তরমুজের রহস্য: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ভেতর থেকে যেভাবে ভাঙা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫

তরমুজের রহস্য: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ভেতর থেকে যেভাবে ভাঙা হচ্ছে

তরমুজের রহস্য: মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ভেতর থেকে যেভাবে ভাঙা হচ্ছে
অনলাইন ডেস্ক

 

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভিতরে দুটি শক্তি লড়াই করছে। একদল সেনাবাহিনীর নির্দেশ পালন করছে, আরেকদল প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীতে কাজ করলেও গোপনে বিদ্রোহীদের সাহায্য করছে।” সম্প্রতি বিবিসির একটি প্রতিবেদনে এমনই এক তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূতের মতে, জান্তা এখনও প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেসব শহর ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে। তবে, গত ১২ মাসে সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

এই গুপ্তচরদের ‘ওয়াটারমেলন’ বা ‘তরমুজ’ নামকরণ করা হয়েছে। বাহ্যিকভাবে এরা সামরিক বাহিনীর প্রতি অনুগত, কিন্তু গোপনে গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করে, যাদের প্রতীকী রঙ লাল।

মধ্য মিয়ানমারে অবস্থান করা একজন মেজর, জহ (আসল নাম নয়), জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর বর্বরতা তাকে পক্ষ পরিবর্তনের জন্য প্ররোচিত করেছে। তিনি বলেন, “আমি নির্যাতিত বেসামরিক ব্যক্তিদের লাশ দেখেছি। আমি কেঁদেছি।” তিনি আরও বলেন, “ওরা কীভাবে আমাদেরই জনগণের প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারে?”

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আটক এবং হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় সবাই বেসামরিক।

জহ প্রথমে সেনাবাহিনী ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেও, স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে গুপ্তচর হয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গোপনে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ (পিডিএফ)-এর কাছে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সামরিক তথ্য ফাঁস করেন। এসব তথ্য ব্যবহার করে বিদ্রোহীরা অতর্কিত হামলা চালায় বা সামরিক আক্রমণ এড়ায়।

জহের মতো আরও বহু ‘তরমুজ’ গুপ্তচর বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে এমন কিছু অর্জন করতে সাহায্য করেছেন যা একসময় অকল্পনীয় ছিল।

বিবিসির এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের মাত্র ২১ শতাংশ ভূমি সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল, যা তাদের প্রথম নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সর্বনিম্ন। জাতিগত বাহিনী এবং বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত অভিযান সামরিক বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।

‘তরমুজ’ গুপ্তচরদের তথ্য ফাঁস করা বিদ্রোহীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হিসেবে কাজ করছে। এ ধরনের গুপ্তচরদের নিয়োগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

এদিকে, দিভা (গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহী নেতা) জানিয়েছেন, ‘তরমুজ’ গুপ্তচরদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ইউনিট বেশ কয়েকটি সফল হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু এর ফলে ‘তরমুজ’দের জন্য কঠিন সময়ও আসছে। অনেক সময় তাঁরা দ্বৈত জীবন যাপন করেন এবং গুপ্তচর হিসেবে জীবনযাপন করতে গিয়ে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে।

দিভা জানিয়েছেন, “আমরা শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম, আর এখন আমাদের সাফল্যের দিকে তাকিয়ে দেখুন!” তবে এসব গুপ্তচরের জীবনে কখনও কখনও বিপদ চলে আসে। যেমন, মো (নৌবাহিনীর কর্পোরাল) গুপ্তচর হয়ে বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করার সময় সেনাবাহিনীর আক্রমণের শিকার হন, এবং এক সময়ে তাকে নিজেই রক্ষা করতে ‘তরমুজ’ ইউনিটের সাহায্য নিতে হয়।

সামরিক বাহিনী ‘তরমুজ’দের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু জহ জানিয়েছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন যে কোন দিন ধরা পড়বেন। “যতদিন লুকিয়ে থাকতে পারব, ততদিন গুপ্তচর হিসেবে কাজ চালিয়ে যাব,” বলেন তিনি।

উইন অং, একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা, জানিয়েছেন যে ‘তরমুজ’দের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে এবং তাদের সাহায্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের পরিকল্পনা সফল হচ্ছে।

সামরিক বাহিনী আগ্রাসীভাবে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, কিন্তু ‘তরমুজ’দের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বিদ্রোহীরা প্রতিরোধ গঠন করতে সক্ষম হচ্ছে।

এদিকে, জান্তা শাসকরা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন, “নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে জান্তার নৃশংসতাও বেড়ে চলেছে।”

এখনো পরিস্থিতি তীব্র হয়ে উঠেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

সোর্স: বিবিসি

বিডি প্রতিদিন