লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতা, চরম হুমকিতে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০২ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২০

লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতা, চরম হুমকিতে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক :: দেশে সরকারি করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হিসাবে ১ লাখ ২ হাজারেরও বেশি। আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় ১৭ নম্বরে চলে এসেছে বাংলাদেশ। সংক্রমণ এখনও উর্ধ্বমুখি, এটি কবে নিম্নমুখী হবে, ধারণা দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংগৃহিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর প্রথম ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮৭ দিনের মাথায়; এরপর তা লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র ১৬ দিন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় বাংলাদেশে দুই মাসের বেশি সময় লকডাউনের পর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছিল গত ৩১ মার্চ। এরপরের ১৮ দিনে ৫৫ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা মোট শনাক্তের অর্ধেকের বেশি।

সংক্রমণের এই উর্ধ্বমুখি পরিস্থিতিতি বিশেষজ্ঞদের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত দেশকে লাল-হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে লকডাউন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে অনেকটা এলোমেলা অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ ছিল। এবার এই লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। করোনা মোকাবিলায় দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে বিশ্বের অন্যন্য দেশ এগোলেও দেশে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ বাস্তবায়নেও এমন ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এখন পর্যন্ত কোথায় কবে লকডাউন হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে সপ্তাহ খানেক আগেই দেশের করোনার রেড, ইয়োলো এবং গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকার তথ্য প্রকাশ করা হয় সরকারি ওয়েব সাইটে।

রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকা লকডাউন হবে এমনটা বলা হয়েছিল শুরুতে। তবে কোথায় কোন এলাকা কবে থেকে লকডাউন হবে তার কোন নির্দেশনা আসেনি এ পর্যন্ত। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের কিছু এলাকায় এখন লকডাউন চলছে। এর মধ্যে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হয়েছে। ৫০ হাজার বাসিন্দার এ এলাকায় শুরুতে ৩১ জন করোনা আক্রান্ত ছিল। এখন সেখানে আরো ২৯ জন রোগী যোগ হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে।

ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান দাবি করেছেন কঠোর লকডাউনের কারণে করোনা রোগী খুব বেশি বাড়েনি। আক্রান্তদের অন্তত ২০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সরকারের তরফে বলা হয়েছিল পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন করা এলাকার পরিস্থিতি দেখে পরবতী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা মহানগরীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা লকডাউন হচ্ছে বলে প্রচার করা হলেও পরে জানানো হয়, এ এলাকা লকডাউন করার কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।

করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যার ভিত্তিতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও নরসিংদি জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা লাল, হলুদ ও সবুজ এই তিনটি জোনে ভাগ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, মাঝারিটা হয় ইয়েলো আর যেসব এলাকায় সংক্রমণ নেই বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংক্রমণ হয়েছে সেসব এলাকাকে রাখা হয় গ্রিন জোনের মধ্যে।

এদিকে সরকার একাধিক সূত্র জানায়, সুনির্দিষ্ট পরিকলনার অভাব আর সমন্বয়হীনতার কারণেই জোনভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব হওয়ার পেছনে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজকর্মে সমন্বয়হীতার কারণেই জোনভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। লকডাউন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে সুনির্দিষ্ট জোনিং ম্যাপ চেয়েছেন ঢাকার দুই সিটি মেয়র।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ১৫ মে সারাদেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন- এই তিন জোনে ভাগ করে কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি। এরপর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর পর তিনিও এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের সম্মতি দেন। পরে গত ১ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন। এর ১০ দিন পর ১১ জুন এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ১৩ জুন রাজধানীর ৪৫টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে।

এ িবষেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রেড জোন এবং মাঝারি ঝুঁঁকিপূর্ণ ইয়েলো জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে। কিন্তু ওই দিন বিকালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু রেড জোনে ছুটি থাকার কথা জানানো হয়। ওইদিন রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, রাজধানী ও মহানগরে সিটি মেয়র লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তাদের সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর জেলা শহরে সিভিল সার্জন জোন নির্ধারণ করে দেবেন। মঙ্গলবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, যখন যেখানে প্রয়োজন তখনই সেখানে রেড জোন ঘোষণা করা হবে। লকডাউন নিয়ে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোন কোন এলাকায় আগাম মাইকিং করায় অনেকে বাসায় থাকার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন।

একিদেক করোনা সংক্রমণ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জীবিকা সচল রাখতে চায় সরকার।। একারণেই এলাকাভিত্তিতেই লকডাউন যাওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।তবে চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় খুব শিগগিরই করোনার থাবা থেকে বাঁচার কোন আলোর দিশা নেই।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ