জুড়ীতে সাফারি পার্ক নির্মাণ : ৪টি গ্রামবাসীর বসত ভিটা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

প্রকাশিত: ১১:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২১

জুড়ীতে সাফারি পার্ক নির্মাণ : ৪টি গ্রামবাসীর বসত ভিটা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

স্বপন দেব, নিজস্ব প্রতিবেদক :: মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের কৃষি নির্ভর ৪টি গ্রামের বসতবাড়ি ছেড়ে প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবারের বসতবাড়ি রক্ষা, কমলা বাগানকে বাঁচিয়ে রাখার দাবিও জানানো হয়।
রোববার (১১ এপ্রিল) জরিছড়া, লালছড়া, রুপাছড়া, ডোমাবাড়ী গ্রাম, কমলা চাষি ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনের বক্তারা উল্লেখ করেন, ৪টি গ্রামে ৩৬৪টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার কমলা, বাতাবী, লেবু, জাম্বুরা, আদালেবু, হাতকরাসহ লেবু জাতীয় কৃষি ফসলী বাগানের উপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি সরকার অত্রাঞ্চলের কমলা চাষিদের সমন্বয়ে ঐ এলাকার কমলাকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার তৎকালীন মো. মোস্তাফিজুর রহমান (এনডিসি) লাঠিটিলার কমলা বাগান পরিদর্শন করেন এবং উক্ত এলাকার কমলা বাগান নিয়ে একটি শিল্প তৈরির উদ্যোগ নেন।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমাদের এলাকায় সাফারি পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরণের জরিপ ও সার্ভে কার্যক্রম শুরু হয়। এতে প্রাথমিকভাবে আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। সপ্তাহ খানেক পর যখন আমরা জানতে পারলাম স্থানীয় এই গ্রামবাসীকে উচ্ছেদ করে এখানে একটি সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে এমন খবর পেয়ে রুপাছড়া ও লালছড়ায় ২ জন লোক ইতিমধ্যে হার্টএট্যাক করেন।
শতবর্ষের সাজানো বাড়ী, ঘর, কৃষি ফসলী বাগান ছেড়ে তাদের জীবিকা ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
মানববন্ধনকারীরা জানান, প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক নির্মাণ হলে সেটা আমাদের এলাকার বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে একটি মাইলফলক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের লাঠিটিলা বিটের মোট আয়তন ৫৬৩১.৪০ হেক্টর। তন্মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কের দিলখুশা বাজার ইসলামাবাদ চা বাগান সীমানা থেকে উত্তর দিক দিয়ে জরিছড়া লালছড়া ও রুপাছড়া গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ রয়েছে মোট ৩৬৪টি পরিবার। এছাড়াও ৩টি মসজিদ, ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেসরকারি ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
উক্ত পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩৫০টি পরিবারই কৃষি নির্ভর। প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিক লোক উক্ত ৪টি গ্রামের মধ্যে শতাধিক বর্ষের পুরনো প্রতিষ্ঠিত কমলা, আদা, জাম্বুরা, বাতাবী লেবু, সাতকরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির কৃষি ফসলী বাগানে কর্মে নিয়োজিত। উক্ত বাগানের উপর নির্ভর করে চলে উক্ত ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবার। উক্ত পরিবারের অভিভাবকরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার খরচ, চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যয় বহন করেন উক্ত কৃষি ফসলী বাগানের উপর নির্ভর করে। গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ পরিবার সমূহকে উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন না করে প্রস্তাবিত পার্ক বাস্তবায়ন হলে আবাসস্থল পরিবর্তনের ফলে ৪টি গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় মারাত্মক ক্ষতির আশংকা বিদ্যমান।
প্রস্তাবিত পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মোট জমির চাহিদা ১০০০ একর। সেক্ষেত্রে এখানে আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ উল্লেখিত ৪টি গ্রাম ও শতাধিক বর্ষের লালিত বসত বাড়ী ও কৃষি ফসলী বাগান রক্ষা করে গ্রামের শেষ সীমানা থেকে উত্তর ও পূর্ব দিকে চাহিদার চেয়ে বেশ কয়েকগুণ জমি পতিত বিদ্যমান রয়েছে বলে মানববন্ধনে বলা হয়। #

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ