‘মহামারীর সময়েও অবিশ্বাস্য গতিতে চলছে দুর্নীতির এক্সপ্রেস ট্রেন’

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

‘মহামারীর সময়েও অবিশ্বাস্য গতিতে চলছে দুর্নীতির এক্সপ্রেস ট্রেন’

সিল-নিউজ-বিডি ডেস্ক :: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের আমলে দুর্নীতি সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এই মহামারীর সময়েও অবিশ্বাস্য গতিতে চলছে দুর্নীতির এক্সপ্রেস ট্রেন। এই দ্রুত গতির ট্রেন থামানোর বদলে নানাভাবে প্রশ্রয় দিয়ে আসা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনলাইন ব্রিফিংয়ে রিজভী এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে রক্ষার চেষ্টায় অনিয়ম বাড়ছে। দুর্নীতিবাজরা যেন দুর্নীতির উল্লাসের নৃত্য করছে এবং এই করোনাকালে বাধাহীন দুর্নীতির উৎসব চলছে বিভিন্ন সেক্টরে। সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে কোনো কোনো কর্তৃপক্ষ, গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তবে তা খুব কমই আলোর মুখ দেখে। শাস্তির বদলে অদৃশ্য কারণে রেহাই পায় দুর্নীতিবাজরা। তারপর বীরদর্পে তারা অব্যাহত রাখে দুর্নীতি।

তিনি বলেন, কেবল যে নিয়োগ ও পদায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে তাই নয়, কেনাকাটা থেকে শুরু করে বদলি পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর-মন্ত্রণালয়ের সব ক্ষেত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সুরক্ষায় কেনা আসল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ না করে নকল সরবরাহ করা, এমনকি সরবরাহকারী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া থেকে বোঝা যায়
জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার সমর্থক কত কালোবিড়াল বসে আছে।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের অনেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কেনাকাটায় পুকুর চুরির খবর থেকে বোঝা যায় আমাদের স্বাস্থ্য খাত বালির বাঁধের মতো হয়ে আছে। বৃহৎ দেখালেও এর ভেতরটা সারশূন্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কাদের জন্য এ জিজ্ঞাসা এখন সবার। দুদক মূলতঃ বর্তমান একচক্ষু সরকারের প্রতিহিংসার পূরণের যন্ত্র।

দেশের স্বাস্থ্য খাত কতটা নড়বড়ে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর তা উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাবে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এমন বাস্তবতায় বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে পিপিই, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, গগলসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় ভয়াবহ দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে একটি জাতীয় দৈনিক।

‘সেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় যে খরচ ধরা হয়েছে, তা বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি। এছাড়া চলমান মানবিক দুর্যোগের সময় যেখানে চিকিৎসা উপকরণের দিকে জোরালো নজর দেয়া দরকার, সেখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বেশি ঝোঁক চিকিৎসাবহির্ভূত খাতে।’

রিজভী বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জামে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেয়া ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জরুরি সহায়তা’ শিরোনামের প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস কেনা হবে। প্রতিটি সেফটি গগলসের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতিটি সেফটি গগলস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়।

রিজভী বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় মোট এক লাখ সাত হাজার ৬০০ পিপিই কেনা হবে। যার প্রতিটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ টাকা। পিপিই কেনায় মোট খরচ হবে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মেনে ওষুধ অধিদফতরের সব শর্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন কম্পানির তৈরি ভালো মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে এক থেকে ২ হাজার টাকায়।

‘এই প্রকল্পের আওতায় ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট জুতা কেনা হবে। প্রতিটি জুতার খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দেশে বর্তমান বাজারে বুট জুতা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় মিলছে।’

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, চলমান করোনা সংকটের মধ্যে যেখানে সব কিছু স্থবির, সেখানে এই প্রকল্পে ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। মাত্র ৩০টা অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরির খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা-যা অস্বাভাবিক। ৮০টা সেমিনার ও কনফারেন্স করে খরচ করা হবে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা-এই সংকটকালে যা বিকৃত বিলাসিতার নামান্তর।

‘সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে ওয়েবসাইট উন্নয়ন খাতে। মাত্র চারটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের খরচ হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি ডাটাবেস তৈরিতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৩০টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য খরচ হবে আরও ৪৫ কোটি টাকা।’

রিজভী বলেন, এই লুটের খবর শীর্ষ ব্যক্তিরা জানলেও এখনও পর্যন্ত কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার মূল চেতনাই হচ্ছে বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও লুটপাট। এতে প্রমাণ হয় করোনার চেয়ে দুর্নীতি এখন পরাক্রমশালী। দুর্নীতিবাজরা নিজদেরকে রাষ্ট্রের চেয়েও প্রভাবশালী মনে করছে।

সংবাদ অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
  12345
2728     
       
28      
       
       
       
1234567
2930     
       

আমাদের ফেইসবুক পেইজ