্দ্রনাথ অসীম- তাকে নিয়ে এই কম সময়ে বলা যাবে না। ফাত্তাহ ভাইকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, আজ যার কথা বার বার আসছে, জনাব আবু তাহের, তিনি আমার বড় ভাই। অত্যন্ত উদার মনের মানুষ, নিজের জন্য কিছু ভাবেন না। পুরো পরিবারকে টেনে তুলেছেন। তাঁর পড়াশোনার নেশা অন্যরকম। আমি এখনো নিজের কাপড় কিনি না, তিনিই কিনে দেন। মাছ ধরার বেশ শখ। আমি ছিলাম তাঁর মাছ ধরার সঙ্গী।

সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক অনুপা নাহার ওয়ালেদা বলেন, আমরা মনে করি রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা বিদগ্ধজনের কাজ। এ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রবীন্দ্রনাথকে সহজ করতে হবে। সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি অধ্যাপক সুনীল ইন্দ্রু অধিকারী ও নিলুফার খানমকে অভিনন্দন জানান।

মাহমুদ উস সামাদ ফারজানা চৌধুরী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের আশ্রয়। তাঁর সনেট নিয়ে ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ অসামান্য কাজ করেছেন। তবে, এ জাতিকে তিনি আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন।
তিনি বলেন, সুনীল ইন্দ্রু অধিকারী অতি আপনজন, নিলুফা আমাদের বন্ধু- তারা সগৌরবে পদায়িত হয়েছেন- তাদের অভিনন্দন জানাই।

নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ বলেন, এ ধরনের আড্ডা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ৭২/৭৩ আসলে আরো বেশি আড্ডা হতো, কবিতার আড্ডা, গানের আড্ডা, চিন্তার আড্ডা।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে, জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক হবে কেন? আমাদের প্রতিবাদ করা উচিৎ।
কবি, প্রকৌশলী বীরেন পাল বলেন, ড. ফাত্তাহ রবীন্দ্রনাথের সনেট নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছেন। সাহিত্যের মানুষের জন্য এটা বেশ উপকারী হবে। তিনি পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান।

এমসি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল উদ্দিন বলেন, আমরা আলোর দিকে যাচ্ছি। এ ধরনের আড্ডা, আলোচনা আমাদের সৃষ্টিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে। তিনি পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান।

রাগিব রাবেয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক খালেদ উদ দীন বলেন, সুনীল স্যারের সাথে দিনে আমরা ক্লাস করতাম রাতে আড্ডা দিতাম। ছাত্রদের কাছে টানতেন তিনি।

আফা ( আপা) বলতে যে ফ্রেম চলে আসে তিনি নিলুফার খানম। যিনি একদিন বলেছিলেন, কবিতা না পড়ে ঘুমুতে যাই না। দু জনের মঙ্গল কামনা করি।