বিজেপি না আসলে যেমন থাকবে পশ্চিমবঙ্গ

প্রকাশিত: ১০:৩১ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০২১

বিজেপি না আসলে যেমন থাকবে পশ্চিমবঙ্গ

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচনের ফলাফলের একদিন আগে রাজ্যপালের সঙ্গে বিজেপির অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বৈঠক নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠেছে। মিঠুন ও রাজ্যপালের বৈঠকের অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে না পারলে কী হতে পারে?

এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তারপর থেকেই জনসভা থেকে রোড–শো পর্যন্ত প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল তাকে। পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্রই প্রচার সেরেছেন তিনি। ভোটের ফলাফলের আগেই রাজভবনে তার আগমন নিসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। ফাইল ছবি

বিজেপি ক্ষমতায় এলে যত ভয়

পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণপন্থী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি বিজেপির উত্থান হলে এখন যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে সেই সামাজিক চালচিত্রকে বদলে দেবে কি না, এই আশঙ্কা রয়েছে খোদ ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মাঝেই।

ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ইসলামের গবেষক কিংশুক চ্যাটার্জি বিবিসিকে বলেন, ‘অন্যান্য রাজ্যের অভিজ্ঞতা দেখলে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে এখানে সাম্প্রদায়িক পরিবেশ মোটেই আর আগের মতো থাকবে না।

পশ্চিমবঙ্গের এই নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্ব আগাগোড়া যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি ও প্রচারণা চালিয়ে এসেছে, তাতে এই ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছে।

বিজেপির ছোট-বড়-মাঝারি নেতারা ক্রমাগত বলে গেছেন, মমতা ব্যানার্জি এতদিন ভোটে জিতেছেন ‘স্রেফ রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশিদের ভোটে’।

মুসলিম কথাটা উচ্চারণ না-করলেও তারা যে এর মাধ্যমে আসলে কী বলতে চেয়েছেন, সেটা কারও বুঝতেই অসুবিধা হয়নি।

বিজেপি না জিতলে এনআরসি চালু হবে না

বিজেপি ক্ষমতায় না আসলেই পশ্চিমবঙ্গে শান্তি বজায় থাকবে বলে বিশ্বাস করেন কলকাতায় পার্ক সার্কাস অঞ্চলে জন্ম থেকে বেড়ে উঠা অধ্যাপক রওশন জাহানারা।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘বিজেপি বলেই রেখেছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এলে তারা এখানে এনআরসি চালু করবে। মুসলিমদের নিশানা করে আসামে এনআরসি অভিযান চালিয়ে যেভাবে তারা সে রাজ্যে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে পাকাপাকি বিভাজন সেরে ফেলেছে, একই জিনিস যে এখানেও হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়?”

সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে রাজ্যে যে একটা ‘পোলারাইজেশন’ বা মেরুকরণ অনেকটাই সারা, তাতেও কোনও ভুল নেই। তবে এই পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল নেতৃত্বকেও দায়ী করছেন অনেকেই।

বামপন্থী নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন জনসভায় ইনশাআল্লাহ বলে ভাষণ শুরু করা, মুসলিমদের জন্য আলাদা হাসপাতাল বা শুধুমাত্র ইমামদের জন্য সরকারি ভাতা – এগুলো মমতা ব্যানার্জিই এ রাজ্যে চালু করেছেন। ‘

ভোটের ফলাফলে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক বা না-পাক, তাই পশ্চিমবঙ্গে সেই সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন যে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে- সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কোনও।

সুজন চক্রবর্তী বলেন, সেই খেলাটাই বিজেপি এখন আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, কারণ তারা এ খেলার অনেক পুরনো খেলোয়াড়।