টেল ইউর ফাদার টু স্মাইল : .মুকুল হক

প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২০

টেল ইউর ফাদার টু স্মাইল : .মুকুল হক

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তালার। গতসপ্তাহে বাবার মিনি স্ট্রোক হয়েছিল, যাকে মেডিকেল ভাষায় ট্রানজিয়েন্ট ইসেকমিক আ্যাাটাক (টি আই এ) বলে।

সকালের নাস্তার টেবিলে বসে আছি হঠাৎ বাবা সহধর্মিনীকে ডেকে, “বৌমা আমার বাম হাতটা মনে হচ্ছে অবশ হয়ে যাচ্ছে, ঠোঁটও শুষ্ক লাগছে”। সহধর্মিনী-বাবা আসুন একটু ফ্রুট খান দেখবেন ভাল লাগবে। ইতিমধ্যে সহধর্মিনী বাবার হাতটা মালিশ করে দিচ্ছেন। হঠাৎ সহধর্মিনীর চিৎকার দেখ বাবা কি করছেন? দেখি বাবার শরীরের বাম সাইড দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, কথা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে-পুরোপুরি বুঝা যাচ্ছে না, মুখের এক দিক বেঁকে যাচ্ছে। বাবার অসুস্থতা দেখে নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে আমি অল্পতেই নার্ভাস হয়ে যাই। আমার ছেলেকে চিৎকার করে ডাকি আরাবী দেখ দাদা কি করছেন? আরাবী দেখেই বললো বাবা দাদার স্ট্রোক হতে পারে, দাদাকে বল হাসতে, দাদা হাস-হাস। আমিও উচ্চস্বরে বললাম বাবা আপনি হাসেন-আপনি হাসেন। বাবা হাসছেন, বাবার হাসির মাঝে ছিল কষ্ট। তারপরও কষ্ট করে হাসছেন। দেখি বাবার বেঁকে যাওয়া মুখ সোজা হচ্ছে। আরাবী তৎক্ষণাৎ এম্বুলেন্স ডাকল এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইমারজেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির। দেখতে আসা ইএমটি সদস্যরা বাবাকে পরিক্ষা করে নিলেন। ইএমটি সদস্যদেরও একই প্রশ্ন, “টেল ইউর ফাদার টু স্মাইল”।

যাই হউক বাবাকে নিয়ে যাওয়া হলো North Shore Hospital in Forest Hills। পথিমধ্যে ছোট ভাইকে ফোন করি। ইতিমধ্যে ছোট ভাই পৌঁছে গেছে হাসপাতালে। ইমার্জেন্সি ডাক্তার বাবাকে পরিক্ষা করে নিলেন। ইমার্জেন্সি ডাক্তারের সেই একই প্রশ্ন “টেল ইউর ফাদার টু স্মাইল”। বাবার ক্যাট স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এক্সরে, রক্ত ​​পরিক্ষা করা হল। সব টেস্টের রেজাল্ট পেয়ে ইমার্জেন্সি ডাক্তার ব্যাখ্যা করলেন( বাংলায় অনুবাদ) “আপনার বাবার (টআই এ) – যা মিনি স্ট্রোক হয়েছে, মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত ​​প্রবাহকে বাধা দেয় এবং অল্প সময়ের জন্য স্ট্রোকের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে তিনি আরও বলেছিলেন যে এটি কোন গুরুতর স্ট্রোকের পূর্বাভাস -, তাত্ক্ষণিকভাবে ইমারজেন্সিতে আনা সঠিক কাজ বলে উল্লেখ করলেন”।

বাবা ৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন, করোনা ভাইরাসে ভিজিটরের সময় সীমা ছিল সীমিত বিধায় বাবাকে একা হসপিটালে রেখে আসতে হতো। রাতে বাবাকে যখন একা রেখে আসি, বাবা বলেছিলেন “আমার হাতটা একটু ধর”। বাবার হাতটা ধরে বলি, ইনশাআল্লাহ বাবা চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবাকে বিদায় জানিয়ে ঘাড় ফিরাতেই বিছানায় শুয়ে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বাবার মুখ বেশ পীড়াদায়ক ছিল।

পরের দিন ভোরবেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখি বাবা পড়ছেন। বাবাকে বললাম কি পড়ছেন? বললেন, নার্স একটা ক্ষুদ্র পুস্তক দিয়ে গেল “মিনি স্ট্রোক” সেটা পড়ছি। আসলেই মুকুল একটা বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি, মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমার নাতীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ আমার মুখের শিশুসুলভ কষ্টের ফোকলা হাসিটি ফোটাতে পেরেছে বলে।

মুকুল হক

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ