হাবা হাসমতের পর আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভীষণ ভক্ত

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০

হাবা হাসমতের পর আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভীষণ ভক্ত

পীর হাবিবুর রহমান

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনকে ব্যর্থ মন্ত্রী হিসেবে কঠোর সমালোচনা করে বরখাস্ত চাইলেও ভিতরে ভিতরে আমি তার ভীষণ ভক্ত হয়ে গেছি। করোনাকালের মহাবিপর্যয়, এত বিতর্কের মুখে তার একেকটি কথা আমাকে জয় করেছে। যেমন তেমন ভক্ত নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের প্রয়াত কৌতুক অভিনেতা হাসমতের যেমন ভক্ত ছিলাম তেমন ভক্ত হয়ে গেছি। কীভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এত ভক্ত হয়ে গেলাম নিজেও টের পাইনি। আসলে প্রেম এভাবেই নীরবে কখন বাসা বাঁধে কেউ জানে না। হাবা হাসমতের পর আমি আমার চিত্তাকর্ষক জায়গা থেকে কখনো এভাবে কারও ভক্ত হইনি। আমার পাঠকরা বলবেন টানা কত সমালোচনা করেছি, বরখাস্ত চেয়েছি, অথচ আজ ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরে গেছি! আমার কথার কোনো ঠিক নেই। লেখার কোনো আগা-মাথা নেই! প্রিয় পাঠক! আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার হাতে কলম বলে আমি এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরখাস্ত চেয়েছি। ব্যর্থ বলেছি। তাকেসহ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন চেয়েছি। এসব আমি ভুল করেছি। ভুল তো মানুষেরই হয় তাই না? মনের পরিবর্তনও তো মানুষেরই হয়। তাই না? আমারও হয়েছে। আমি আজ আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দারুণ ভক্ত। মাননীয় মন্ত্রীর হয়তো আমার লেখা পড়ার সময়-সুযোগ হবে না। কিন্তু তার সহকর্মীরা পাঠ করে শোনাবেন এই আমার মিনতি। কারণ আমার মতো তার ভক্ত এ দেশে দ্বিতীয়টি নেই। এটা তাকে জানাতেই হবে। কারণ আমি কোনো দিন কারও অটোগ্রাফ নিইনি। করোনায় বেঁচে গেলে আমি তার অটোগ্রাফ নিতে যাব। সে অটোগ্রাফ আমি সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখব। আমার নাতি-নাতনিরা সে অটোগ্রাফ হাজার হাজার মানুষকে দেখিয়ে গর্ব করে বলবে, তাদের দাদা নানা জগদ্বিখ্যাত মন্ত্রীর ভক্ত হিসেবে অটোগ্রাফ নিয়েছিলেন। তারা যদি কখনো আর্থিক সংকটে পড়ে তাহলে এটা নিলামেও চড়া মূল্যে বিক্রি করে বাকি জীবন সুখে কাটাবে।

আমি চিন্তা করে দেখেছি আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীতেই এমন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর কখনো আসেননি। আর আসবেন না। ভারতের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আবার কেমন মন্ত্রী! রেল দুর্ঘটনায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন! জনগণ আবার তাকে প্রধানমন্ত্রী বানায়! তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন। কত বোকা! বোকা নেতাকে ভারতবাসীও পরে বোকার মতো প্রধানমন্ত্রী করে। আমরা জনগণ যেমন তেমনই আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কত গর্ব আজ তাকে নিয়ে আমাদের। কত খ্যাতি আজ পৃথিবীজুড়ে। দেশে দেশে আজ কত স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, বরখাস্ত হয়েছেন! আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অমর সৃষ্টি এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী কত সফল মানুষ! যখন দেশের সরল মানুষের বোকা সন্তানরা গণতন্ত্রের নামে নিজের খেয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, জীবন দিয়েছে তখন এই মন্ত্রীর বাবাও ক্ষমতা ভোগ করেছেন সফলতার সঙ্গে। সফল পিতার সফল সন্তান আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সারা জীবন রাজনীতি করে বোকারা এমপি মন্ত্রী হতে পারেনি। কিন্তু জাহিদ মালেক হয়েছেন। আমি তার ভক্ত হয়ে আজ ধন্য। আমার চৌদ্দগুষ্টির কপাল যে আমি তার ভক্ত হয়েছি। তিনি রাজনীতিতে এলেন, এমপি-মন্ত্রী হলেন। তার কত জ্ঞান, কত বুদ্ধি। তিনি দেশে দেশে বরখাস্ত হওয়া, পদত্যাগ করা স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের মতো অযোগ্য অপদার্থ দুর্বল, বেহায়া নন যে লজ্জায় পদত্যাগ করবেন। তিনি মহান বীর জাহিদ মালেক দ্য গ্রেট। আমার এখনকার নায়ক। সরকারের চিত্রনাট্যের এক কালজয়ী চরিত্র।
বিবিসি, আলজাজিরা, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, আরব নিউজ, ইতালির প্রভাবশালী দৈনিক আমাদের ভুয়া করোনার টেস্ট রিপোর্ট বা করোনার রিপোর্ট জালিয়াতি, দুর্নীতি নিয়ে কি রিপোর্টই না করছে। তুফান উঠেছে বিশ্ব মিডিয়ায়। আমাদের গণমাধ্যম স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে খবরের ঝড় তুলেছে। টকশোতে, সংসদে সমালোচনার ঝড়ো হাওয়া। এসব আসলে গুজব বা ঈর্ষার মতো। ঈর্ষাকাতর প্রেমিক-প্রেমিকা যেমন তার স্বপ্নের মানুষকে না পেয়ে বলে চরিত্র খারাপ, তেমনি আমাদের গণমাধ্যম ও একদল মানুষ ফুলের মতো পবিত্র, পাখির মতো নিষ্পাপ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তাদের স্বপ্নের জায়গায় না পেয়ে বলছে, তার মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য খাত চরম দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি ব্যর্থ। অথচ দেশ-বিদেশে এত সমালোচনার জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কোনো অস্তিত্ব নেই, সবই অতিরঞ্জিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিঠু সিন্ডিকেটের মিঠু কোন ব্যক্তি আমার জানা নেই। সিন্ডিকেট কথাটা যে ব্যবহার হয় তা অতিরঞ্জিত। সিন্ডিকেট থাকতে পারে আমি তো চোখে দেখিনি, আমার এখানে সিন্ডিকেটের কোনো অবস্থা নেই। নরমাল নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ হয়।’

মারহাবা মারহাবা বলে চিৎকার করতে ইচ্ছা হয়। আনন্দে লাফ দিয়ে তালি দিতে ইচ্ছা করে। এমন দার্শনিক মন্ত্রী ইহকালে আসবে না এ পৃথিবীতে। কথা নয় যেন বাণী। দুর্নীতি দমন কমিশন যাদের বিরুদ্ধে এক বছর আগে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছিল তাদের এখন কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মিঠু, রাজ্জাকের জেএমআইকে, তমা কনস্ট্রাকশন দুদক যাদের ডেকেছে তারা হয়তো মিডিয়ার সৃষ্টি। যেমন বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে জঙ্গি বাংলা ভাইদের মিডিয়ার সৃষ্টি বলেছিল সরকার। আমার প্রিয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী শপথ ভঙ্গ করবেন না। অজু ভঙ্গ হয় শপথ ভঙ্গ হয় না। তাই অতিরঞ্জিত বলেছেন লুটের সিন্ডিকেটকে। ধোয়া তুলসীপাতা মন্ত্রণালয়ের সব। অধিদফতর মন্ত্রীর দায়িত্বে নয়, তাই বলেছেন, রিজেন্টের চুক্তি জানেন না। অথচ চুক্তি সইকালে বসা। তিন সচিবও। এমন না হলে কীসের মন্ত্রী! সাহেদের রিজেন্ট কী প্রতারণাই না করেছে, বেরিয়ে এসেছে তার বাটপাড়ির অন্ধকার জগৎ। সেই জগতের সাহেদকে যেসব অসৎ অ্যাংকর টকশোয় লোভে এনে জাতে তুলেছিলেন, জেলখাটা আসামিকে যারা পুলিশ প্রটেকশন দিয়েছিলেন, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে করোনা রিপোর্ট জালিয়াতি করতে যারা সুযোগ দেন, যারা এমন জঘন্য বিকৃতকে দলীয় পরিচয় দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে পরিবারে জায়গা দেন তারা আজ কাঠগড়ায়। সাবরিনা, আরিফের জেকেজিকেও যারা হাজার হাজার মানুষের রিপোর্ট জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা লুটতে দিয়েছেন তারাও কাঠগড়ায়। দৃশ্যমান অপরাধীকে আটক করা গেলেও আড়ালের শক্তি ধরা পড়েনি! মন্ত্রীও তো চোখে চশমা রাখেন। দেখতে পেতেন দুর্নীতি অনিয়ম হলে। তার কি লাজলজ্জা হায়া শরম নেই মনে করেন? অনেক বেশি আছে। সিনেমায় যেমন টানটান উত্তেজনা নাটকীয়তার মুহূর্তে হাবা হাসমত এমন ডায়ালগ দিতেন যে সব উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা থেকে আমরা নিমেষেই মুক্ত হতাম। দারুণ আনন্দ ভোগ করতাম। তেমনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা টেনশন থেকে মুক্ত হই। আনন্দ পাই। আনন্দে অপরাধীদের কথা ভুলে সাহেদ-সাবরিনাদের নিয়ে ট্রল করি। তাই এ করোনাকালে তার মতো আনন্দ বিনোদন কোনো মন্ত্রী কি দিতে পেরেছেন? তাকে দেখতেও আমার হাবা হাসমতের মতো লাগে। তাই আমি তার ভক্তই নই, তার কাছে ঋণী। আমার চিত্তকে তিনিই প্রফুল্ল রাখেন। আর কেউ নন। কোনো বিশ্বসুন্দরী লাস্যময়ীর সঙ্গে সন্ধ্যা কাটালেও আমার চিত্ত প্রফুল্ল হবে না। যতটা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায় হয়। গোপাল ভাঁড়ও আমাকে হাসাতে পারবেন না। এই একজন মন্ত্রী যেভাবে পারেন।

শুনেছি, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে কেউ দেখা করতে গেলে শেরওয়ানির গায়ে আতর মাখতেন। বলতেন, চিত্ত প্রফুল্ল হয়। আমার এসব লাগে না। সত্যি বলছি, সেকালে হাবা হাসমত একালে জাহিদ মালেক আমার চিত্ত প্রফুল্ল রাখেন। এত ভালো লাগে মন্ত্রীকে দেখলে, এত মুগ্ধতা কী বলব ভাষা প্রকাশের ভাষা নেই। আমার খুশিতে কান্না এসে যাচ্ছে। আমাদের মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো। বিদেশের মিডিয়ায় দেশের মান ইজ্জত গেলে কী আসে যায়! আসলেই তো আমাদের ইউরোপ-আমেরিকার মতো মরণ দেখতে হয়নি। টেস্ট জালিয়াতির পরও আমাদের মৃত্যু কম। শ্রমজীবী পরিশ্রমী মানুষ মন্ত্রীর কথায় চাঙ্গা আজ। মানসিক শক্তি পেয়ে করোনাকে আমলেই নেয়নি! হাট মাঠ ঘাট কলকারখানায় গিজগিজ করছে মানুষ আর মানুষ। করোনার ভয়ে আতঙ্কিত পৃথিবী যখন নীরব নিথর, মরণ যন্ত্রণায়। আমাদের কত মানুষ চলে গেছে পরিবার, সমাজ, দেশকে কাঁদিয়ে; তখনো তিনি অবিচল। আমাদের করোনার প্রতিরোধ প্রতিকারে যখন চারদিকে চরম হতাশা, দুনিয়াজুড়ে লকডাউন তখন অকূলেরই কূল হয়ে আসেন জাহিদ মালেক। বলেন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হতে, ‘করোনাভাইরাস মারাত্মক রোগ নয়, ছোঁয়াচে। এটি একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে প্রবেশ করে। দেশের সব মানুষের মাস্ক পরে বাইরে ঘোরার প্রয়োজন নেই। যাদের সর্দি, কাশি, জ্বর আছে শুধু তারাই মাস্ক ব্যবহার করবে যাতে তাদের কাছ থেকে কোনো ছোঁয়াচে রোগ অন্যদের সংক্রমিত করতে না পারে।’ চিন্তা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই নয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী বলেন! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কী বলেন! অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি চমৎকার বয়ানই না দিয়েছেন! আসলে তার মতো মন্ত্রী ইতিহাসে অমরত্ব পাবেন। আমরা করোনাকে জয় করলে নাচে গানে ঢোলবাদ্য বাজিয়ে তাকে সংবর্ধনা দেব। এমন বীর কখনো কোনো মন্ত্রিসভায় দেখিনি আমরা। আমার আজ তার কথা লিখতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বারবার কান্না ধরে রাখতে পারছি না। তার বিরোধিতার অনুশোচনার কান্না নাকি তার ভক্তের আনন্দ অশ্রু তাও বুঝতে পারছি না। যত তাকে দেখি, যত তার কথা শুনি ততই আউলায়ে যাই! আমার বুঝতে হবে না। মানুষের মনোজগৎ বড় রহস্যময়। আমার মন এখন আমিই চিনতে পারছি না। বড় রহস্যময় লাগছে। কেবল চিন্তা করে দেখলাম বাংলা বা হিন্দি সিনেমায় নায়ক যদি নায়িকার চড়-থাপ্পড় খেয়েও জীবন বাজি রাখা প্রেমে পড়তে পারে তাহলে আমি কেন এমন বিনোদন লাভ করে একজন মন্ত্রীর ভক্ত হতে পারব না? কেন অন্ধভক্ত হব না? যিনি করোনাকালে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার দেউলিয়াত্বের মুখে কত নির্বিকার নির্লিপ্ত থাকেন! যিনি করোনাকালে তুমুল সমালোচনার মুখেও সংসদের ভিতরে বাইরে পরম ধৈর্য নিয়ে কি সুন্দর মোলায়েম কথা বলেন। কখনো গৌতম বুদ্ধ কখনো বা মহাত্মা গান্ধীর কথা মনে পড়ে। কত শান্তিবাদী তিনি। ধৈর্যশীলকে মহান আল্লাহও পছন্দ করেন। আমি মহান রবের খাস বান্দা হয়ে এমন ধৈর্যশীল মহান মন্ত্রীর ভক্ত কেন হব না!

স্কুলে পড়ার সময় ম্যাটিনি শো সিনেমা দেখে সিনেমা ভাঙলেই বাইরের আলোয় চোখ মেলে তাকাতে পারিনি আমি। কিন্তু ববিতার প্রেমে তো পড়েছি। চিন্তা করেছি বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকা যাব, ঢাকায় গিয়ে ‘কুকুর হইতে সাবধান’ লেখা গেটওয়ালা বাড়িতে ড্রাইভার হব। ববিতা, কবরী, শাবানার সঙ্গে প্রেম করব। কিন্তু ববিতাকে পর্দায় জাফর ইকবাল, কবরীকে রাজ্জাক আর শাবানা তো আলমগীরকে নিয়েই নিয়েছেন! এটা ভাবতে ভাবতে ভাঙা হৃদয়ে আমি হাবা হাসমতের দুঃখকে উপলব্ধি করি। সেদিনই হাসমতের ভক্ত হয়ে গেছি নিজের অজান্তেই। তেমনি আজ আমি করোনার মহাবিপর্যয়ে সবার ভয় আতঙ্ক উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মুখেও ধীরস্থির নির্বিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্লিপ্ত চেহারা আর ডায়ালগে কত প্রশান্তি পাচ্ছি। আমার এখন এত টেনশন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করার করুন। তিনি টেনশন করুন। মন্ত্রী, এমপি, চিকিৎসকসহ দেশের মানুষ করুক। আমার চিন্তা নেই। এমন মন্ত্রীর ভক্ত হলেই আর কোনো দুশ্চিন্তাই থাকে না। আমারও নেই। হাসমতও ভদ্রলোক ছিলেন। ’৯১ সালে চাঁদনী ছবি হিট হলে লালমাটিয়ায় নায়িকা শাবনাজের বাসায় গিয়েছিলাম নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক-কবি সালেম সুলেরীর সঙ্গে। সেখানে হাসমতের সঙ্গে গল্পও হয়েছিল। তার ইন্দিরা রোড ও এলিফ্যান্ট রোডে রুমা নামের দুটি কনফেকশনারি শপও ছিল। তিনি হাবা হাসমত বলেই খ্যাত ছিলেন। তার নির্মিত একটি ছবির নামও ছিল হাবা হাসমত। নিজ নামেই তিনি খ্যাত ছিলেন। আমাদের মন্ত্রীও নিজ নামে আজ খ্যাত। তিনিও একজন ভদ্রলোক। ঠান্ডা উত্তেজনাহীন প্রতিক্রিয়াহীন নির্বাক মানুষ। আমি তার ভক্ত না হয়ে পারি?

নঈম নিজাম কলামে উত্তম-সুচিত্রা জুটি নিয়ে লেখেন। সৈয়দ বোরহান কবীর এটা পছন্দ করেন না। তিনি চোখ বুজলেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাফিয়া মিঠুকে দেখেন, সাবরিনার পায়ের নাচের ঘুঙুরের আওয়াজ পান। কলাম নয়, যেন চিত্রনাট্য লেখেন। আমিও বুঝি না নঈম কেন সুচিত্রা কাতরতায় ভোগেন! আমাদের ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক, ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদকে সে সময় উত্তম কুমার ডাকা হতো। সুচিত্রার কথা তিনি লিখবেন, নঈম কেন! বোরহান কবীরও নঈমকে সেকালের বলে নিজে মধ্যকালের বলিউডে পড়ে থাকেন। একালের তেলেগু, দক্ষিণ ভারতীয় হিন্দি ছবিতে দুর্নীতি, অনিয়মে মাফিয়ারা কাদের নিয়ে সব নিয়ন্ত্রণ করে তা উঠে আসে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বড় পর্দায় সমাজের আয়না। সেখানে অনেক নারীও মাফিয়া ডনের আসনে থাকে। আর যেমন বজরঙ্গি ভাইজান, পি কে টু, টাইগার জিন্দা হে সিনেমায় আসে রাজনীতির ধর্ম, সীমান্ত না মানা মানবতা, বিশ্বসন্ত্রাসী আইএস মোকাবিলায় দুই শত্রুরাষ্ট্রের চিরবৈরিতা ভুলে একযোগে লড়াই। এ দেশে এসব ছবি আসতে দেওয়া হোক। আমাদের না আছে বিনিয়োগ, না আছে নির্মাতা, না আছে অভিনেতা-অভিনেত্রী। যা অনুদানে তৈরি হয় তাও টেলিফিল্ম বা সিনেনাটক মনে হয়। সে ছবি দর্শক টানে যা আসলেই সিনেমা হয়। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘিরে সুপারহিট সিনেমা হতে পারে। যত ঘটনা এযাবৎ উন্মোচিত হয়েছে। তবে আমার বিষয়টি সরল ভাষায় এমন, তোরা যে যা বলিস ভাই আমি অভিনেতা হাবা হাসমতের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকেরই ভক্ত থাকতে চাই।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
15161718192021
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ