প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা পাইয়ে দেয়ার নামে কুলাউড়ার ক্লিভডন বাগানে চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা উৎকোচ আদায়!

প্রকাশিত: ৩:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২০

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা পাইয়ে দেয়ার নামে কুলাউড়ার ক্লিভডন বাগানে চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা উৎকোচ আদায়!

স্বপন দেব,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ক্লিভডন বাগানের চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন মিলে শ্রমিকদের কাছ এ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শ্রমিকরা এ নিয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকার প্রতিবছর চা শ্রমিকদের মাঝে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ক্লিভডন চা বাগানের ৫৬৫ জন চা শ্রমিক অনুদান পাবে। আর এসব উপকারভোগীদের তালিকা করা শুরু করেন বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোহন লাল গোয়ালা, কোষাধ্যক্ষ রামবচন গোয়ালা, বিকাশ মুদি, সুসেন উরাং এবং মুকুল চন্দ্র বুনার্জী।

তারা তালিকা করতে গিয়ে বাগানের প্রত্যেক শ্রমিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে ২ শত থেকে ৫ শত টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করেছেন। এভাবে বাগানের পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এ অনুদান পেতে কোন টাকা-পয়সা লাগেনা এমন খবরটি জানাজানি হলে বাগানের শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন সাধারণ শ্রমিকরা। আর এ অভিযোগের অনুলিপি কুলাউড়া সমাজসেবা কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং কুলাউড়ার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছেও দেয়া হয়েছে। শ্রমিকরা জানান, এভাবে প্রতিবছর অনুদান আসলেই বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিকঠাক ও সরকারি খরচের কথা বলে সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

এদিকে একই ইউনিয়নের দিলদারপুর, বিজয়া ও মেরিনা চা-বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকেও কাগজপত্র ঠিকঠাক করার কথা বলে টাকা উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে। নিরীহ শ্রমিকরা জানান, প্রতিবারই যে কোন অনুদান আসলেই প্রেসিডেন্ট লোক পাঠিয়ে কাগজপত্র ঠিকঠাক ও সরকারি খরচের কথা বলে টাকা আদায় করেন। অথচ আমরা নিজের খরচে ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি করে দেই। এরপরও টাকা না দিলে তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। এছাড়াও তাদের (সভাপতি-সম্পাদক) পছন্দের লোকজনের নাম বার বার তালিকায় আসে। যারফলে প্রকৃত অসহায় শ্রমিকরা অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়।

এব্যাপারে ক্লিভডন চা-বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোহন লাল গোয়ালা জানান, ছবি প্রিন্ট, ফটোকপি করা এবং মাস্টাররুল রেডি করার জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে সামান্য টাকা নিয়েছি। এটাতো আমরা খাইনি, তাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক করা এবং কুলাউড়ায় যাতায়াত করতে খরছ করছি।

এব্যাপারে জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৫ নং (ক্লিভডন) ওয়ার্ড সদস্য শংকর উরাং জানান, বিভিন্ন শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, অনুদান পেতে বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করা এবং সরকারি খরচের জন্য টাকা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে জানতে পারলাম যে, পঞ্চায়েতের লোকজন এসব তালিকা করার কথা নয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বাগান ব্যবস্থাপকের সমন্বয়ে তালিকাটি করা হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এই অনুদান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়না, অফিসিয়াল কোনো খরচও এতে নেই। তাই এটা নিয়ে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ