দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের কাছে মাথা নত নয় পরিণতি যাই আসুক

প্রকাশিত: ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের কাছে মাথা নত নয় পরিণতি যাই আসুক

পীর হাবিবুর রহমান :; আমার লেখার অগণিত ভক্ত নর-নারী সারা দেশে। বিদেশের প্রবাসীও কম নয়। উচ্চশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত রাজনৈতিক সচেতন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশ ও সমাজ আলোকিত করা আমার শ্রদ্ধার মানুষও কম না। অনেকেই ফোন করেন, অনেকে মুঠোফোনের যুগে হাতে চিঠি লিখেন। নড়াইলের লোহাগড়ার একটি ছেলে আমার ভক্ত ছিল। এক দিন অফিসে এলো, দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যাচ্ছে। দেখে যেতে চায়। মাঝে মধ্যে সেখান থেকে কল করে। এমন ঘটনা অনেক। অদেখা মানুষ পরম মমতায় দেশ-বিদেশ থেকে কল করেন। দেশে-বিদেশে পথে পথে অনেক অচেনা মানুষ সামনে দাঁড়ান। বলেন আমার লেখার ভক্ত। মানুষের এ ভালোবাসায় আমি অভিভূত মুগ্ধ হই। ভালোবাসার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? অনেকের কাছে অর্থের মূল্য, ক্ষমতার মূল্য অনেক বেশি হলেও আমার কাছে খেয়ে-পরে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জীবনে ভালোবাসা বড় অমূল্য সম্পদ। যেমন এক মুহূর্তের আনন্দ জীবনের অমূল্য সম্পদ। আর পেশাগত দায়িত্ব পরম ইবাদত।

আজ কয়েকদিন থেকে অসংখ্য শুভার্থী আমাকে সাম্প্রতিক লেখালেখি নিয়ে খুব সতর্ক করছেন। বলছেন, বিভিন্ন সুবিধাবাদী নষ্ট সমাজের ক্ষমতাধররা ভীষণ নাখোশ। যে কোনো সময় যে কোনো আঘাত হানতে পারে তাদের স্বার্থে আঘাত করার কারণে। আমি জানি, আমার পাঠক, আমার শুভার্থী যেমন বিপুলসংখ্যক তেমনি বিরুদ্ধ মতের প্রতিহিংসাপরায়ণদের আক্রোশ কম নয়। এমনকি আপন হয়ে থাকা ঈর্ষাপরায়ণদের হিংসার বিষও বুকে অনেকের। আর লেখা ও বলায় যাদের স্বার্থে আঘাত লাগে তারা তো অনেক ক্ষমতাধর। চাইবেনই প্রতিশোধ নিতে। তবে প্রতিশোধ না নিয়ে শোধরালেই সমাজ ও দেশের জন্য উত্তম। আমি তো নিরস্ত্র অর্থবিত্তহীন মানুষ। আমাকে হেনস্তা, অপমান, নিপীড়ন সহজ। আমার সাধারণ শান্তিপ্রিয় ভক্তরাও প্রতিবাদী হবেন না হয়তো কোনো পীড়ন এলে। তারা তো শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু সত্যকে কখনো দাবিয়ে রাখা যাবে না। একেকটি আঘাত সত্যকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে। সত্য কঠিন ও শক্তিশালী। তার কাছে মিথ্যা বরাবর পরাজিত। ইতিহাসে এর চেয়ে অমোঘ সত্য আর কী হতে পারে। যদিও দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ব্যাংক ও শেয়ার লুটেরা, অর্থ পাচারকারী, রাতারাতি ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়া অবৈধ পথে অঢেল অর্থবিত্তের মালিকদের কিছু হয় না। আইন এখানে নীরব নিথর। এরা সবল। সবলের কাছে আইন বড় দুর্বল। স্বাস্থ্য খাতের ভয়াবহ লুটপাটের জন্য কোনো মোড়লকেই ধরা হয় না। তারা শক্তিশালী সিন্ডিকেটে বাস করেন। কিন্তু জানেন না ১৭ কোটি মানুষের দেশে তারা কতটা সংখ্যালঘু। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তাদের কতটা ঘৃণা করে। নষ্ট আদর্শহীন সমাজে অনেকে তাদের সমীহ করেন, ছবি তুলে ধন্য হন। এরা রুচিহীন আদর্শ ও ব্যক্তিত্বহীন। এদেরকে মানুষ মোসাহেব সস্তা চাটুকার বলে। আর ওদেরকে আড়ালে ঘৃণায় বলে সুবিধাবাদী, নির্লজ্জ বেহায়া, চোর বলে, ঘুষখোর বলে, দুর্নীতিবাজ বলে, ব্যাংক ডাকাত বলে, অর্থ পাচারকারী দেশদ্রোহী বলে। ওরাও জানে। গায়ের চামড়া মোটা। নির্লজ্জ। শরম নেই। গায়ে মাখে না। অসৎদের আবার লজ্জা থাকতে নেই। লজ্জা থাকলে পা-চাটা সস্তা চামচা, দুর্নীতিবাজ, সুবিধাভোগী, ঘুষখোর, লুটেরা, চোর-ডাকাত হওয়া যায় না। আইনের খড়গ নামে প্রতিবাদী সাহসীদের ওপর। হেনস্তা হতে হবে অন্যায়ের সমালোচকদের। কারণ তাদের অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার সিন্ডিকেট নেই। পেশাগত ইস্পাত কঠিন ঐক্য নেই। আছে জীবনের পরতে পরতে যুদ্ধ। বেদনা। একাকিত্ব। প্রিয়জনরাও লড়াইটা যে ব্যক্তি স্বার্থে নয়, সমাজের স্বার্থে সেটা বুঝে না। বলে বাড়াবাড়ি! পরিবারও অসন্তুষ্ট হয়। কিন্তু যতদিন সংবিধান ও আইনের ঊর্ধ্বে বড় বড় অপরাধীদের রাখা হবে, আইনের খড়গ দুর্বলের জন্য প্রয়োগ করা হবে, ততদিন সুশাসন নিশ্চিত হবে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়িত হবে না। আর অপরাধীরা যতই দাম্ভিক হোক, এক দিন সুদে-আসলে তাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে জাতির সামনে বলে গেছেন, শেয়ারবাজার লুটেরাদের হাত অনেক লম্বা। আর ব্যাংক লুটেরাদের নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতাবানরা ভিন্নমত গ্রহণ করতে পারবেন না, সমালোচনা সইতে পারবেন না, ততদিন নিজেরা গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী হবেন না। গণতান্ত্রিক মানবিক সমাজ গড়তে পারবেন না। সমাজবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে না। সব অর্জন বিফলে যাবে। সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজ লুটেরা বাজিকররা সুবিধা লুটবে। ক্ষমতা গেলে ক্ষমতাবানদের চিনবেও না। আর মানবিক সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার ও শোষণ বন্ধ হলে জনগণ সঙ্গে থাকবে। জনগণের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই। রাষ্ট্র যতদিন জনগণও ততদিন। জনগণই রাষ্ট্রের শক্তি। সমাজের সব অসঙ্গতি অন্যায় অপরাধ, সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন নিয়ে লেখায়, বলায়, সমালোচনা ও প্রতিবাদ করার যে সাহস রাখি, তার উৎস আমার আত্মাজুড়ে আজন্ম বহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি জাতির সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ঐক্য আদর্শ ও নেতৃত্বে তিনি ইতিহাসে চেতনায় সমুজ্জল। আমাদের অসীম সাহস ও প্রেরণার উৎস। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি জাতিসত্তা থাকবে ততদিন তিনিই বীরত্বের আদর্শ হয়ে প্রজ্বলিত থাকবেন। গণতান্ত্রিক সমাজে নানা মত-পথ থাকবে, কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক মানুষের শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই জাতির স্বাধীনতার মহানায়কের আসনে থাকবেন। রাষ্ট্রের তিনিই মহান আদর্শ। তার আদর্শই অন্যায় অসঙ্গতি দুর্নীতি অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্নে আমি কখনই মাথা নত করব না। অন্যায় অপরাধ ও ক্ষমতার দম্ভের কাছে নত হতে আসিনি। সেই শিক্ষা বঙ্গবন্ধু আমাদের দেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুঃসময়ে তার মহান আদর্শের পথে অবিচল থেকেছি পুরো ছাত্রজীবনে। পেশাগত জীবনে দলীয় বৃত্তের বাইরে এলেও বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বিশ্বাসের প্রশ্নে আপস করিনি। এই দেশে এক দিন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার পরিজনসহ নৃশংসভাবে হত্যা করে খুনিদের অস্ত্রের জোরে সংবিধানবিরোধী শাসন চালু হয়েছিল। খুনিদের দম্ভ উল্লাস দেখতে হয়েছে। জাতির পিতার নাম ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মানব সভ্যতার ভয়াবহ হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করা হয়েছে। আদর্শের সন্তানদের অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে অবৈধ শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নির্বাসিত করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আর যাই হোক দীর্ঘ সংগ্রামে, একুশের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ অসংখ্যবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে জনগণের শক্তিতে ক্ষমতায় এসে খুনিদের বিচারের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিস্ময়কর জায়গায় নিয়েছেন। করোনার মহাপ্রলয় থেকে মানুষের জীবন ও অর্থনীতি রক্ষার লড়াই করছেন। মুজিবকন্যার সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ে আমরা ও মানুষ সমর্থন জানিয়েছি। তার মাদকবিরোধী যুদ্ধের সাথী হয়েছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষিত যুদ্ধে আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। যারা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার লুটেরা, অর্থ পাচারকারী, তারা সমাজ ও দেশবিরোধী। এদের আইনের আওতায় এনে পরাজিত করার বিকল্প নেই। দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের কাছে মাথা নত করার প্রশ্নই ওঠে না। পরিণতি যাই হোক।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ