আরজি করের ধর্ষণ-খুনে আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫

আরজি করের ধর্ষণ-খুনে আমৃত্যু কারাদণ্ড

আরজি করের ধর্ষণ-খুনে আমৃত্যু কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক

 

ভারতের কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে (অভয়া, নাম পরিবর্তিত) ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল শিয়ালদহ আদালত। সোমবার দুপুর পৌনে তিনটা নাগাদ সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণা করেন আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অনির্বাণ দাস। সেক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাগারেই থাকতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর পাশাপাশি সঞ্জয়কে ৫০ হাজার রুপি আর্থিক জরিমানাও করা হয়।

বিচারক জানান, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়, তাই এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে না। সেই সাথে কর্তব্যরত অবস্থা অবস্থায় খুন হওয়ার কারণে নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্য সরকারকে ১৭ লাখ রুপি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যদিও আদালতে উপস্থিত অভয়ার বাবা-মা’এর আর্জি ছিল আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না, ক্ষতিপূরণ চাইতে আদালতে আসিনি। আমরা মেয়ের হত্যার ন্যায় বিচার চাই। বিচারক জানান আইনের সংস্থান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সিবিআই’র আইনজীবী আনিসুর রহমান জানান ‘আমাদের তরফ থেকে এবং নির্যাতিতার পরিবারের তরফ থেকে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু মহামান্য বিচারক তা মনে করেননি। পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।’ যদিও নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার পথ খোলা রয়েছে।

এর আগে গত শনিবার ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণ জনিত আঘাতের কারণে মৃত্যু) এবং ১০৩(১) (খুন) ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

এ দিন ২১০ নম্বর কক্ষে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়, তার আইনজীবী এবং সিবিআই আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন বিচারক। সিবিআইয়ের আইনজীবীদের তরফে বলা হয় ‘সমাজ একজন চিকিৎসককে হারিয়েছে। এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ। তাই এই ঘটনায় কঠিন শাস্তি হওয়া দেওয়া হোক। যদিও মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে সঞ্জয়ের আইনজীবীদের দাবি ছিল, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়। তবে নিজের বক্তব্যে এদিনও অনড় থাকেন সঞ্জয়। তার দাবি তিনি নির্দোষ, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তাকে মারধর করা হয়েছে, জোর করে একাধিক কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিচারকের বক্তব্য ধর্ষণকালীন অবস্থায় ওই নারী চিকিৎসককে আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীর লাশ। অভিযোগ ওঠে কর্মরত অবস্থায় ওই নারী শিক্ষার্থীকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে খুন করা হয়।

আদালতের এই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে অভয়া মঞ্চ, চিকিৎসকদের সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের তরফে। তাদের দাবি এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক খুন। সঞ্জয়ের একের পক্ষে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। এর পেছনে এক বা আরো একাধিক ব্যক্তি জড়িয়ে রয়েছে এবং তাদের সকলেই আইনের আওতায় আনা উচিত। এদিন শিয়ালদা হাইকোর্টের সামনে বিভিন্ন মঞ্চের তরফ থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।

জঘন্যতম ওই হত্যাকাণ্ডের পর গোটা ভারত জুড়ে শোরগোল পরে যায়। একদিকে মেয়ের হত্যার সুবিচারের দাবিতে রাজপথে নামেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। অন্যদিকে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয় নাগরিক সমাজ, চিকিৎসক সমাজ। বিচারের দাবিতে অনশনে নেমে বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভারতের সীমানা পেরিয়ে গোটা বিশ্বে এই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। ন্যায় বিচারের দাবিতে রাত দখল, ভোর দখল কোন কিছুই বাদ যায়নি!

বিডি প্রতিদিন