কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ার ‘কালোঝুঁটি বুলবুল’

প্রকাশিত: ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২৫

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ার ‘কালোঝুঁটি বুলবুল’

কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ার ‘কালোঝুঁটি বুলবুল’

স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক :: অপরুপ এক আরণ্যক শোভা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। দূরে গাছের ডালে দু’-চারটি পাখিদের সুমিষ্টি ডাক। পাতার আড়ালে ঝোপ থেকে সেই ডাকগুলো শুনা যাচ্ছে। স্পষ্ট করে দেখার সুযোগ নেই এই প্রজাতির পাখি।
পাখি, ফুল আর প্রজাপতির সন্ধানে এগিয়ে যাওয়া অপর একটি নির্জনতার উদ্দেশ্যে। সেখানে এক উঁচু স্থানে উঠে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। সেই সুযোগে এখন স্থির দৃষ্টি বুনো ডুমুর গাছের ঝোপের দিকে দেখা মিললো ‘কালোঝুঁটি বুলবুল’। ডাক তো দূরের কথা, আসা মাত্র প্রথমবার যে একটি ডাক দিয়েছিল ওটাই আর ডাকেনি সে। খানিকক্ষণের বিরতি পর্ব সেরে ঝোপ থেকে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসে।
এ বুনো পাখিটির নাম ‘কালোঝুঁটি বুলবুল’। এর অপর বাংলা নাম ‘কালাঝুঁটি বুলবুল’। পাখিটিকে বনে বা বন সংলগ্ন এলাকায় মাঝে মাঝে দেখা যায়। এরা আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েলের মতো আকারে দেখতে।
এদের মাথার ওপরে কালো রঙের দৃষ্টিনন্দন ঝুঁটি আছে। চোখ এবং চোখের বৃত্তাকার অংশটি ফিকে হলুদ রঙের। দূর থেকে সহজে আকর্ষণ করে। দেশে প্রচলিত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাখি-বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক এই পাখি সম্পর্কে বলেন, এরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এদের দৈর্ঘ্য বয়স ভেদে প্রায় ১৮ থেকে ২২ সেন্টিমিটার। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের বিভিন্ন বনে এদের পাওয়া যায়। মূলত আর্দ্র প্রশস্ত পত্রবহুল বন, বৃক্ষতলে ঘন গুল্মলতা এবং বৃক্ষ সমৃদ্ধ এলাকায় সচরাচর একা, জোড়ায় কিংবা ছোট দলে থাকে। ফলদ গাছে এরা বেশি বিচরণ করে এবং পাতার ওপর খুটে খুটে খাবার খায়।
তাদের খাদ্যতালিকা এবং প্রজনন সম্পর্কে তিনি বলেন, খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন গাছের ছোট ছোট ফল ও নানা প্রজাতির পোকা। গাছের ডাল থেকে সামান্য উড়তে পারে এমন উড়ন্ত পোকা ধরে ধরে খেলে পুনরায় ওই ডালেই ফিরে আসে। মার্চ-সেপ্টেম্বর তাদের প্রজনন মৌসুম। তখন ঘন ঝোপ কিংবা চারাগাছের মরা পাতা, শিকড় ও বাকল মাকড়সার আঠাযুক্ত জাল দিয়ে বেঁধে বাটির মতো বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা দুটো থেকে চারটি।
ভারত, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, চীনের দক্ষিণাঞ্চল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে বলে জানান পাখিবিদ ইনাম আল হক।

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ