ছাতকী ময়নার কণ্ঠে ভাইরাল ‘নয়া দামান’

প্রকাশিত: ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, মে ৩, ২০২১

ছাতকী ময়নার কণ্ঠে ভাইরাল ‘নয়া দামান’

অনলাইন ডেস্ক

‘হায়রে হায়রে হায়, ও মুজা খালি গান গাইতে থাকো, সারা সিলেটোর লাগি একটা গান গাও না কেনে বা?’ সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় এই কথাগুলোর পরই শোনা যায় একটি নারীকণ্ঠ গেয়ে ওঠে, ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া/ দামান বও দামান বও।’

‘সারা সিলেটোর লাগি’ গাওয়ার কথা বলা হলেও এই গান আর শুধু ‘সারা সিলেটোর লাগি’ থাকেনি। বরং প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজার সংগীতায়োজনে এই গানটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে সিলেট অঞ্চলে গীত হয়ে আসা ‘নয়া দামান’ গানে এখন মজেছে সবাই।

‘নয়া দামানের’ এই পুনর্জাগরণের নেপথ্যে রয়েছেন সিলেটেরই এক তরুণী। তার কণ্ঠে ভর করেই সিলেট অঞ্চলের এই বিয়ের গানটি এখন ভাইরাল। গানের সঙ্গে সেই তরুণীও এখন সবার পরিচিত। তার নামও আর কারও অজানা নয়। তিনি তোশিবা বেগম।

সিলেটি তরুণী তোশিবা সদ্য এইচএসসি পাস করেছেন। গান গাইতে ভালো লাগলেও শেখা হয়নি কখনো। তবে দরদ দিয়ে গাওয়ায় গানগুলো হৃদয় কাড়ছে সবার। তার গায়কীতে মুগ্ধ শ্রোতারা।

রোববার কথা হয় তোশিবার সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তার গানের জনপ্রিয়তার পেছনের গল্প।

তোশিবা জানান, গান না শিখলেও ছোটবেলা থেকেই নিজের মতো করে গান করেন। মূলত সিলেট অঞ্চলের লোকগানই করে থাকেন। বছর দুয়েক ধরে ফেসবুকে খালি গলায় গাওয়া নিজের কিছু কিছু গান আপলোড করা শুরু করেন। অনেকে তা পছন্দ করে।

ধীরে ধীরে তার গাওয়া গান ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর ৭-৮ মাস আগে থেকে টিকটক ব্যবহার শুরু করেন। টিকটকে পছন্দের কিছু গানের ২ থেকে ৩ লাইন গাইতেন। দ্রুতই টিকটকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসকের নাচের সেই ভাইরাল ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে তোশিবার গাওয়া গানটি। মুজার সংগীতায়োজনে এই গানে বাঁশি বাজিয়েছেন মীম।

তোশিবা বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে ‘আইলারে নয়া দামান’ গানের দুই লাইন গেয়ে টিকটকে দিয়েছিলাম। অনেক মানুষ এটা পছন্দ করে। এটি দেখে মুজা ভাই (প্রবাসী মিউজিশিয়ান মুজা) যোগাযোগ করেন। তিনি তার সঙ্গে এই গানটি করার প্রস্তাব দেন। আমি এতে সম্মত হই।’

মাসখানেক আগে নয়া দামান গানের ‘মুজা ফিচারিং তোশিবা’ ভার্সন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন মুজা।

এরপরের গল্প তো সবার জানা। নেটিজেনদের মাঝে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।

শনিবার পর্যন্ত মুজার ইউটিউব চ্যানেলে এই গান শুনেছেন অর্ধকোটি শ্রোতা। এই গানের সঙ্গে খুলনার এক কনের নাচের ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করে ছায়াছবি নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান। সেই ভিডিও দেখেছেন কোটি খানেক দর্শক।

আর করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের তিন চিকিৎসকের নাচের ভিডিও তো সবার মোবাইলে মোবাইলে।

আগেকার দিনে শিল্পীদের তারকা হওয়ার মাধ্যম ছিল শুধু রেডিও-টেলিভিশন। জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকগুলো অ্যালবাম বের হতো। বছরজুড়ে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে গান গাইতেন।

কয় বছর আগেও এটিই ছিল বাস্তবতা। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন আর শিল্পী হওয়ার জন্য রেডিও-টেলিভিশনের আশায় বসে থাকতে হয় না, প্রযোজকদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরতে হয় না।

প্রতিভা ও ইচ্ছা থাকলে সহজেই নিজের গান পৌঁছে দিতে পারেন মানুষের কাছে। পেয়ে যেতে পারেন তারকাখ্যাতি।

যেমন, তোশিবার কথাই ধরা যাক। রেডিও-টেলিভিশন তো দূরে থাক, জীবনে কোনো দিন কোনো অনুষ্ঠানেও গান করেননি। বের হয়নি কোনো অ্যালবাম। শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তার সামনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে।

তোশিবার নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। ‘তোশিবা বেগম’ নামের ওই ইউটিউব চ্যানেলে তিনি নিজের গাওয়া গান আপলোড করেন।

এ ছাড়া জনপ্রিয় ইউটিউবার ইমরানের চ্যানেল ‘মেড ইন বাংলাদেশের’ জন্য ৪-৫টা গান গেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ‘দুই আনার পিরীত’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

তোশিবাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। এখন থাকেন সিলেটের খাদিমপাড়ায়। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মেজো তোশিবার লক্ষ্য সিলেটের গান সারা বিশ্বে তুলে ধরা।

তোশিবা বলেন, ‘আমি সিলেটের পুরোনো গানগুলি গাইতে চাই। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সিলেটের গানের বিপুল ভান্ডার তুলে ধরতে চাই। তবে ঠিক রাখতে চাই মূল সুর ও কথা, যাতে এগুলো বিকৃত হতে হতে হারিয়ে না যায়।

তবে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তোশিবার গাওয়া এই রিমিক্সে তিনি গানের মূল সুর নষ্ট করেছেন।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি মূল সুর নষ্ট করিনি। রিমিক্স করা হয়েছে কিন্তু গানের সুর ঠিক রাখা হয়েছে।’

হঠাৎ করে পাওয়া এই তারকাখ্যাতি কেমন লাগে জানতে চাইলে তোশিবা বলেন, ‘সবাই নাম জানছে, গান শুনছে, প্রশংসা করছে। এটা ভালো লাগে। তবে আগামীতে আরও ভালো করতে চাই।’

তবে এই গান নিয়ে আক্ষেপও আছে তোশিবার। গানটি তার কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পেলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে তার নাম তেমন আসছে না।

তোশিবার অভিযোগ, ‘টেলিভিশনে নিউজ হয়েছে কিন্তু আমার নাম সেভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, ছায়াছবি নাকি বিখ্যাত করেছে। অথচ ছায়াছবি আমার গান ব্যবহার করেছে।

‘ছায়াছবির অনেক আগে আমি টিকটকে গানের মাত্র দুই লাইন দিয়েছিলাম। সেটায় দুই লাখ ভিউ হয়েছে। মুজার চ্যানেলেও প্রচুর ভিউ হয়েছে। তোশিবা-মুজার মাধ্যমেই এই গান জনপ্রিয় হয়েছে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ