করোনা পরীক্ষায় ফি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত: টিআইবি

প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২০

করোনা পরীক্ষায় ফি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত: টিআইবি

অনলাইন ডেস্ক :;

দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ সময় নমুনা পরীক্ষায় ফি আরোপের সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক, অমানবিক, দুরভিসন্ধিমূলক ও আত্মঘাতী।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বুধবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর পরীক্ষা অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। পরীক্ষার সংখ্যা দৃশ্যমানভাবে কমে গেছে। সেইসঙ্গে কমেছে শনাক্তের সংখ্যাও। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বেড়েছে, মহামারী নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন না ঘটার শঙ্কাও জোরদার হয়েছে। অবিলম্বে আরোপিত ফি প্রত্যাহারের পাশাপাশি কার্যকরভাবে মহামারী নিয়ন্ত্রণে করোনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা, পরিধি ও সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যেই গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা পরীক্ষায় ফি আরোপ করে। সংকটকালে এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে সরকার জনগণকে পরীক্ষা করতেই অনুৎসাহিত করছে কি না- এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।

তিনি বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক ও অমানবিক। যারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের জন্য আরোপিত ফি যৎসামান্য মনে হতেই পারে। কিন্তু যারা এক বেলা নিয়মিত খাবারেরই সংস্থান করতে পারেন না, তাদের জন্য এই ২শ’ টাকাও বিশাল বোঝা। মূলত, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করতেই এ সিদ্ধান্ত কি না, তা ভাবতে হবে। এমন বৈষম্যমূলক ও অমানবিক সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।

ড. জামান বলেন, মহামারীকালে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বলে কিছু নেই। যারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের তাগিদে পরীক্ষা করাতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য অবমাননাকর ও অবান্তর যুক্তি হিসেবে সরকার ‘বিনা প্রয়োজনে ও বারবার’ পরীক্ষার চাহিদার অপবাদ দিচ্ছে। তাহলে কি সরকার চায়, যারা পরীক্ষা করবে তারা সবাই আক্রান্ত হোক। অথচ দেশে তথা বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের বড় একটা অংশ উপসর্গবিহীন হওয়ায় আরও অনেক বেশি সংখ্যক পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকৃত রোগীকে দ্রুত বিচ্ছিন্নকরণে বিশেষজ্ঞরা জোর তাগিদ দিচ্ছেন। টিআইবি মনে করে, ফি আরোপের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং মহামারী মোকাবেলায় সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হওয়ার পূর্বশর্ত হল, সেগুলো যেন নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তভিত্তিক হয়। অথচ শুরু থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে নানা ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর যে কয়েকটা দেশে সবচেয়ে কম পরীক্ষা করা হচ্ছে, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ তার অন্যতম। তার ওপর ফি আরোপ করে পরীক্ষার সংখ্যাই কমিয়ে দেয়া হল, যাতে পরীক্ষার আওতার বাইরে চলে যাচ্ছেন দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী। করোনার তথ্যপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই এ ফি আরোপ করা হয়েছে কি না- এই প্রশ্ন ওঠাও অস্বাভাবিক নয়।

ড. জামানের ভাষ্য- যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা কী, সেটা কোনোভাবেই জানা সম্ভব নয়। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে মহামারী মোকাবেলায় সরকার যে পদক্ষেপ নেবে, নিশ্চিতভাবেই তা বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তথ্যের প্রবাহ ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার সংখ্যা, আওতা ও পরিধি বাড়ানোর বিকল্প নেই। এর বিপরীত হলে লকডাউন, বিচ্ছিন্নকরণ, চিকিৎসা প্রস্তুতি গ্রহণ, আর্থসামাজিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা তৈরি হবে। সার্বিকভাবে সংকটের মেয়াদ প্রলম্বিত হবে।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
1234567
15161718192021
293031    
       
22232425262728
2930     
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ