সাংসদরা শুধু হ্যাঁ বা না বলার জন্য সংসদে আছেন: সাবের হোসেন চৌধুরী

প্রকাশিত: ১১:৪৯ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২১

সাংসদরা শুধু হ্যাঁ বা না বলার জন্য সংসদে আছেন: সাবের হোসেন চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক

সাংসদরা শুধু হ্যাঁ বা না বলার জন্য সংসদে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী। প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের অংশীদারত্ব নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেছেন, সরকারি দলের সংসদ সদস্যদেরও জাতীয় বাজেট কিংবা সরকারের অন্যান্য নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হয় না। সাংসদরা শুধু হ্যাঁ বা না বলার জন্য সংসদে আছেন।

শনিবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাজেট ডায়লগ-২০২১’ শীর্ষক বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বিভিন্ন পর্যালোচনা তুলে ধরেন এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সভায় বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা, এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিন, এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদসহ অনেকে বক্তব্য দেন।

বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আমাদের অনুরোধে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্তত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধানদের পরামর্শ নিতেন। … এবং বসে উনি নিজে নোট করতেন। তো এটাতো এই বছর আর হয়নি। তো আমার মনে হয় না কোনো কমিটির ওনার (অর্থমন্ত্রী) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সিস্টেমে সংসদ আসলে খুব একটা আলোচনার মধ্যে আসে না।

তিনি আরও বলেন, এটা না হলে যে সমস্যাটা হয় আমরা তো শুধু সংসদে আছি হ্যাঁ বা না বলার জন্য। আমরা সংসদে আছি মানুষের যে চাহিদার কথাগুলো আছে সেগুলো ব্যাখ্যা করা এবং তুলে ধরার জন্য। কিন্তু আমরা যদি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকি তাহলে সেই বিষয়গুলো কেন আসবে।

বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে সাবের হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, সেটা আমাদের ঠিক করতে হবে। আবার যদি আমরা মনে করি যে শুধু সরকার যেটা দেবে, সেটাকেই পাস করে দেওয়া, তাহলে তো আমাদের বাজেট অধিবেশনের প্রয়োজন নেই।

আলোচনা সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের খালি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, ব্যবসায়ীরা লুটেরা, কদিন ধরে লাগাতার এসব বলা হচ্ছে। কথাগুলো শুনতে আমি আগ্রহী নই। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অনেক কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এসব ছাড়ের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা বহু বছর ধরেই। সরকার একটু একটু করে কমাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আগে একটা ধুয়া তোলা হতো এনজিওদের বিরুদ্ধে। বলা হতো, কিস্তির টাকার জন্য তারা টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। এবার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। অথচ ব্যবসায়ীদের সরকার এক হাতে দেয়, অন্য হাতে তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়।

সভায় সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ১০ মাসে এত কম আয় হয়েছে যে বাকি দুই মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১২২ শতাংশ। ব্যয় সক্ষমতার অবস্থাও ভালো নয়। কভিডের কারণে যেই অর্থবছরে ব্যয় বেশি হওয়ার দরকার ছিল, সেই অর্থবছরেই সম্প্রসারণমূলকের পরিবর্তে সংকোচনমূলক বাজেট হয়েছে। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়েনি, ৮ শতাংশ। অথচ নতুন বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। কীভাবে তা অর্জন সম্ভব হবে? মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এখনো ১ শতাংশের নিচে বলে সমালোচনা করেছে সিপিডি। তারা বলেছে, কৃষি খাতেও বরাদ্দ কমেছে। অথচ দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ