গোয়াইনঘাটে কোয়ারি সচল ও পাথর লুটপাটে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি

প্রকাশিত: ৬:৩৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০২৪

গোয়াইনঘাটে কোয়ারি সচল ও পাথর লুটপাটে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি

গোয়াইনঘাটে কোয়ারি সচল ও পাথর
লুটপাটে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

 

গোয়াইনঘাট উপজেলার কোয়ারির পাথর চুরির সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার, পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়েরকৃত মামলা থেকে নির্দোষ ও নিরিহ শ্রমিকদের অব্যাহতি ও পাথর কোয়ারীতে চাঁদাবাজী বন্ধের দাবি করা হয়েছে। বুধবার ( ৬ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান গোয়াইনঘাট উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মাহবুবুল হকের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন।
মো. ইসমাইল হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি একজন নির্যাতিত মানুষ। আমি পাথর ব্যবসার সাথে জড়িত। বিভিন্ন স্থান থেকে বৈধভাবে পাথর সংগ্রহ ও বিক্রি করাই আমার পেশা। সম্প্রতি বল্লাঘাট জিরো পয়েন্টে বার্কি নৌকা দিয়ে তাদের পাথর চুরির বিষয়টি দেখতে পাই এবং স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিবাদ করি। তার ফলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ৮ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আমার চাচা বাদি হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় গোয়াইনঘাটের ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের লাখেরপাড় আসামপাড়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ৫ ছেলে গিয়াস উদ্দিন, আজির উদ্দিন, নজির উদ্দিন, আলাউদ্দিন, জসিম উদ্দিন ও কামাল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে।কিন্তু পরিতাপের বিষয় মামলা দায়েরের প্রায় একমাস হয়ে গেলেও আজও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অথচতারা প্রকাশ্যে পাথর চুরিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি আজির উদ্দিন জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি। সে সিলেট জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনের ভাগনা। প্রভাবশালী হওয়ায় জাফলং পাথর কোয়ারিতে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। তারা পাথর চুরি করে উত্তোলন ও বিক্রি করে কালো টাকার পাহাড় গড়ছে।
আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানিয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে পাথর চোরদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার একটি গোয়াইনঘাট থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে যে মামলা দায়ের করেছেন সেই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯২ জনকে। অপর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে সিলেটের পরিবেশ আদালতে। মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ। এ মামলার আসামি ২২ জন। এরমধ্যে আছেন সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন, জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স ও সেলিম জমিদার।
ইসমাইল হোসেন বলেন, গত ২৩ অক্টোবর পাথর কোয়ারি সচলের দাবিতে জাফলংয়ে মানববন্ধন হয়। এই মানববন্ধনে পরিবেশের মামলার আসামিরা তাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। বিশেষ করে সেলিম জমিদার ও আজির উদ্দিন হলেন লুটপাটের মূলহোতা। কিন্তু তাদেরকে পরিবেশের মামলায় আসামি করা হয়নি। যার ফলে রফিকুল ইসলাম শাহপরান, শাহ আলম স্বপন, আমজাদ বক্স, সেলিম জমিদার ও ও আজির উদ্দিন মিলে জাফলং এলাকায় তাদের লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। এদের লুটপাট-চাঁদাবাজি বন্ধ করে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এই চাঁদাবাজ ও লুটপাটকারীরা সরকারি জমি দখল করে পাথরের সাইট ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসার দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এ দুই মামলায় মোট ১১৪ জন আসামির অধিকাংশই দিনমজুর নিরিহ পাথর শ্রমিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মামলার আসামি হওয়ায় তারা অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশায় দিনাতিপাত করছেন। আমি আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিরিহ পাথর শ্রমিকদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের দুটি ও আমার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পাথর পাথরখেকোরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জাফলং পাথর কোয়ারী সচলের দাবিতে মিছিল মিটিং করছে। কিন্তু মামলা দায়েরের আগে ৫ আগস্টের পরেও এরকম কোন দাবি কেউ করেনি। মামলা হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে কোয়ারী খোলার দাবি।
পাথর কোয়ারী খোলার দাবির সাথে আমিও একমত। কারণ আমরা শ্রমিক মানুষ। কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন করে যে আয়- রোজগার হয় তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। তাই পাথর কোয়ারী সচল হলে আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। কিন্তু সেই দাবির সাথে মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছেন তারা। এ দাবির সাথে আমি বা আমার মতো নির্যাতিত পাথর শ্রমিক বা ক্ষুদ্র ব্যবাসয়ীরা মোটেও একমত নয়। বরং আমরা অসহায় নিরিহ শ্রমিকদের অব্যাহতি ও প্রকৃত লুটপাটকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোরালো দাবি জানাই।