আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন দিবসে ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’

প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৪

আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন দিবসে ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’

আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন দিবসে ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’

অনলাইন ডেস্ক

 

কাজির দেউড়ির মুক্ত মঞ্চ। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ভীড়। শীতের সন্ধ্যায় অন্ধকার যতই ঘনিয়ে আসে, দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফুটপাতের পাশে মুক্তমঞ্চেই প্রদর্শিত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে তৈরি ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’ শীর্ষক ভিডিওচিত্র। ভিডিও দেখে কেউ কাঁদছিলেন, কেউবা ছাত্রজনতার ওপর আন্দোলনের দৃশ্য পর্দায় দেখে ¯শ্লোগান দিচ্ছিলেন। বার বার ফিরে যাচ্ছিলেন বিভীষিকাময় দিনগুলোতে।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের কাজির দেউড়ি মুক্তমঞ্চে ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থানের ভিডিওচিত্র প্রদর্শনীর দ্বিতীয় আয়োজন ছিল ‘দ্রোহ-কান্নার জুলাই’। পর্দায় একের পর এক প্রদর্শিত হয় জুলাই-আগস্টের আন্দোলন-সংগ্রামের নানা ভিডিওচিত্র। আবার একটু পর পর আলোচনায় উঠে আসছে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের বর্বরতার কথা। ভিডিওচিত্রে ফুটে উঠেছে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ।

এবারের প্রদর্শনী শুরু হয়- রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের গুলি খাওয়ার দৃশ্য দিয়ে। একের পর এক আন্দোলনের দিনগুলোতে হওয়া ঘটনা প্রবাহ উঠে আসে ভিডিওতে। ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’- স্লোগানের দিনগুলোতে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা।

তারপর দেখা যায়, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হামলার দৃশ্য। উঠে আসে নারী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীর উপর রক্তাক্ত হামলার দৃশ্যগুলো। হামলার পরও শিক্ষার্থীদের বুক উঁচিয়ে দাঁড়ানোর গল্প উঠে আসে প্রদর্শনীতে। যুদ্ধে বিভীষিকা বেজে উঠার মত একে একে আসতে থাকে পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহত হওয়ার ভিডিও। আওয়ামী লীগ-বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের দ্বারা একের পর এক নির্যাতনের দিনগুলো দেখে আঁতকে উঠে সবাই। আন্দোলনের সময়ে সাড়া জাগানো নানা বিদেশী মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোও প্রচার করা হয়। এরপর চালানো হয় বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নির্মিত আন্দোলনের কিছু প্রামাণ্যচিত্র। প্রদর্শনীটি ছিল প্রায় তিনঘণ্টা। এর আগে গত ২২ নভেম্বর নগরের জামাল খানে প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতীক তালুকদার বলেন, এই ভিডিওগুলো দেখতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো এ যেন আমাদের নিজেদেরই গল্প। মনে হচ্ছিলো ফিরে গেছি সেই দুঃসময়ে, যখন আন্দোলনকারীদের জীবন ছিলো অনিশ্চিত।

কলেজ শিক্ষক মামুনুর রহমান বলেন, যে ছেলেমেয়েরা মারা গেছে তারা তো আমাদেরই ছেলেমেয়ে। শিক্ষক হিসেবে সে সময়কার অসহায়ত্ব সারাজীবন আমাকে তাড়া করে বেড়াবে।

ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের পরিচালক সাইদ খান সাগর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান শেষে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি। একদিকে মজলুম ফিলিস্তিনের পক্ষে লড়াই, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লড়াই। তাই স্বৈরাচারের উৎখাত করলেই হবে না, তারা যেন বাংলার মাটিতে আর কখনও শোষণ-জুলুম চালাতে না পারে, তার জন্য জুলাইয়ের স্মৃতিকে আমাদের জাতীয় মানসে ধরে রাখা অপরিহার্য।

তাছাড়া, দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা মোকাবেলা কর‍তে আমাদের আবারও জুলাইয়ের জাতীয় ঐক্যের কাছে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আমাদের মানসে ফিলিস্তিনের কথাও গেঁথে রাখা জরুরি। জুলাই আমাদের জন্য যেমন দ্রোহের, তেমন কান্নার। আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ হবে জুলাইয়ের উপর। তাই দেশজুড়ে জুলাইয়ের গল্প নিয়ে আমরা এই প্রদর্শনী ছড়িয়ে দিব।

প্রদর্শনীতে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল। বক্তব্য রাখেন ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজের সংগঠক আবু নাছের আলিফ, ইসলাম জিশাদ, মাহতামুন ফাহিম, অহনা বড়ুয়া, সাইফুল্লাহ নাদিম প্রমুখ।

বিডি প্রতিদিন