দেশের ৪৩ শতাংশ বাস চলাচলের অনুপযোগী

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪

দেশের ৪৩ শতাংশ বাস চলাচলের অনুপযোগী

দেশের ৪৩ শতাংশ বাস চলাচলের অনুপযোগী
অনলাইন ডেস্ক

 

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক থেকে লক্কড়ঝক্কড় বাসের বোঝা কমানো যাচ্ছে না। সরকারের সব উদ্যোগ একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছে। আগের রাজনৈতিক সরকার নানা কারণে পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে জিম্মিদশা কাটাতে পারছে না।

সড়ক থেকে লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি সরাতে ২০২৩ সালের জুনে বাসের আয়ুষ্কাল বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করার আগেই পরিবহন মালিকদের চাপে ওই বছরের আগস্টে আয়ুষ্কালের প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে সরকার। পাশাপাশি গাড়ির আয়ুষ্কাল পুনর্নির্ধারণে কমিটি করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই কমিটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

অন্তর্বর্তী সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুরনো বাসের জঞ্জাল সরাতে চাইছে। গেল অক্টোবর মাসে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় একটি বৈঠকে বসে। সেখান থেকে ছয় মাসের মধ্যে পুরনো বাস সরাতে মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। উল্টো বাস মালিকদের শর্তের চাপে রয়েছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বিআরটিএর মাধ্যমে বাস মালিকদের নোটিশ দেওয়া শুরু হচ্ছে। এটা ব্যক্তি খাতের বিষয়। চাপ নিয়ে খুব একটা লাভ হবে না।

ওদের (বাস মালিক) বুঝিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সঙ্গেও ওদের একটা লেনদেন আছে। কিন্তু ছয় মাস পর আমরা কিছু টোকেন বাস হলেও সরিয়ে দেব। যেন বাস মালিকরা বুঝতে পারে এটা শুধু কথার কথা না। আবার একসঙ্গে সব বাস সরানো যাবে না। ধাপে ধাপে সব পুরনো বাস সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’

৪৩ শতাংশ বাস চলাচলের অনুপযোগী

বিআরটিএ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত বাস রয়েছে ৫৫ হাজার ৭২১টি। আর নিবন্ধিত মিনিবাসের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৩৩টি। এসব বাসের মধ্যে সব যে সড়কে চলছে তা নয়। কিন্তু কত পরিমাণ বাস নিয়মিত চালাচল করে সেটির সুনির্দিষ্ট তথ্য সংস্থাটির কাছে নেই।

খসড়া আইন মতে, ২০ বছরের পুরনো বাস সড়ক থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া তালিকায় এমন বাসের ৩৫ হাজার ৭৮২টি। অর্থাৎ সারা দেশে মোট নিবন্ধিত বাসের মধ্যে ৪২.৫২ শতাংশ বাস চলাচলের অনুপযোগী। ঢাকায় নিবন্ধন নেওয়া বাসের সংখ্যা ৪২ হাজার ৪৫৪টি। মিনিবাসের সংখ্যা ১০ হাজার ২২৬টি। মোট ৫২ হাজার ৬৮০টি বাস-মিনিবাসের মধ্যে ১৪ হাজার ৬১০টি বাস ২০ বছরের পুরনো। ঢাকা থেকে ৫২ হাজার ৬৮০টি বাস-মিনিবাসের নিবন্ধন নেওয়া হলেও বাস্তবতায় ঢাকায় দিনে গড়ে চার হাজারের বেশি বাস চলাচল করে না। বিআরটিএ সূত্র বলছে, নিবন্ধনের তালিকায় ১৯৭২ সালের বাসও রয়েছে। ফলে তালিকায় থাকা বেশির ভাগ বাস বাস্তবে আর নেই।

রয়েছে সমন্বয়হীনতা

পুরো ঢাকাকে মোট ৪২টি পথে ভাগ করে এক কমপানির অধীনে বাস চালানোর পরিকল্পনা ছিল। নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামবে ও যাত্রী ওঠানামা করবে, পরিবহন শ্রমিকদের জন্য থাকবে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং মাসিক বেতন। ফলে সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমে আসবে। কিন্তু আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। মূলত সমন্বয়হীনতার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সঙ্গে বাস মালিকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাসের আয়ুষ্কাল ২০ বছরই থাকবে। ব্যক্তি পর্যায়ে নতুন বাস কেনার জন্য ঋণের ব্যবস্থার দায়িত্ব ডিটিসিএ নেবে না। তবে কম্পানির অধীনে যদি বাস চলে তাহলে সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণ পেতে ডিটিসিএ সহযোগিতা করবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ট্রান্সসিলভা পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, সমন্বিত উদ্যোগে ঢাকায় ভালো বাস চালানো সম্ভব। আমরাও চাই ভালো বাস চলুক। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হোক।

স্ক্র্যাপ নীতিমালাই চূড়ান্ত হচ্ছে না

২০২৩ সালের মে মাসে ‘মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালা-২০২৩’ নামে একটি খসড়া চূড়ান্ত করে সরকার। এর পর পরই ২০ বছরের পুরনো বাস-মিনিবাস এবং ২৫ বছরের পুরনো পণ্যবাহী যান ধ্বংস করতে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। পরিবহন মালিকদের নানা দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে গাড়ির আয়ুষ্কাল পুনর্নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেন। ৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বিআরটিএ সংস্থাপন শাখা থেকে ওই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার বিষয়টি জানানো হয়। সূত্র: কালের কণ্ঠ