সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২০
রাহাদ হাসান মুন্না,প্রতিবেদক তাহিরপুর সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জ জেলা বিশেষ করে তাহিরপুর উপজেলা সারা দেশে হাওর অঞ্চল নামে খ্যাত। তবে হাওর অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও হাওর পাড়ের প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে যা কিছুদিন পূর্বেও এখানকার মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে হাওর অঞ্চলের নাগরিক হয়েও জেলা প্রশাসনের ই-নথি সেবা ভোগ থেকে শুরু করে হটলাইন নাম্বার ৩৩৩ বা ৯৯৯ ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এখানকার নাগরিকরা,তবে এই সব নাগরিক সুবিধা ভোগ করলেও একটি দুর্ভোগ, একটি যন্ত্রণা এবং একটি চিরায়ত যাতনা অতিষ্ঠ করে তুলছে তাহিরপুরবাসীর জন-জীবন। তাহিরপুরের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগ হলো সেই যন্ত্রণা যা কুরে কুরে খাচ্ছে তাহিরপুরবাসীকে। তাহিরপুরে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন বিগত দশ বছরে কী পরিমান হয়েছে তা একটি উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। ২০১১ সালে প্রায় এক কি.মি দূরের একটি হাই স্কুলে আমি পড়তে যেতাম তখন প্রায় ৫ টি বাঁশের সাকো পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হতো। এখন ২০২০ সাল,এখনো কোন শিক্ষার্থী সারা বছর পায়ে হেঁটে ঐ এক কি.মি জায়গা অতিক্রম করতে পারে না। তবে অবাক করার মতো তথ্য হচ্ছে প্রায় প্রতি বছর ঐ এক কি.মি জায়গায় লক্ষাধিক টাকা বাজেট দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন এখানকার অনেক সড়ক হাওড়ের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় প্রায় প্রতি বছর বিশাল অংকের বাজেট আসে। তবে বাজেট যত বিশাল হোক না কেন অধিকাংশ সড়কের আয়ুষ্কাল মাত্র ৬ মাস। এখানকার বহু সড়ক শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্ষার মৌসুমে ভেঙে যায় যে কারণে একই সড়কের জন্য সরকারের প্রতি বছর বাজেট দিতে হয় যার ফলে দুটি ক্ষতি হচ্ছে, ১/সরকারের প্রচুর টাকা নষ্ট হচ্ছে ২/ জনগণের দুর্ভোগ কমছে না। স্থানীয় অনেকের অভিযোগ এক শ্রেণির লোক সদা তৎপর থাকে যেন রাস্তাগুলোর স্থায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদের না হয় কারন রাস্তাগুলো প্রতি বছর যদি না ভাঙ্গে তবে নতুন টেন্ডার আসা বন্ধ হয়ে যাবে যার ফলে অনেকে তাদের পকেট ভারী করতে ব্যর্থ হবে। প্রায়ই অনেক দায়িত্বশীলরা বাজেটের আশ্রয় নিয়ে বলে থাকেন যে বাজেট নেই কিন্তু বাজেট বলছে ভিন্ন কথা। করোনাকালীন সময়েও সড়ক উন্নয়নে বাজেট দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা যা গত বছরের তুলনায় ১৬৮ কোটি টাকা বেশি। তাহিরপুরের অধিকাংশ সড়কের আয়ুষ্কাল ছয় মাস যে কারনে এই উপজেলার অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থার শুকনো মৌসুম আর বর্ষার মৌসুমে দুটি ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যায়। শুকনো মৌসুমের দুর্ভোগটা যদিও বর্ষার মৌসুমের চেয়ে কিছুটা কম তবুও তা অসহনীয় পর্যায়ের। শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম মোটরসাইকেল হলেও কিছু জায়গায় রিকশা এবং অটোরিকশা পাওয়া যায়। এখানকার অধিকাংশ সড়ক কাচা তবে কিছু পাকা সড়ক থাকলেও মেরামতের অভাবে রাস্তাগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে যেকোন দুর্ঘটনা। প্রতি বছর অনেক পত্রিকায় নিউজ হয় তাহিরপুরের অমুক জায়গাটি যেন যাত্রীদের জন্য একটা মরণফাঁদ এই ধরনের শিরোনামে। সত্যিকার অর্থে এখনকার অনেক সড়ক রয়েছে যেগুলো যাত্রীদের জন্য এক একটা মরণফাঁদ। বর্ষার মৌসুমের দুর্ভোগ শুকনো মৌসুমের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বর্ষার মৌসুমে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম নৌকা। আমরা হয়তো ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের কথা অনেক শুনে থাকি কারন ইহা মানুষের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করে কিন্তু আমাদের তাহিরপুরবাসীও এক অদৃশ্য ট্রাফিক জ্যামে বন্দী যা কেঁড়ে নিচ্ছে হাওরবাসীর মূল্যবান সময় । অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিদিন কমপক্ষে ঘন্টাখানেক সময় শুধু নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে। এভাবে শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দৈনিক ঘন্টাখানেক সময় চলে গেলে বছর শেষে কত ঘন্টা সময় হাওয়ায় চলে যাচ্ছে তা হিসেব করলে হাজার ঘন্টা হবে নিশ্চয়ই । অনেক নাগরিক উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা থেকে শুরু করে অনান্য নাগরিক সেবা ভোগ করতে বছরের পর বছর সহ্য করে যাচ্ছে দুর্ভোগ। এর কারন হচ্ছে উপজেলা থেকে ১০ থেকে ১২ কি.মি দুরত্বে অবস্থিত প্রায় ৩০-৪০টি গ্রাম আছে ঐসব গ্রামের বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে শুধু যাওয়া -আসার জন্য কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা সময় লাগে। অনেক সময় এমনো হয় খুব গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকে উপজেলা সদরে নিয়ে যেতে যেতেই রোগী মৃত্যুর খুব কাছে চলে যান। অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা, অনেক উদ্যোক্তার প্রধান দুশ্চিন্তা হলো এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থা। তাছাড়া তাহিরপুরের পর্যটন শিল্পের প্রধান বাধা হলো এখানকার নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাহিরপুর উপজেলার যাতায়াত ব্যবস্থর উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রনয়ণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় জনগনের সম্মিলিত প্রয়াসেই পারে তাহিরপুরবাসীর এই দুর্ভোগ লাঘব করতে। হয়তো করোনা পরবর্তী সময়ে খুব দ্রুত আমরা মুক্তি পাবো এই অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে। লেখকঃ রিয়াজ উদ্দিন ,শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নাজমুল কবীর পাভেল
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : জুমা কবীর মিম
সহ সম্পাদকঃ আরিফ মাহবুব
নির্বাহী সম্পাদকঃ ধ্রুব জ্যোতি দে
ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাহমুদা আক্তার বিউটি
আইটি সম্পাদক : মাসুম আহমদ
উপদেষ্টা সম্পাদক : এ্যাডভোকেট জাহানারা বেগম
ইমেইল: sylnewsbd@gmail.com, pavel.syl@gmail.com
ফেইসবুক পেইজ : Syl News BD
মোবাইলঃ 01712-540420
শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি