৭ই নভেম্বরের তাৎপর্য এবং শহীদ জিয়া

প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৪

৭ই নভেম্বরের তাৎপর্য এবং শহীদ জিয়া

৭ই নভেম্বরের তাৎপর্য এবং শহীদ জিয়া

॥ আব্দুর রউফ ॥

 

সময়টা ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের লাল সবুজের বাংলাদেশের স্বাধীনতার আকাশে জমেছিল কালো মেঘের ঘনঘটা। বাকশালী অপশাসনে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব তখন হুমকীর মুখে। জাতির এমন ক্রান্তিলগ্নে দ্বিধাবিভক্ত জাতি খুজেঁ পায় মুক্তির মূলমন্ত্র। সংঘটিত হয় সিপাহী ও জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। জাতির অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকায় আবির্ভুত হন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এর ফলে সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়, দেশ মা ও মাটি রক্ষা পায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পর দেশের অভ্যন্তরে অস্তিরতা তৈরী হয়। ৩ নভেম্বর গভীর রাতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দুসর রা মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে। এমন খবরে শুধু সেনাবাহিনী নয়, দেশের আপামর জনতার মাঝে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশজুড়ে শুরু হয় কানাঘুষা। বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে জনতা। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক কর্মকর্তারা ক্যান্টনমেন্টের দখল নেয়। আর দেশপ্রেমিক জনতা দখলে নেয় রাজপথ। জাতি রক্ষা পায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে। পাল্টে যায় ইতিহাসের গতিপথ। জনতার মাঝে ফিরে আসেন জনতার জিয়া। জাতিকে দেখান সত্য ও সাহসের পথ। নিজেকে তুলে ধরেন অনন্য উচ্চতায়।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মহানায়ক শহীদ জিয়াকে দেশের শাসনভারের দায়িত্ব প্রদান করেন দেশপ্রেমিক জনতা। সাংবিধানিক সংকট থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মধ্য রাতে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত হন জিয়া। সেক্টর কমান্ডারের মতো গুরুদায়িত্ব পালন করে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে বীরত্বের সাথে সংগ্রাম করেন। বিশে^র বুকে লাল সবুজের বাংলাদেশের মানচিত্রকে স্বাধীন দেশ হিসেবে তুলে ধরেন। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়। ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর আবার নিজেকে তুলে ধরেন জাতির অভিভাবক হিসেবে। বাকশালী শাসনে বিধ্বস্ত গণতন্ত্রে তিনি নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন। প্রতিষ্ঠা করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র। ফিরিয়ে দেন সংবাদের স্বাধীনতা। দেশে প্রতিষ্ঠা করেন আইনের শাসন। কৃষি নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশকে কৃষিতে সমৃদ্ধ করতে উদ্যোগী হন। শুরু করেন খাল খনন কর্মসূচী। দেশ ও জাতি গঠনে প্রণয়ন করেন ১৯দফা। লক্ষ্য ছিল একটাই স্বপ্নের সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
প্রেসিডেন্ট জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠাসহ নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদ্দীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে এক মর্যাদাবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন, লুটপাটের পর সিপাহী-জনতার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসে স্বল্পসময়ের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিলেন।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তিনি ‘শহীদ জিয়া’ বলেই পরিচিত। সেদিন জিয়াউর রহমানের আকস্মিক শাহাদাতবরণে গোটা জাতি শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এই শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল রাজধানীর শেরেবাংলানগরে তার নামাযে জানাযায়। লাখো মানুষের উপস্থিতি সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয় বহুলাংশে। দীর্ঘ সময় পড়ে শহীদ জিয়ার সহধর্মিনী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে শহীদ জিয়ার মতো দেশে আবার গণতন্ত্র পুনর্বহাল করে। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে দেশে আবারো গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। আজ অবধি দেশে গণতন্ত্র আইসোলেশনে আছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় দেশনেত্রী সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গৃহবন্দী রয়েছেন। দেশের আগামী দিনের কান্ডারী দেশনায়ক তারেক রহমান ষড়যন্ত্রমুলক মামলার ফরমায়েসী রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। ১৯৭৫ সালের মতো আজো দেশের আকাশে আবারো কালো মেঘের ঘনঘটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। জাতিকে এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি দিতে শহীদ জিয়ার পরিবার ও জাতীয়তাবাদী শক্তি এখনো শহীদ জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের বিপ্লবী চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে জিয়ার সৈনিকেরা শহীদ প্রবর্তিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দৃঢ় অঙ্গিকারা বদ্ধ।
লেখক:
আব্দুর রউফ
যুগ্ম আহবায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, সিলেট জেলা শাখা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ