সিলেট ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:৫১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবি
অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা ক্ষেত্রে সামগ্রিক সংকট দূর করতে অবিলম্বে শিক্ষাবিদ, শিক্ষক অভিভাবক ছাত্র সংগঠনসহ অংশীজনদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশ। শুক্রবার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষা ভাবনা, কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই’ শীর্ষক সংলাপে এ দাবি জানানো হয়।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের কেন্দ্রীয় কমিটির স্কুল বিষয়ক সম্পাদক দীপা মজুমদার। প্রবন্ধে বলা হয়, স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার মূলকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রবণতায় আক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কোচিং এবং গাইড ব্যবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি স্কুল-কলেজগুলোকে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে। ছাত্র-শিক্ষকের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ককে বাণিজ্যিক সম্পর্কে রূপান্তরিত করছে। অতীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জ্ঞানচর্চা এবং নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তালার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখতো তা প্রতিনিয়ত কমছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এসবের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে গোটা সমাজে। মাদক- অশ্লীলতা-গ্যাং কালচারে যুক্ত হয়ে অসংখ্য কিশোর-তরুণ বিপথগামী হচ্ছে।
একধারার শিক্ষা পদ্ধতির অনুপস্থিতিতে বহুধারার শিক্ষা পদ্ধতি জাতীয় পরিসরে বৃহত্তর সামাজিক ঐক্য বিনষ্ট করছে উল্লেখ করে বলা হয়, নানা রকম মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে পুরো সমাজ বহুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞান শেখার সামগ্রিক আয়োজন না থাকায় অসংখ্য শিক্ষার্থী বিজ্ঞান শিক্ষা নিলেও তাদের মধ্যে বিজ্ঞান মানসিকতা তৈরি হচ্ছে না। শিক্ষাব্যবস্থা সেক্যুলার না হওয়ায় সাম্প্রদায়িক মনন তৈরি হচ্ছে। শিক্ষানীতি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নসহ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। অসংখ্য ছাত্র জনতা রক্তের বিনিময়ে আমরা গণ অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশ পেয়েছি-এর অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষা একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার।
প্রবন্ধে শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনায় বলা হয়, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষার নীতিগত বিষয় হিসেবে সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার গণতান্ত্রিক একই ধারার শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতি সমূহ সরকার আমলাতান্ত্রিক উপায় গ্রহণ না করে শিক্ষাবিদ-শিক্ষক-অভিভাবক-ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নিয়ে গ্রহণ করবে।
এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপগুলোর সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হয়। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বেসরকারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন ভিত্তিক হওয়াই তা সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে অন্তর্ভুক্তি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো ও জাতীয়করণ, পাঠ্যপুস্তক থেকে অবৈজ্ঞানিক সাম্প্রদায়িক এবং পশ্চাৎপদ ধারণা বাতিল করে পাঠ্যপুস্তকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ চঞ্চলের মানুষের গণতান্ত্রিকের লড়াইয়ের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা, ইংরেজি মাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করা, ২০২১ সালের শিক্ষাক্রম বাতিল হওয়ার পর স্কুলে পাঠদান, নতুন সিলেবাস, পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে-এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুততার সাথে স্কুলগুলোতে পৌঁছে দেওয়া এবং তদারকি বাড়ানো ও সর্বজনীন, বিজ্ঞান ভিত্তিক, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষার পরিপূরক শিক্ষা নীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, স্কুল কলেজগুলোতে অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ বটে পরিচালনা পর্ষদ গঠন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
প্রস্তাবনায় শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বাংলা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিভিন্ন মৌলিক গ্রন্থ সমূহ বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং তার সহজলভ্য করার জন্য জাতীয় অনুবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। সংখ্যালঘু জাতি গোষ্ঠী ও অধিকার বঞ্চিতদের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত এ সন্ত্রাস দখলদারিত্ব মুক্তকরণ, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল, অবিলম্বে ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল চালু, ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্ব ব্যাংকসহ সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রণীত বাণিজ্যিকীকরণ বেসরকারিকরণের নীতি থেকে সরে আসা, বাণিজ্যিক সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো বাতিল, ইউজিসির কৌশল পত্র পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ ও এক্রিডিটেশন কাউন্সিলসহ সকল শিক্ষা বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিন্ন টিউশন ফি নির্ধারণ এবং ১৫ শতাংশ ট্যাক্স আরো বেশি সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ এবং ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের সিনিয়র শিক্ষক শামীম জামান।
বক্তৃতায় শিক্ষাবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, যার শিক্ষার খরচ নাই তার শিক্ষার খরচ সমাজই বহন করবে। সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের রাষ্ট্র বহন করবে। সমস্ত শিক্ষাই সমাজভিত্তিক। শিক্ষার ব্যয়টা সমাজই বহন করে। কিন্তু সেই ব্যয়টা যখন আপনি সামরিক খাতে নিয়ে যান বা আমলা খাতে নিয়ে যান শিক্ষা খাতকে বঞ্চিত করে, সেখানে কিন্তু এক ধরনের অন্যায় হচ্ছে। আসলে আমরা একজনের টাকা দিয়ে আরেকজনকে শিক্ষিত করছি। শিক্ষা তো সবার জন্যই হওয়া উচিত। শিক্ষা যদি একটা অধিকার হয় তাহলে শিক্ষা কত বছর পর্যন্ত অধিকার তা ঠিক করতে হবে।
তিনি বলেন, ১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষা যদি অবৈতনিক না হয় তাহলে শিক্ষা অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে এটা আদৌ বলা যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বিগত সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, ক্লাস নাইনের ইংরেজি বইয়েও রাজনীতি ঢোকানো হয়েছে। প্রতিটা বইয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য, প্রচ্ছদের পিছনে রাজনৈতিক ছবি।
তিনি বলেন, যে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে সে হলো এক্সপোর্ট কোয়ালিটি। সে এখানে পড়ে বিদেশে চলে যায়। যদি সে ফিরেও আসে তাকে দেওয়ার মত চাকরি এ দেশে নাই। এই যে বাংলা মাধ্যম পড়লে একরকম হবে, আলিয়া মাদ্রাসায় পড়লে একরকম হবে, কওমি মাদ্রাসায় পড়লে আরেক রকম হবে। এই যে এদের মধ্যে সামাজিক কোনো বন্ধন হওয়া বা একটা সমাজে বাস করার জন্য একটা মিথস্ক্রিয়া দরকার সেটা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কীভাবে সবচেয়ে বেশিরভাগ মানুষকে সবচেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতি করে আমি পরিবর্তনটা ঘটাতে পারি। সবচাইতে কম ক্ষয়ক্ষতি যেন হয় শিক্ষার্থীদের। শিশু মন খুবই জটিল জিনিস। এটা যদি আপনি খুব দ্রুত বারবার পরিবর্তন করেন, তাহলে এটা কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না।
বিডিপ্রতিদিন
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি